রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন: বৈঠকে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন: বৈঠকে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ

ঢাকা, ১৫ জানুয়ারি (জাস্ট নিউজ) : মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযানের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে বৈঠকে বসেছে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ।

সোমবার সকাল নয়টায় মিয়ানমারের নেপিডোতে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক।

বাংলাদেশ-মিয়ানমারের যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির প্রথম বৈঠকে অংশ নিতে রবিবার ১৪ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল নেপিডোতে পৌঁছায়।

পররাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে এই কমিটিতে রয়েছেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আব্দুল মান্নান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক, শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম, সশস্ত্র বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মনিরুল ইসলাম আখন্দ, সামরিক গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তৌহিদ-উল-ইসলাম, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদপ্তরের কমডোর মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক মো. খলিলুর রহমানসহ আরও ছয়জন।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, শুরুতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে ফেরত নিতে চায় মিয়ানমার। অন্যদিকে, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত যাওয়ার প্রক্রিয়ায় তাড়াহুড়া করতে চায় না বাংলাদেশ।

রাখাইন রাজ্যে বসবাসকারী মুসলিম রোহিঙ্গাদেরকে নিজের নাগরিক বলে স্বীকার করে না মিয়ানমার। এক সময় তাদের নাগরিক অধিকার থাকলেও তা বাতিল করা হয় ১৯৮২ সালে। মিয়ানমারের দাবি, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশি এবং তাদেরকে বাংলাদেশে ফিরে আসতে হবে।

ওই বছর থেকেই নানা সময় রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী এবং নানা সময় বাংলাদেশে প্রাণ বাঁচাতে এসেছে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা। এদেরকে ফিরিয়ে নিতে বারবার আলোচনা হলেও মিয়ানমার সেই উদ্যোগ নেয়নি।

গত বছরের আগস্টের শেষ দিকে রাখাইন রাজ্যে কয়েকটি পুলিশি চেকপোস্টে হামলার জেরে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। প্রাণ বাঁচাতে ২৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশের দিকে ছুটে আসে রোহিঙ্গারা। আর মানবিক কারণে সীমান্ত খুলে দেয় বাংলাদেশ। এরপর দুই মাসে ছয় থেকে সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। সব মিলিয়ে এখন বাংলাদেশে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছে বলে সরকারের তথ্য বলছে।

রোহিঙ্গাদের কক্সবাজারে অস্থায়ী শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় দেওয়া বাংলাদেশ এই বিষয়টি এবার জাতিসংঘে তুলে ধরেছে বেশ জোরালভাবে। সাধারণ অধিবেশনের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার নির্যাতনের কথা তুলে ধরে তাদেরকে প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক সহায়তা চান।

এরপর রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান বন্ধ ও তাদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের প্রস্তাব বিপুল ভোটে পাস হয়েছে জাতিসংঘে। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চেষ্টার পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক আলোচনা চালিয়ে যায় ঢাকা।

নানা আলোচনা-সমালোচনার পর রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবসানের বিষয়ে গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর দুই দেশের মধ্যে গঠন করা হয়েছে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ। তিন ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকের পর যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন ও এর টার্মস অব রেফারেন্সের সম্মতিপত্রে সই হয়। বাংলাদেশের পক্ষে সম্মতিপত্রে সই করেছিলেন পররাষ্ট্র সচিব এম শহিদুল হক এবং মিয়ানমারের পক্ষে দেশটির পার্মানেন্ট সেক্রেটারি মিন্ট থো। দুই দেশের মধ্যে চুক্তি সইয়ে বলেছেন, শিগগির এই কমিটি কাজ শুরু করবে।

বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই কমিটিতে দুই দেশের ১৫ জন করে মোট ৩০ জন কর্মকর্তা থাকবেন। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ছাড়াও স্বরাষ্ট্র, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সদস্য এবং কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকও থাকবেন।

বৈঠকের আলোচনা অনুযায়ী, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কোন প্রক্রিয়ায় শুরু হবে, সেটি নির্ধারণ করবে এই ওয়ার্কিং গ্রুপ। ফেব্রুয়ারি নাগাদ এই কাঠামো তৈরি হয়ে যাবে বলে আশা করছে দুই পক্ষ। এরপরই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হবে।

 

(জাস্ট নিউজ/জেআর/১১৩৫ঘ.)