মাঠ পুলিশকে সদর দপ্তরের বার্তা

ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান পরিচালনা করবে র‌্যাব

ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান পরিচালনা করবে র‌্যাব

সরকারের চলমান দুর্নীতি ও ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‌্যাবকে। এখন থেকে শুধু র‌্যাবই এসব অভিযান পরিচালনা করবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক পুলিশ হেডকোয়াটার থেকে দেশের সকল মেট্রো কমিশনার ও রেঞ্জ ডিআইজিকে এ বার্তা দেয়া হয়েছে।

গত ১৮ সেপেটম্বর থেকে র‌্যাব রাজধানীতে দুর্নীতি বিরোধী শুদ্ধি অভিযান শুরু করে ক্যাসিনো অভিযানের মাধ্যমে। এরপর থেকেই নটক নড়ে পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনীর। তারাও অভিযান শুরু করে। গ্রাম থেকে শহর সর্বত্র জুয়া, মাদক ও প্রভাবশালীদের অন্যায় কাজের প্রতিবাদে চলে অভিযান।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকারের এই বিশেষ অভিযান সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনার জন্য বিভ্রান্তি এড়াতে র‌্যাবকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

অন্যান্য বাহিনী রুটিন মাফিক তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবে। র‌্যাবের অভিযানের পাশাপাশি পুলিশের অভিযানে বেশ কিছু বিষয়ে বিভ্রান্তি দেখা দেয়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে এসংক্রান্ত একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে মন্ত্রণালয় ও পুলিশেরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় এ অভিযানে অতিউৎসাহিত না হয়ে পুলিশকে ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান না করে র‌্যাবকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে সিদ্ধান্ত মোতাবেক পুলিশ হেডকোয়াটারের অতিরিক্ত ডিআইজি স্পেশাল ফোর্স আজ (শুক্রবার) এক ক্ষুদে বার্তায় সারাদেশের পুলিশ-প্রশাসনকে এ নির্দেশনা দিয়েছে। নতুন নির্দেশনার পর এর ব্যাখ্যা জানতে অনেক কর্মকর্তারাই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করেছে।

মাঠ পুলিশের একাধিক কর্মকর্তার সাথে কথা বলে ক্ষুদে বার্তা প্রাপ্তির কথা জানা গেছে।

শুদ্ধি অভিযানের পরিণতি কতদূর পর্যন্ত যাবে, কতজন গ্রেপ্তার হবে, সর্বোচ্চ কোন পর্যায়ে গ্রেপ্তার হবে কিংবা কতদিন চলবে? শুদ্ধি অভিযানে কি শুধু আওয়ামী লীগের লোকজন ধরা হবে? অন্যান্য যারা বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত তাদের কি আইনের আওতায় আনা হবে না? শুদ্ধি অভিযানে যে বলা হচ্ছে নেপথ্যে রাঘব বোয়াল, গডফাদার বা যারা অভিযুক্তদের মদদ দিয়েছে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে, সেটা কি আনা হবে? এনিয়ে অনেক বিভ্রান্তি ছিল।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাও এই শুদ্ধি অভিযানের ধরণ, বরণ প্রকৃতি সম্বন্ধে অন্ধকারে রয়েছেন। তারা জানেন না যে, কারা কারা এই শুদ্ধি অভিযানের টার্গেট, কাদেরকে ধরা হবে, এই শুদ্ধি অভিযানের গতিপথ কোনদিকে যাবে তার কিছুই জানেন না আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা। যদিও নেতারা আওয়ামী লীগের এই শুদ্ধি অভিযান নিয়ে নানা রকম কথা বলছেন। ওই সমস্ত নেতারাও একান্ত আলাপচারিতায় স্বীকার করছেন যে, এই শুদ্ধি অভিযানের বিস্তারিত কোন কিছু জানেন না। তারা অতটুকুই জানেন, যতটুকু আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ১৪ সেপ্টেম্বর কার্যনির্বাহী সভায় বলেছেন।

আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সভায় শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা অপরাধি তাদেরকে ছাড় দেওয়া হবে না। বিশেষ করে যুবলীগে কিছু মনস্টার তৈরী হয়েছে বলে তিনি জানান।

যারা অভিযুক্ত হতে পারেন বা যাদের মধ্যে ভয় কাজ করছে তারা যখন দলের কেন্দ্রীয় বা সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন, তখন দলের কেন্দ্রীয় বা সিনিয়র নেতারা একই কথা বলছেন তারা জানেন না যে কারা অভিযুক্ত বা কে অভিযুক্ত। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এই অভিযানের লক্ষ্য একটাই, সেটা হলো অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা। আমরা দল থেকে শুরু করেছি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছে, আওয়ামী লীগের বাইরেও অপরাধের সঙ্গে জড়িত অনেক ব্যক্তি আছেন। তাদের ব্যাপারে শুদ্ধি অভিযানে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কিনা সেই সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা নেই আওয়ামী লীগ নেতা বা অন্য কারোর। তবে সাধারণ মানুষ এই শুদ্ধি অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছেন। সাধারণ মানুষ মনে করছেন, এই অভিযানের ফলে অন্তত কিছুদিন সবকিছু ঠিক থাকবে।

এমআই