সরকারের বিরুদ্ধে আন্তঃরাষ্ট্রীয় নিপীড়নের অভিযোগ প্রবাসী সাংবাদিকদের

সরকারের বিরুদ্ধে আন্তঃরাষ্ট্রীয় নিপীড়নের অভিযোগ প্রবাসী সাংবাদিকদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রেপ্তার লেখক মুশতাক আহমেদের কারাগারে মৃত্যুর প্রতিবাদে ডাকা কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া এক নারীকে পেটাচ্ছে পুলিশ। ঢাকা, বাংলাদেশ, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, মাহমুদ হোসেন অপু/এপি

লন্ডনে নির্বাসিত বাংলাদেশি সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের খান গত মার্চ মাসে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে খুদেবার্তা পান। বার্তাটি তাকে আতংকিত করে তোলে। কেননা সেখানে লেখা ছিল, “সামি ভাই, আপনার ছোট ভাই মাহির একটু খোঁজখবর নেন। শুনেছি তার নাকি হাত-পা ভেঙে ফেলেছে।”

সময় নষ্ট না করে সায়ের তার ভাই মাহিনুর আহমেদ খানের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে কল করেন। কলটি রিসিভ করেন মাহিনুরের স্ত্রী।

ফোন ধরেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। অনেকটা অনিচ্ছা সত্ত্বেও সায়েরকে নিশ্চিত করে জানান, অজ্ঞাত পরিচয়ধারী চার ব্যক্তি তার স্বামী মাহিনুরকে লোহার রড দিয়ে মারধর করেছেন। ওই সময় প্রবাসে থেকে সরকারের সমালোচনা করে লেখালেখি করার দায়ে তার ভাইকেও গালিগালাজ করে দুর্বৃত্তরা।

"আমার ভাই ও তার স্ত্রী ঘটনাটি আমার কাছ থেকে পাঁচ দিন গোপন রাখেন। তাদের ভয় ছিল, এই ঘটনা যদি আমি প্রকাশ করে দেই, তাহলে তারা আরও বিপদে পড়বেন,” বেনারকে বলেন সায়ের। তিনি সামি নামেও পরিচিত।

সায়ের আরও জানান, হামলার শিকার হয়ে তার ভাই দুই মাস শয্যাশায়ী ছিলেন। তার বিশ্বাস, হামলাকারীরা বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এই ঘটনার কয়েক মাস আগে প্রধানমন্ত্রীর এক ঘনিষ্ট রাজনীতিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে সায়ের একটি খ্যাতনামা আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে একটি বিশদ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলেন। প্রতিবেদনটি ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছিলো। সায়েরের ধারণা, ওই কারণেই তার ভাইয়ের উপর হামলা হয়। 

বিশ্বব্যাপী স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র নিয়ে কাজ করা ওয়াশিংটন-ভিত্তিক সংগঠন ফ্রিডম হাউস বলছে, নির্বাসনে থাকা সরকারের সমালোচক ও সাংবাদিকদের নিপীড়ন করতে দেশে থাকা তাদের পরিবারের সদস্যদেরকে টার্গেট করা কর্তৃত্ববাদী সরকারের একটি নিত্যনৈমিত্তিক কৌশল। এটি আন্তঃরাষ্ট্রীয় হয়রানি ও নিপীড়নের একটি উদাহরণ। 

ফ্রিডম হাউসের গবেষক গ্র্যাডি ভন বেনারকে বলেন, “বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রবাসী সাংবাদিকদের টার্গেট করার ক্ষেত্রে বহুল পরিচিত কৌশল হলো, প্রক্সির মাধ্যমে জোরজবরদস্তি করা – অর্থাৎ দেশে থাকা পরিবারের সদস্য বা বন্ধুদের টার্গেট করা।”

গত ৬ ডিসেম্বর ফ্রিডম হাউস একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে; যেখানে বলা হয়, বিশ্বের দেশে দেশে স্বৈরাচারী সরকারগুলো সাংবাদিকদের মুখ বন্ধ করার জন্য আন্তঃরাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন বাড়াচ্ছে।

প্রতিবেদনে ২৬টি সরকারের হাতে নির্বাসিত সাংবাদিকদের উপর ১১২টি শারীরিক সহিংসতার ঘটনা অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
ওই তালিকায় বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করা না হলেও, পরিবারের সদস্যদের টার্গেট করার মাধ্যমে জোরজবরদস্তি আরোপ করার মাধ্যমেও একই ধরণের রোমহর্ষক প্রভাব তৈরি করছে বলে মনে করেন গ্র্যাডি ভন।

