সৌদি আরবে প্রায় সাত মাস আগে ধরা পড়া ২২ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশের পাসপোর্ট পেতে সহায়তা করেছিল পুলিশই। এই রোহিঙ্গাদের সৌদি আরব বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর পর বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পরবর্তী সময়ে অনুসন্ধানে জানা যায়, পাসপোর্টের আবেদনপত্রে এসব রোহিঙ্গা নিজেদের বাংলাদেশি পরিচয় দিয়ে যে ঠিকানা ও তথ্য দিয়েছিল, তা যাচাই করে পুলিশ প্রতিবেদনে সেবব ‘সঠিক’ বলে উল্লেখ করা হয়।
পরবর্তী সময়ে এই পুলিশ প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই পাসপোর্ট অফিস এসব রোহিঙ্গার নামে পাসপোর্ট ইস্যু করে। এ ঘটনায় এরইমধ্যে নিজেদের বিশেষ শাখার দুই এএসআই আবদুল কুদ্দুস ও বেলায়েত হোসেনকে প্রায় চার মাস আগে সাময়িক বরখাস্ত করেছে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি)।
এ ছাড়া মো. রিপন ও মঙ্গল বিকাশ নামে আরো দুই এএসআইর বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ তদন্তাধীন। অভিযোগ প্রমাণ হলে তাদের বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সিএমপির উপ-কমিশনার (বিশেষ শাখা) আবদুল ওয়ারিশ।
পুলিশ সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে পুলিশ পাসপোর্ট অফিসগুলোতে রক্ষিত কাগজপত্র অনুসন্ধান করে দেখতে পায়, ওই রোহিঙ্গারা চট্টগ্রাম জেলা, মহানগর ও কক্সবাজার থেকে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে পাসপোর্ট নিয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী তাদের দেওয়া ঠিকানা যাচাই-বাছাই করে পুলিশের বিশেষ শাখা ‘সঠিক’ বলে প্রতিবেদন দেয়। আর মহানগর এলাকা থেকে আসা এমন কিছু আবেদন যাচাই-বাছাইয়ে যুক্ত ছিলেন এএসআই আব্দুল কুদ্দুস ও বেলায়েত হোসেন।
তবে যে আবেদনগুলো চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলা থেকে এসেছিল এবং তার তথ্য ‘সঠিক’ বলে যে পুলিশ কর্মকর্তারা প্রতিবেদন দিয়েছিলেন তাদের বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত সুপার মহিউদ্দিন মাহমুদ বলেন, জেলা এসবির কোনো পুলিশের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ আসেনি। কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেনও একই মন্তব্য করেন।
এদিকে এই পাসপোর্ট জালিয়াতিতে যুক্ত ছিলেন না বলে দাবি করেছেন সাসপেন্ড হওয়া এএসআই বেলায়েত হোসেন। তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী আমরা প্রথমেই দেখি আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র সঠিক আছে কিনা। অনলাইনে তা সঠিক পাওয়া গেছে। আমার বিরুদ্ধে ৭০ বছরের এক নারীর আবেদন ফরম যাচাই-বাছাইয়ের ব্যাপারে অভিযোগ করা হয়েছে। ওই নারী চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলেছেন। তার দেওয়া চান্দগাঁও এলাকার ঠিকানায় গিয়ে কথা বলি। তিনি বলেছেন, চিকিৎসার জন্য ভারতে যাবেন, এর পর ওমরাহ করবেন।
যেহেতু তার এনআইডি ঠিক পাওয়া গেছে, আমি সেটি সঠিক বলেই প্রতিবেদন দিয়েছি। আমি এর আগে চট্টগ্রামে চাকরি করিনি। ফলে চট্টগ্রামের মানুষের আঞ্চলিক ভাষার সঙ্গে রোহিঙ্গাদের ভাষার পার্থক্য বুঝিনি।
নগর পুলিশের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, রোহিঙ্গারা এনআইডি সার্ভারে যুক্ত হওয়ায় বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ঠিক কত সংখ্যক রোহিঙ্গা এনআইডি সার্ভারে যুক্ত হয়েছে, তা বের করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। মনছুরাবাদ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস এ ধরনের ৫৪টি ফাইল শনাক্ত করেছে, যারা রোহিঙ্গা অথচ বাংলাদেশি হিসেবে আবেদন ফরমের সঙ্গে সঠিক এনআইডি দিয়েছে।
পাঁচলাইশ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসেও এ ধরনের ৫৮টি ফাইল পাওয়া গেছে। এ প্রসঙ্গে মনছুরাবাদ আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ের পরিচালক আবু সাইদ বলেন, এনআইডি সঠিক থাকা সত্ত্বেও আমরা ৫৪টি আবেদন ফরম সন্দেহবশত আটক করি। পরে যাচাই করে শতভাগ নিশ্চিত হই তারা রোহিঙ্গা। তিনি বলেন, কেবল রোহিঙ্গাই নয়, অন্য কানো দেশের নাগরিক যাতে বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিতে না পারে সে ব্যাপারে কঠোর নিদের্শনা রয়েছে।
এমআই