রাতে মামলা, রাতেই গ্রেফতার

দূর্নীতিবাজ এমপিকে নিয়ে পোস্ট দেয়ায় সুনামগঞ্জে সাংবাদিক গ্রেফতার

দূর্নীতিবাজ এমপিকে নিয়ে পোস্ট দেয়ায় সুনামগঞ্জে সাংবাদিক গ্রেফতার

সরকারের এক এমপির দুর্নীতির কর্মকান্ড নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন সাংবাদিক। তাতেই যেন কাল হলো! এমপি কিছু বলার আগেই সরকার দল আওয়ামী লীগের এক নেতা আলোচিত কালো আইন ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলা ঠুকে বসলেন ঐ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে। তড়িৎ গতিতে দুই ঘন্টার ব্যবধানে গ্রেফতার করা হলো সাংবাদিককে।

সুনামগঞ্জ-১ আসনের (তাহিরপুর, ধরমপাশা, জামালগঞ্জ) সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেনকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন সাংবাদিক মাহতাব উদ্দিন তালুকদার, ৪০।

ফেসবুকে পোস্টটি দেয়া হয় সোমবার রাত ৯.৪৫ মিনিটে। মামলা হয় রাত ১২ টায় আর এর দুই ঘন্টা পরই রাত ২ টায় সাংবাদিক মাহতাবকে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের বলাকাপাড়া এলাকায় তার বাসা থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসে পুলিশ।

এমপিকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা মাহতাব এসএ টিভির জেলা প্রতিনিধি ও সুনামগঞ্জ থেকে প্রকাশিত দৈনিক হাওরাঞ্চলের কথা পত্রিকার সম্পাদক। 

রাত ১২টার দিকে জেলার ধরমপাশা থানায় মাহতাব উদ্দিন তালুকাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। মামলাটি করেন ধরমপাশা উপজেলার সেলবরষ ইউনিয়নের উত্তরবীর গ্রামের বাসিন্দা বেনুয়ার হোসেন খান। তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাংসদের সমর্থক হিসেবে এলাকায় পরিচিত।

ধরমপাশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, বাদী মামলার এজাহারে অভিযোগ করেছেন যে মাহতাব উদ্দিন তালুকদার সাংসদকে নিয়ে ফেসবুকে মিথ্যাচার করে পোস্ট দিয়েছেন। এ ধরনের মিথ্যাচারে সাংসদের সম্মানহানি হয়েছে।

ওসি বলেন, মামলা দায়েরের পর বিষয়টি তারা সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার পুলিশকে জানান। পরে সদর থানার পুলিশ ধরমপাশা থানার পুলিশের সহায়তায় আসামিকে গ্রেপ্তার করে।

মাহতাব উদ্দিন তালুকদারকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মো. সহিদুর রহমান।

রতনের দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত করছে দুদক

অনিয়মের মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করে শত শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কার্যালয়ে হাজিরা দেন গত ১৮ ফেব্রুয়ারি।

এর আগে ১০ই ফেব্রুয়ারি আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের স্বার্থে এমপি রতনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, রতনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, ক্যাসিনো ব্যবসা ও অন্যান্য অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা অবৈধ প্রক্রিয়ায় বিদেশে পাচার এবং জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন সংক্রান্ত অভিযোগ রয়েছে।

এর আগে গত ২৪ অক্টোবর, ২০১৯ দুদক থেকে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) ইমিগ্রেশন বরাবর পাঠানো চিঠিতে রতনের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।

ওই চিঠিতে বলা হয়, দুদকের অনুসন্ধানে এমপি রতনের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারের বিষয়টির প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।

সূত্র মতে, এমপি রতন ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঠিকাদারীর ও সরকারি অর্থ আত্মসাতসহ নানা অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন। রাজধানী ঢাকা, সুনামগঞ্জ, ধর্মপাশা, নেত্রকোনা ও মোহনগঞ্জে ১৩টি বাড়ির মালিক। এর মধ্যে ধর্মপাশায় নিজ গ্রামে ১০ কোটি টাকায় ‘হাওর বাংলা’ নামে বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করেছেন। বাড়িটির অধিকাংশ জমি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তির কাছ থেকে দখল করা। সুনামগঞ্জ শহরের মল্লিকপুরে জেলা পুলিশ লাইনসের বিপরীতে ৭ কোটি টাকায় বাড়ি কিনেন রতন। যার নাম দেয়া হয়েছে ‘পায়েল পিউ’।