ঢাকা ডেন্টাল কলেজ: অকেজো মালামাল স্থানান্তরে অনিয়ম

ঢাকা ডেন্টাল কলেজ: অকেজো মালামাল স্থানান্তরে অনিয়ম

সরকারি নিয়ম-নীতি সঠিকভাবে অনুসরণ না করেই ঢাকা ডেন্টাল কলেজ চত্বর থেকে বিপুল পরিমাণ পুরাতন অকেজো মালামাল সরানোর অভিযোগ উঠেছে।

৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা ডেন্টাল কলেজ হাসপাতাল প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব বরাবর এ অভিযোগ করা হয়।

যেখানে অভিযুক্ত করা হয়েছে ডেন্টাল কলেজের অধ্যক্ষকে। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশে ডেঙ্গুমুক্ত পরিচ্ছন্ন ক্যাম্পাস করতেই এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন কলেজটির অধ্যক্ষ। স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব বরাবরে ডেন্টাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের লিখিত অভিযোগপত্রে অতিরিক্ত সচিবেরও (প্রশাসন) দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।

ঢাকা ডেন্টাল কলেজের অধ্যক্ষ কর্তৃক কয়েক ট্রাক পুরনো মালামাল অন্যত্র সরিয়ে ফেলার বিষয়ে নজরদারির জন্য সচিবের কাছে দেয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়, ‘১ থেকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩ দিনে মেডিকেল কলেজের আঙ্গিনা থেকে প্রায় ৮ থেকে ১০ ট্রাক মালামাল অন্যত্র সরিয়ে ফেলেন। এ মালামাল সরিয়ে ফেলে কিভাবে রেখেছেন বা সরকারি বিধিমতো বিক্রি করেছেন কিনা- তা আমাকে অবহিত করেননি বিধায় আমি চিন্তিত। উক্ত মালামালের মধ্যে পুরাতন ডেন্টাল ইউনিট যদি থাকে তবে তার জন্য ভবিষ্যতে হাসপাতালের ডেন্টাল ইউনিটের পুরাতন মালের হিসাব মেলানো কঠিন হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. হুমায়ুন কবীর বুলবুল বলেন, দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হলে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে ক্যাম্পাস পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার নির্দেশনা দেয়া হয়। সেই নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে আমি ১ আগস্ট থেকে পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু করি। একপর্যায়ে কলেজের লেডিস হোস্টেলের পেছনে জমে থাকা আবর্জনা সরিয়ে সেই স্থান পরিষ্কার করার উদ্যোগ নেই। এক্ষেত্রে সরকারি নিয়ম-নীতি মানা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুরনো গাড়িসহ বিভিন্ন ভারি যন্ত্রপাতি বিক্রি করতে হলে কমিটি করে টেন্ডার আহ্বান করতে হয়। কিন্তু এখানে তেমন কিছুই ছিল না।

জানা গেছে, ক্যাম্পাস পরিষ্কারের অংশ হিসেবে যেসব পুরাতন মালামাল সরানো হয়েছে তার মধ্যে পুরনো ১৫টি ডেন্টাল ইউনিট এবং ২০টি ডেন্টাল চেয়ার ছিল। এছাড়া বিপুল পরিমাণ ব্যবহার অনুপযোগী চেয়ার, টেবিল ও আসবাবপত্র ছিল। উল্লিখিত ৩ দিন রাতে ট্রাকে এসব মালামাল সরানো হয়। মালগুলো যারা সরিয়েছেন তদের গেট পাস প্রদান করেন কলেজের সচিব মো. কায়েদে আজম। ওষুধ কোম্পানির প্যাডে লিখিত গেট পাসে লেখা রয়েছে, ‘লেডিস হোস্টেলের পুরাতন অকেজো মালামাল বাহিরে নেয়ার অনুমতি দেয়া হল। ডেঙ্গু নির্মূল ও এডিস মশা নিধনের জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের অংশ।’

সামগ্রিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) হাবিবুর রহমান খান বলেন, বৃহস্পতিবার তিনি এসংক্রান্ত একটি অভিযোগ পেয়েছেন। এরপর জরুরিভিত্তিতে সেটি ‘পুটআপ’ করতে বলেন।

আজ রবিবার এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো ব্যবস্থা নেয়া যায় না। তদন্ত সাপেক্ষে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তবেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারি প্রতিষ্ঠানের যে কোনো ব্যবহার অনুপযোগী মালামাল বিক্রি করতে হলে অবশ্যই একটি ‘কনডেমেনশন কমিটি’ করতে হয়। হাসপাতালের ভারি যন্ত্রপাতির ক্ষেত্রে ‘নিমিউ’র প্রতিনিধিও থাকতে হয়। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান, মন্ত্রণালয়, অধিদফতর, সিভিল সার্জনের প্রতনিধির সমন্বয়ে গঠিত কমিটির মাধ্যমে টেন্ডার আহ্বান করা হয়। তারপর কমিটি নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানকে পুরাতন মালামাল সরানো বা বিক্রির অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে সরকারি এসব নিয়ম অনুসরণ করা হয়নি।

হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজের একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী জানান, লেডিস হোস্টেলের পুরাতন অকেজো মালামালের মধ্যে যেসব ডেন্টাল ইউনিট ও ডেন্টাল চেয়ার ছিল সেগুলোর কিছু কিছু সংস্কার করে ব্যবহার উপযোগী করা যেত। এগুলো যারা নিয়ে গেছে আমরা সেখানে গিয়েছিলাম ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু তারা জানান, আমার যাওয়ার আগেই সব ভেঙে চুরমার করা হয়েছে।

এমজে/