“প্রক্সির মাধ্যমে বা পরিবারের সদস্যদের টার্গেট করে এই ধরনের হামলার উদ্দেশ্যই হচ্ছে ভীতি তৈরি করা এবং তাদেরকে হয়রানির মধ্যে রাখা,” বলেন তিনি।

এসব ঘটনা নির্বাসিত ব্যক্তিদের ওপর মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব ফেলে বলেও মত এই গবেষকের।

নির্বাসিত সাংবাদিক ও সরকারের সমালোচকদের আত্মীয়দের ওপর এসব হামলার ঘটনায় বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তাদের মন্তব্য চেয়ে বেনারের পক্ষ থেকে পাঠানো ইমেইলের কোনো জবাব দেয়নি কর্তৃপক্ষ।

তবে বিভিন্ন সময় দেওয়া বক্তব্যে সরকারি কর্মকর্তারা প্রায়ই প্রবাসী সাংবাদিক এবং সমালোচকদের বিরুদ্ধে “রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণা”র অভিযোগ এনেছেন।

২০২১ সালে বাংলাদেশের তৎকালীন সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে আল জাজিরার একটি তথ্যচিত্র প্রচারিত হয়। এই তথ্যচিত্রে “হুইসেল ব্লোয়ার” হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সায়ের। পরবর্তীতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে সায়েরকে “লোভী এবং প্রতারক” হিসেবে আখ্যায়িত করে।

লন্ডনে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইউকে মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডস ২০২২ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিচ্ছেন জুলকারনাইন সায়ের খান। ৪ মে ২০২২। [এমিলি মুডি/অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইউকে]

বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, বাংলাদেশে ২০১৮ সালে “একটি প্রহসনমূলক নির্বাচন” অনুষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে তিনি এই প্রবণতা লক্ষ্য করছেন।

২০০৯ সাল থেকে  আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় রয়েছে। ২০১৮ সালে দলটি ৯৫ শতাংশেরও বেশি আসন পেয়ে পুনরায় নির্বাচিত হয়। ২০১৮ সালের এই সাধারণ নির্বাচন সম্পর্কে ব্যাপক জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে।

“২০১৮ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার নিজেও বুঝতে পেরেছিল যে, তাদের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ, বিশেষ করে আন্তর্জাতিকভাবে। তারপর বিদেশে বসবাসকারী সমালোচকদের টার্গেট করার একটি প্রবণতা দেখা দেয়,” বলেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মাধ্যম বা বিকল্প সংবাদ মাধ্যম ব্যবহার করে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি সাংবাদিক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং ইউটিউবার প্রবাসে অবস্থান করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের সমালোচনা করে চলেছেন। 

এর বিপরীতে প্রতিক্রিয়াও সৃষ্টি হয়েছে দেশে। 

নেত্র নিউজ সুইডেন ভিত্তিক একটি সংবাদ সংস্থা যারা বাংলাদেশ নিয়ে খবরাখবর প্রকাশ করে। এই সংবাদ মাধ্যমটির এডিটর ইন চিফ তাসনিম খলিল সুইডেনে বসবাস করেন। নেত্র নিউজ চালুর ছয় মাসের মাথায় বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা বাংলাদেশে অবস্থিত তাসনিম খলিলের মায়ের সাথে দেখা করেন। 

তাসনিম বেনারকে বলেন, “ওই দিনের পর থেকে আমার মা বারবার আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও গোয়েন্দা সংস্থার এমন পরিদর্শনের যন্ত্রণায় ভুগছেন।”

২০২১ সালের অক্টোবরে নুসরাত শাহরিন রাকাকে তার তিন নাবালক সন্তানসহ গ্রেপ্তার করে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‍্যাব)। তিনি যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক বাংলাদেশি সাংবাদিক কনক সারওয়ারের বোন।

কনক প্রায়ই তার ইউটিউব চ্যানেলে বাংলাদেশ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের কড়া সমালোচনা করে থাকেন।

স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন অনুসারে, র‍্যাব এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রাকাকে তার “রাষ্ট্রদ্রোহী” ভাইয়ের সঙ্গে “রাষ্ট্রবিরোধী প্রচার ও ষড়যন্ত্র চক্রের সক্রিয় সদস্য” হিসেবে অভিযুক্ত করে।

