বিদেশি গণমাধ্যমে ‘নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতা ও কারচুপির’ খবর

বিদেশি গণমাধ্যমে ‘নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতা ও কারচুপির’ খবর

ঢাকা, ৩০ ডিসেম্বর (জাস্ট নিউজ) : বিচ্ছিন্ন সহিংসতার মধ্য দিয়ে সারা দেশে জাতীয় নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দেশের ১১তম এই সাধারণ নির্বাচন ঘিরে ব্যাপক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মাঝেই রবিবার সকাল থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। দেশের ১০ কোটিরও বেশি ভোটার এবারের নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন।

তবে মধ্যরাত থেকে দুপুর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতায় এ পর্যন্ত ১০ জনের প্রাণহানি এবং কয়েক শো নেতাকমী-সমর্থক আহত হবার খবর পাওয়া গেছে। কোথাও কোথাও প্রার্থীরাও আক্রান্ত হয়েছেন। ভোট কেন্দ্রগুলোতে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ এনে সারাদেশে এ পর্যন্ত স্বতন্ত্রসহ বিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং জাতীয় পার্টি অর্ধশতাধিক প্রার্থী ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।

রবিবার বিশ্বের প্রভাবশালী বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রধান খবর হিসেবে জায়গা পেয়েছে বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।

ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি তাদের প্রধান খবর হিসেবে বাংলাদেশের নির্বাচনকে রেখেছে। বিবিসির প্রধান এই খবরের শিরোনামে লেখা হয়েছে, ‘উচ্চ সতর্কতার মাঝে বাংলাদেশে ভোটগ্রহণ চলছে’। এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা তৃতীয় মেয়াদে দেশটির ক্ষমতায় আসতে চাইছেন।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশটিতে উচ্চ নিরাপত্তা সতর্কতা নেয়া হয়েছে। দেশজুড়ে প্রায় ৬ লাখ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। দেশটিতে ভোটাধিকার রয়েছে প্রায় ১০ কোটি মানুষের। নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বি রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মী-সমর্থকদের সংঘর্ষে এক ডজনের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার প্রধান খবর করা হয়েছে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে। ‘বাংলাদেশের নির্বাচন: ব্যাপক সহিংসতার শঙ্কার মাঝেই ভোটগ্রহণ চলছে’ শিরোনাম প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, রবিবারে সংসদ নির্বাচনে ১০ কোটির বেশি ভোটার ভোট দেয়ার জন্য ভোটকেন্দ্রের দিকে যাচ্ছেন। নিয়ন্ত্রণমূলক নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর উদ্বেগের মাঝেই এই ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে।

রবিবার স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে; চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। দেশের প্রায় ৪০ হাজার ভোটকেন্দ্রে ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ভোটগ্রহণ শেষের পরপরই ফলাফল আসা শুরু হবে। ঢাকায় ভোট দেয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি এবং আমরা জনগণের ম্যান্ডেট মেনে নেব।’

সহিংস প্রচারণার পর বাংলাদেশের ভোটের দিনে সংঘর্ষে দু’জনের প্রাণহানি ঘটেছে শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ফরাসী বার্তাসংস্থা এএফপি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রবিবার বাংলাদেশে ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার পর নির্বাচনী সহিংসতায় দু’জন নিহত হয়েছে। বিরোধীদের ব্যাপক ধরপাকড় ও প্রাণঘাতী নির্বাচনী প্রচারণা শেষে ভোটগ্রহণ চলছে।

কর্তৃপক্ষ বলছে, ভোটকেন্দ্র দখলের চেষ্টার সময় বিরোধী দলীয় সমর্থকদের ওপর পুলিশের গুলিতে একজন মারা গেছেন। পৃথক ঘটনায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এক কর্মীকে পিটিয়ে হত্যা করেছে বিরোধীরা।

ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স ‘বাংলাদেশে ভোটগ্রহণ শুরু, জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী প্রধানমন্ত্রী হাসিনা’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলছে, সহিংস প্রচারণা শেষে রোববার বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনে ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দুর্নীতির দায়ে কারাবন্দি বিরোধী দলীয় নেত্রীর অনুপস্থিতিতে শেখ হাসিনা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদী।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রধান প্রতিবেদনের শিরোনাম করা হয়েছে ‘ব্যাপক সংঘর্ষের মধ্যে বাংলাদেশে ভোটগ্রহণ শুরু, নিশ্চিত জয়ের ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদী শেখ হাসিনা’।

সংবাদের শুরুতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতায় দু’জন নিহত হয়েছে। রবিবার দেশটিতে সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থার মাঝেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

ব্রিটিশ প্রভাবশালী দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানতাদের প্রধান খবরের শিরোনাম করেছে ‘বাংলাদেশে নির্বাচন : সহিংস প্রচারণার পর ভোটগ্রহণ শুরু’। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে গত এক দশকের মধ্যে প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। হত্যা, বিরোধীদের গণ ধরপাকরের পর বাংলাদেশের এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

এছাড়াও পাকিস্তানের দৈনিক ডন, ডেইলি পাকিস্তান, মার্কিন দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট, তুরস্কের ডেইলি সাবাহ, আনাদোলু নিউজ অ্যাজেন্সি, ব্রিটিশ দৈনিক দ্য ইন্ডিপেনডেন্টসহ বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমের লিড নিউজে ঠাঁই পেয়েছে বাংলাদেশের আজকের নির্বাচন।

(জাস্ট নিউজ/ডেস্ক/একে/১৯৪৩ঘ.)