শিশুর স্পর্শকাতর ত্বকের যত্ন

শিশুর স্পর্শকাতর ত্বকের যত্ন

শিশুদের ত্বক খুবই নাজুক ও স্পর্শকাতর হয়ে থাকে। শীতকালে শিশুদের নরম ত্বক জলীয়বাষ্প হারিয়ে শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে ওঠে। এ থেকে ত্বক লাল হয়, ফেটে যায় ও খসখসে হয়ে ওঠে। যা থেকে ত্বকে বাসা বাঁধে নানারকম চর্মরোগের জীবাণু। তাই শীতের শুষ্ক ও রুক্ষ পরিবেশে সোনামণিদের ত্বকে সকাল, দুপুর ও রাত নিয়ম করে তিনবেলা বিশেষ যত্ন নিতে হবে।

দিনে দুবার ময়েশ্চারাইজার
গোসলের পর এবং রাতে ঘুমানোর আগে শিশুর ত্বকে ময়েশ্চারাইজার যুক্ত লোশন লাগাতে হবে। ত্বক খুব শুষ্ক হলে লোশনের সঙ্গে অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন কিংবা শুধু অলিভ অয়েল মাখুন। লোশন লাগানোর কিছু নিয়ম আছে। তালুতে লোশন নিয়ে দুই হাতে মেখে তার পর শিশুর ত্বকে লাগান। ত্বকের নিচ থেকে ওপরের দিকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে হালকাভাবে ম্যাসাজ করুন। নতুন লোশন প্রথমেই পুরো শরীরে লাগাবেন না। ত্বকের যে কোনো অংশে অল্প করে লাগিয়ে এক বেলা অপেক্ষা করুন। কোনো সমস্যা না হলে পুরো শরীরে লাগান। র‍্যাশ উঠলে লোশন পরিবর্তন করুন।

কেমন হবে লোশন
শিশুদের ত্বক পাতলা ও স্পর্শকাতর হয়। তাই শীতে শিশুর জন্য মিল্কক্রিম বেইজড মাইল্ড লোশন উপযোগী বলে জানান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. এসএম বোরহান উদ্দীন। তিনি বলেন, শীতে হোয়াইট সফট প্যারাফিন বা ফসপোলিপিডসমৃদ্ধ ময়েশ্চরাইজার বা লোশন শিশুর ত্বকের জন্য ভালো। লোশনে পানির পরিমাণ বা পিএইচ মাত্রা যেন ৫.৫-এর মধ্যেই থাকে। লোশনে থাকা গ্লিসারিনের মাত্রাও যেন বেশি না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখুন। এ ছাড়া শিশুর ত্বকের ব্যবহৃত লোশন সুগন্ধি, অ্যালকোহল ও অন্যান্য কেমিক্যালবিহীন কিনা নিশ্চিত হয়ে নিন।

শীতে প্রতিদিন গোসল
শীতকালে শিশুকে গোসল করাতে হবে হালকা গরম পানি দিয়ে। কেননা ঠাণ্ডা পানি দিয়ে গোসল করালে যেমন ঠাণ্ডা লেগে যাওয়ার ভয় থাকে, পাশাপাশি বেশি গরম পানি দিয়ে গোসল করালেও ত্বকের আর্দ্রতা হারিয়ে যায়। তবে শীতকালে দুই বছরের কম বয়সী শিশুকে প্রতিদিন গোসল করানোর প্রয়োজন নেই। এক্ষেত্রে একদিন পরপর গোসল করালেই ত্বক ভালো থাকবে। গোসলের পানিতে সামান্য অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন। ত্বক নরম থাকবে।

ব্যবহার করুন বেবিসোপ
শীতে শিশুদের শরীরে প্রতিদিন সাবান দেওয়া উচিত নয়। সাবানের ক্ষার শিশুদের ত্বক আরও বেশি রুক্ষ করে তোলে। এ সময় দুই-একদিন পরপর সাবান দিন। বড়দের সাবার নয়, শিশুদের জন্য ব্যবহার করুন বেবিসোপ। বাজারে শিশুদের জন্য গ্লিসারিনযুক্ত সাবান পাওয়া যায়। এগুলোও ব্যবহার করতে পারেন।

এক ডায়াপার দীর্ঘক্ষণ নয়
শীতে শিশুকে এক ডায়াপার দীর্ঘক্ষণ পরিয়ে রাখা উচিত নয়। এতে শিশুর ত্বকে গোটা, র্যাশ ওঠাসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। সেই সঙ্গে ঠাণ্ডাও লেগে যেতে পারে।

রোদ লাগান
শীতের সকালের রোদে ভিটামিন ‘ডি’ রয়েছে, যা নবজাতকের হাড় ও ত্বকের জন্য খুব উপকারী। শীতে সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে ১০-১৫ মিনিট শিশুকে নিয়ে রোদে বসুন।

ঠোঁট ফাটা রুখতে
শিশুর ঠোঁটে পেট্রোলিয়াম জেলি কিংবা লিপজেল ব্যবহার করুন। গ্লিসারিনও শিশুর ঠোঁটের জন্য উপকারী।

সুতি কাপড় ব্যবহার
শিশুর পরিধেয় পোশাক অবশ্যই নরম ও মসৃণ হতে হবে। শিশুর ত্বকের অভ্যন্তরে বাতাস চলাচল করতে সুতি কাপড় ব্যবহার করুন। শীতকালে গরম কাপড়ের নিচে অবশ্যই একটি সুতি জামা পরাবেন। শিশুর ত্বক নরম রাখতেও সুতি কাপড় খুব কাজের।

ত্বকের রোগ
ডা. এসএম বোরহান উদ্দীন জানান, শীতে এক বছরের কম বয়সী শিশুদের ইনফ্যানটাইল সেবোরিক ডার্মাটাইটিস নামে এক ধরনের ত্বকের রোগ হয়ে থাকে। এতে শিশুদের মাথায় প্রচুর খুশকি হয়। সেই সঙ্গে গলায়, বগলে, থাইয়ের খাঁজে, ন্যাপি এরিয়ায় লাল দাগ হয় এবং চামড়া উঠতে শুরু করে। এ সমস্যা দূর করতে শিশুর স্ক্যাল্পে নিয়মিত নারকেল তেল বা অলিভ অয়েল লাগান। গোসলের আগে কিছুক্ষণ এক্সটা ভার্জিন গ্রেড নারকেল তেল কিংবা অলিভ অয়েল দিয়ে ম্যাসাজ করলে ত্বক ভালো থাকবে।

সতর্কতা
শিশুর শরীরে সরিষার তেল ব্যবহার করা উচিত নয়। সরিষার তেল মাখলে শিশুর ত্বক চিটচিটে হয়ে যায়। শিশুর ত্বকে র‍্যাশ উঠলে, ফুলে গেলে বা লাল হয়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

এমআই