জাতিসংঘের একটি প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রশ্ন করছেন মুশফিকুল ফজল আনসারী। আগস্ট ২০১৮ [জাতিসংঘের ভিডিও/ইউটিউব থেকে স্ক্রিনশট নেওয়া]

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জাতিসংঘের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে প্রায়ই বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রশ্ন তোলেন প্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী। 

তিনি বলেন, সাংবাদিকদের শুধুমাত্র দায়িত্ব পালন করার জন্য টার্গেট করা হচ্ছে।

“প্রায় এক বছর আগে বাংলাদেশ দূতাবাসের একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কংগ্রেসম্যান গ্রেগরি মিক্সকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছিল, মার্কিন সরকার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে না,” বলেন তিনি।

আনসারী যখন এই প্রেস রিলিজের সত্যতা জানতে চেয়ে মার্কিন আইনসভার বৈদেশিক বিষয়ক কমিটির সাথে যোগাযোগ করেন। তখন দূতাবাসের প্রেস বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে একটি বিবৃতি জারি করে মিক্সের নেতৃত্বের তৎকালীন কমিটি।

“আমরা মিক্সকে তার অবস্থান পরিবর্তন করতে বলিনি। আমরা কেবল একটি সরকারি প্রেস বিজ্ঞপ্তির সত্যতা যাচাই করার চেষ্টা করেছি। আর এরকম সাধারণ একটি কাজ করতে গিয়েই আমাদের উপর বিপদ নেমে এসেছে,” নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলেন তিনি।

আনসারী এক সময় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রেস উইংয়ের সদস্য ছিলেন। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন।

তার অভিযোগ, স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা প্রতিশোধ নিতে সিলেটে তার বাড়িতে ভাঙচুর করেছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা তার বৃদ্ধ মা এবং তার পরিবারের সদস্যদের নিয়মিত জিজ্ঞাসাবাদ করে।

“হয়রানির কারণে আমার বাবাকে স্থায়ীভাবে যুক্তরাজ্যে চলে যেতে হয়েছিল এবং আমার বাবা-মা সাত বছর ধরে একে অপরকে দেখেননি,” বলেন আনসারী।

তিনি আরও বলেন, “স্থানীয় একটি ব্যাংকে চাকরি করে আমার শ্যালক। পুলিশ তার কর্মস্থলে গিয়ে এমন আচরণ করেছে, যেন সে একজন অপরাধী। এমনকি আমার দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়, যার নামের সঙ্গে আমার নামের উপাধির মিল আছে; তাকেও স্থানীয় পুলিশ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।”

ব্রাসেলসে ইইউ গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরাম ২০২৩-এ যোগ দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২৫ অক্টোবর ২০২৩। [জোহানা জেরন/রয়টার্স]

যুক্তরাজ্যে বাস করা আবদুর রব ভুট্টো ফেসবুকে “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করেছেন” এই অভিযোগে বাংলাদেশে বাস করা তার ভাইকে গ্রেফতার করে মৌলভীবাজার পুলিশ। এটি ২০২২ সালে সেপ্টেম্বর মাসের ঘটনা, যেটা স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। 

তবে আরও সরাসরি কায়দায় সরকারের সমালোচকদের ওপর নিপীড়নের দৃষ্টান্তও রয়েছে।

২০১৯ সালে আলী রীয়াজের একটি বই নিয়ে জার্মানি এবং ওয়াশিংটন ডিসিতে দুটি অনুষ্ঠান হয়েছিলো। দুটি অনুষ্ঠানই হাঙামা বাঁধান আওয়ামীলীগের বৈদেশিক কর্মীরা। 

“এক পর্যায়ে, তারা আমাকে আক্রমণাত্মকভাবে ঘিরে ফেলার চেষ্টা করে এবং আমি ভয় পেয়েছিলাম। এর আগ পর্যন্ত অন্তত বিদেশে আমার শারীরিক নিরাপত্তা নিয়ে আমি শংকিত ছিলাম না,” বলেন আলী রীয়াজ।

‘ডিজিটাল হুমকি’

বাংলাদেশি ভিন্নমতালম্বীদের অভিযোগ, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে তাদেরকে আরও সুক্ষ্ম ধরণের নিপীড়ন ও হয়রানির শিকার হতে হয়, ‘ডিজিটাল মিথ্যা প্রচারণা’ এমনই একটি কৌশল। তবে এই ধরণের হয়রানির শিকার জুলকারনাইন সায়েরের চেয়ে খুব কম ব্যাক্তিই হয়েছেন। 

