ওএসডি হচ্ছেন জামালপুরের ডিসি

ওএসডি হচ্ছেন জামালপুরের ডিসি

নিজ অফিস কক্ষে এক নারী কর্মচারীর সঙ্গে জামালপুরের জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীরের আপত্তিকর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার ঘটনায় জামালপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আহমেদ কবীরকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা হচ্ছে।

শনিবার রাত সাড়ে ৮টায় জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, জেলা প্রশাসক (ডিসি) আহমেদ কবীরের বিরুদ্ধে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এনেছি। আগামীকাল (রবিবার) তাকে ওএসডি করে আদেশ জারি করা হবে। সেখানে (জামালপুর) নতুন একজন যোগ দেবেন।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, চাকরির বিধি অনুযায়ী অন্যান্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তার (ডিসি আহমেদ কবীর) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এর আগে, শনিবার (২৪ আগস্ট) সকালে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (জেলা ও মাঠপ্রশাসন অনুবিভাগ) আ. গাফ্ফার খান বলেন, ‘ঘটনার বিষয়ে অবগত আছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। বিভাগের কর্মকর্তারা প্রাথমিকভাবে বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন।

তিনি আরো বলেন, তদন্ত কমিটি হবে, এখন বন্ধ যাচ্ছে। অফিস খুললেই এটা হবে। তবে এটা নিয়ে বিভিন্নভাবে তদন্ত হচ্ছে, বিভিন্ন সংস্থা-কর্তৃপক্ষ সেটা করছে। আরও অনেক অথরিটি আছে, তারাও দেখছে।

এটা আমাদের নলেজেও আছে। বিষয়টি দেখা হচ্ছে বলেন অতিরিক্ত সচিব।

এর আগে গত ১৫ আগস্ট বিকালে ‘খন্দকার সোহেল আহমেদ’ নামের একটি পাবলিক ফিগার ফেসবুক পেজ থেকে জেলা পর্যায়ের সর্বোচ্চপদধারী এই সরকারি কর্মকর্তা তার অফিসেই একজন নারীর সঙ্গে অবৈধ মেলামেশার এই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ করা হয়। ফেসবুক আইডি থেকে এটি ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় গত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে ব্যাপক হারে নজরে আসতে থাকে ফেসবুক আইডি ব্যবহারকারীদের কাছে। এদিকে শুক্রবার ভোররাত থেকে রহস্যজনক কারণে ওই আইডির ওয়াল থেকে ভিডিও লিংকটি সরিয়ে নেয়ায় সন্দেহ আরো দানা বেঁধে উঠেছে।

এমন ভিডিও প্রকাশ পাওয়ায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে বিভিন্ন মহলে। ৪ মিনিট ৫৭ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে যে কক্ষটি দেখা যাচ্ছে সেটি জামালপুরের জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীরের অফিস কক্ষে তার চেয়ারের ঠিক ডান পাশের ছোট একটি কক্ষ। ছোট এই কক্ষটিতে একটি ছোট খাট বসানো হয়েছে। কক্ষটি বেশ পরিপাটি দেখা যাচ্ছে। ভিডিওটিতে পুরুষ ব্যক্তিটিই জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর। আর যে নারীকে দেখা যাচ্ছে তিনি এই জেলা প্রশাসকের মাধ্যমেই সম্প্রতি নিয়োগ পাওয়া একই অফিসের একজন অফিস সহায়ক।

এদিকে শুক্রবার দুপুরে জেলা সার্কিট হাউজে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ওই ভিডিওটি সাজানো বলে দাবি করেছেন জেলা প্রশাসক। সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর বলেন, আপনারা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আমি মানসিকভাবে খুবই বিপর্যস্ত অবস্থায় আছি। আপনারা আমাকে একটু সময় দিবেন। প্রকৃত ঘটনা জানতে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এসময় জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের এ বিষয়ে সংবাদ পরিবেশন না করার জন্য অনুরোধ করেন।

এছাড়া ভিডিওটির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটি হ্যাকার গ্রুপ দীর্ঘদিন ধরে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে আমাকে ‘ব্ল্যাকমেইল করার’ চেষ্টা করছিল। আমি বিষয়টি গুরুত্ব দেইনি। এটি একটি সাজানো ভিডিও বানোয়াট ভিডিওটি একটি ফেক আইডি থেকে পোস্ট দেয়া হয়।

তবে ভিডিওটিতে দেখানো কক্ষটি তার অফিসের বিশ্রাম নেয়ার কক্ষ এবং ভিডিওর ওই নারী তার কার্যালয়ের অফিস সহায়ক হিসেবে কর্মরত বলে নিশ্চিত করেন জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর।

জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৭ মে জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর জামালপুরে যোগদান করেন। যোগদানের কিছুদিন পর থেকেই তিনি তার অফিসের কক্ষের পাশে ছোট্ট একটি কক্ষে ধূমপান ও ব্যক্তিগত সরকারি গোপনীয় বৈঠকের জন্য কক্ষটি ব্যবহার করে আসছেন। সম্প্রতি ওই কক্ষে বিশ্রাম নেয়ার জন্য একটি খাট বসানো হয়েছে। তাতে বিশ্রাম নেয়ার মতো বালিশ, চাদর সবকিছুই আছে। সম্প্রতি ওই কক্ষে একাধিক নারীর যাতায়াতকে কেন্দ্র করে গোটা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাঝে দীর্ঘদিন ধরে নানা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত ওই কক্ষে একজন নারীর সঙ্গে জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীরের অবৈধ মেলামেশার ভিডিওটি ফেসবুকে, ফেসবুক থেকে ডাউনলোড করে মেসেঞ্জারে, মোবাইল থেকে মোবাইলে এবং ইমেইেলে ছড়িয়ে পড়ায় আগে শোনা সেই গুঞ্জন শেষ পর্যন্ত বাস্তবে রূপ নিয়েছে।

এমআই