এর আগে খ্যাতনামা ইসরাইলি পত্রিকা হারেৎজে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলেন তিনি। বাংলাদেশ সরকার ইসরাইল থেকে অত্যন্ত আধুনিক একটি ‘স্পাইওয়ার’ কিনেছে, তিনি সেই তথ্য উন্মোচন করেছিলেন। 

ফলশ্রুতিতে, ফেসবুকে অসংখ্য অ্যাকাউন্ট থেকে নিয়মিতভাবে সায়েরকে “সমকামী”, “মাদকাসক্ত” এবং আরও নানা অবমাননাকর অপবাদ দেয়া হয়। ক্ষেত্রবিশেষে ব্যবহার করা হয় ভুয়া ও সম্পাদিত ছবিও।

এক্স (সাবেক টুইটার) একাধিকবার তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত করেছিল যে, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ স্থানীয় আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে তার পোস্টগুলো সরিয়ে নিতে বলেছে।

কিছু বাংলাদেশি ওয়েবপোর্টাল সায়েরকে মুসলিম উগ্রপন্থী সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যায়িত করে হাঙেরীতে (সায়েরের সাবেক আবাসস্থল) তিনি বোমা হামলার পরিকল্পনা করছেন - এমন সংবাদও প্রকাশ করে। এমনকি সায়ের হামাসকে অর্থায়ন করছে - এ কথাও বলা হয়। যদিও এইসবের পক্ষে কোনো প্রমাণ সেসব ওয়েবসাইট দেখাতে পারেনি। 

এই মিথ্যা অপবাদের বিষয়টি তুলে ধরে এই বছরের নভেম্বরে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা নিউইয়র্ক-ভিত্তিক বৈশ্বিক সংস্থা কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে)। 

“আন্তঃরাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের মাধ্যমে নির্বাসিত সাংবাদিকদের টার্গেট করার জন্য বাংলাদেশ নাম কুড়িয়েছে। ডিজিটাল হুমকি থেকে শুরু করে পরিবারকে ভয় দেখানোর মতো ঘটনা বাড়ছে। এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক, কেননা এসবের জন্য দায়ীরা পার পেয়ে যাচ্ছে,” বেনারকে বলেন সিপিজের এশিয়া প্রোগ্রামের সমন্বয়কারী বেহ লিহ ই।

তিনি বলেন, “সাংবাদিকদের অন্য দেশে পালিয়ে যেতে হয়েছে, কারণ তাদের নিরাপত্তা তাদের নিজ দেশে গুরুতর হুমকির মুখে পড়েছিল। নির্বাসনে থাকা সত্ত্বেও তাদের ভয়ে জীবনযাপন করতে হচ্ছে, এটা কাম্য নয়।”

এই সাংবাদিকদের এবং সমালোচকদের প্রায়ই “সন্ত্রাসী” বা “জিহাদি” বলে অভিযুক্ত করা হচ্ছে।

ওয়াশিংটনের উইলসন সেন্টারে একটি ইভেন্টে ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক আলী রীয়াজ (বামে)। ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯। [হ্যান্ডআউট/ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটি]

এত ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও সমালোচক ও সাংবাদিকদের অনেকে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে কারও পক্ষে চাপ সহ্য করে কাজ অব্যাহত রাখা সম্ভব হয়নি।

নিউইয়র্কে বসবাসরত এক বাংলাদেশি লিগ্যাল অ্যাসোসিয়েট বেনারকে বলেন, শেখ হাসিনার জাতিসংঘের পুরস্কার প্রাপ্তি সম্পর্কে সরকারের দাবিকে চ্যালেঞ্জ করে বাংলাদেশের একটি সংবাদপত্রে প্রতিবেদন করার পর তিনি চাপে পড়েন।প্রতিহিংসার শিকার হতে পারেন — এমন আশঙ্কায় তিনি তার পরিচয় প্রকাশ করতে রাজি হননি।

“আমার বাংলাদেশি পাসপোর্ট নবায়নের জন্য দিয়েছিলাম, কিন্তু সেটি আর নবায়ন হয়নি। ফলে আমি সাত বছর ধরে বিদেশে আছি, দেশে ফিরতে পারিনি,” বলেন তিনি।

সাংবাদিকতা থেকে সরে আসার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “আমার তিন ভাই এখনো সরকারি চাকরিতে আছেন। আমি চাইনি যে আমার কাজের কারণে তাদের জীবিকা ধ্বংস হোক।”-বেনারনিউজ