আবরারের মৃত্যুতে দায়ী নই, পদত্যাগের প্রশ্নই উঠে না : বুয়েট ভিসি

আবরারের মৃত্যুতে দায়ী নই, পদত্যাগের প্রশ্নই উঠে না : বুয়েট ভিসি

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্বাবিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মহল থেকে পদত্যাগের দাবি উঠলেও বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিসি ড. সাইফুল ইসলাম বলেছেন তিনি পদত্যাগ করবেন না। ভয়েস অফ আমেরিকাকে দেয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন। সাক্ষাৎকারে বুয়েটের ভিসি আরো বলেন, আবরার ফাহাদের মৃত্যুর ঘটনায় তার ‘কোনো দায় নেই’। সে কারণে পদত্যাগের প্রশ্নই উঠে না।

এদিকে ছাত্রলীগের নেতার্মীদের নির্মম পিটুনিতে নিহত আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে নিজের কোনো ব্যর্থতা দেখছেন না বলে দাবি করেছেন বুয়েটের ভিসি ড. সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমার ব্যর্থতা কী করে হবে? আমি চেষ্টার কোনো ত্রুটি করিনি। আমি তো আইডেন্টিফাই করতে পেরেছি আগেই। ভয়েস অব আমেরিকাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই দাবি করেন।

বুয়েটের সাবেক শিক্ষক ও ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের বর্তমান ভিসি অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী তার পদত্যাগের দাবি তুলেছেন এমন তথ্য জানালে এই দাবিকে অযৌক্তিক বলে উল্লেখ করেন তিনি। পদত্যাগ করবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রশ্নই ওঠে না কারণ, আমার এখানে কোনো অন্যায় নেই। আমি আমার ডিউটি পালন করেছি।’

ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী সম্পর্কে বুয়েটের ভিসি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘উনি আরেক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। ওখানে কাজ ফেলে এখানে এসে আমার সঙ্গে কথা না বলে আমার পদত্যাগ চাইলেন কী করে? এটা এথিক্যাল হলো না। উনি সম্মানিত ব্যক্তি, আমি সবসময় সম্মান করে কথা বলি উনাকে। উনাকে অনেকসময় টেলিফোনও করি। কালকে আমি কুষ্টিয়া গেলাম, উনি এখানে এসে এ কথা বললেন। এটাতো যুক্তিযুক্ত কথা হলো না। একটা ঘটনা ঘটেছে, পূর্বাপর না জেনে কয়েকজনকে নিয়ে একথা বললেন। উনি এতবড় জ্ঞানী পণ্ডিত হয়ে এটা কিভাবে বললেন? আমি দুঃখিত ও মর্মাহত হয়েছি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে এক শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় নিজের ব্যর্থতা আছে কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, না আমার ব্যর্থতা কী করে হবে? আমি চেষ্টার কোনও ত্রুটি করিনি। আমি তো আইডেন্টিফাই করতে পেরেছি আগেই। ডিএসডব্লিউ (ছাত্র কল্যাণ পরিচালক) চেঞ্জ করলাম।

ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সেজন্য কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার কথা ভাবছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাকে এখন কড়া ডিএসডব্লিউ নিয়োগ দিতে হবে। এই কাজটাতো কেউই করতে চায় না। তদন্ত কমিটি যেটা করলাম, কাজ শেষ না করেই ইমেইলে বলছে এ দায়িত্ব পালন করতে পারবে না। কাকে দিলে চলবে, আর কাকে দিলে চলবে না তা আমাকে খুঁজতে হয়। এ (এই কাজ) করতে করতে মাথার চুল আর থাকে না।’

ছাত্ররা যে সাত দফা দাবি জানিয়েছে তার মধ্যে অন্যতম দাবি বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে যারা হত্যা করেছে বলে অভিযুক্ত তাদেরকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করতে হবে। ফৌজদারি বিচারের ওপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, কোর্টের মাধ্যমে বিচার হবে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অভিযুক্ত ছাত্রকে বহিষ্কার করার যে বিষয়টা সেটা তো আপনার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ৭২ ঘণ্টা পার হয়ে গেছে। এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ভিসি হিসেবে আপনি কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন জানতে চাইলে ড. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘যে কোনও জিনিসের প্রসিডিওর আছে। আমাদের নিয়ম তদন্ত কমিটি। সেদিন সাথে সাথেই তদন্ত কমিটি হয়েছে। এবং অবশ্যই এদের বের করে দেয়া হবে। অপরাধীকে কিভাবে রাখবো? লিগ্যাল প্রসিডিওর ফলো করতে হয়। সেটি যদি আমরা না করি, এর আগেও কিন্তু কোর্টে গিয়ে আমাদের হাঁটতে হয়েছে।

এই তদন্ত কমিটি কয়দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘১০ দিনের মধ্যে। আমাদের একটা স্ট্যান্ডার্ড প্রসিডিওর আছে।’

র‌্যাগিংয়ের নামে বুয়েটে নির্যাতনের ঘটনা হরহামেশাই ঘটে আসছে। ২০১৭ সালে ৩১ মার্চ এ বিষয়ে একটি ওয়েবপেজ খোলা হয়। ২০১৯ সালের ৯ অক্টোবর পর্যন্ত সেখানে ১৬৬টি অভিযোগ জমা পড়েছে। সেখানে দেখা যায়, যেভাবে আবরারকে নির্যাতন করা হয়েছে তেমন ঘটনা এর আগে বহুবার ঘটেছে। আপনি এসব জানতেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ভিসি অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বলেন,‘একদিন আমি শিক্ষকদের মিটিং থেকে ছাত্র কল্যাণ পরিচালককে ফোন করে বললাম, এরকম নির্যাতন হচ্ছে, গার্ডিয়ানরা অভিযোগ করছে, কী তুমি ব্যবস্থা নিচ্ছো না?’ উত্তরে তিনি বলেন, ‘এরকম কোনো প্রমাণ নেই।’ আমি বললাম, ‘এটা কোনও প্রমাণের দরকার পড়ে না।’ কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে যখন একজন ভিসি হয় তখন সবসময় (সবার) কাউন্টার পার্ট হয়ে যায়। ভিসি পদটা সুখকর কোনও পদ না। কারও না কারও স্বার্থে লাগে। আরেকটা জিনিসও থাকে, সরিয়ে আরেকজন ভিসি হওয়া যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ শিক্ষক রাজনীতির কারণে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা তো একটা পার্ট আছেই। সুনির্দিষ্টভাবে বলা মুশকিল। আমাকে সব মতাবলম্বীদের নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় চালাতে হয়।’

র‌্যাগিং হয় জানতেন কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘জানার পরেই তো ডিএসডব্লিউকে ফোন করি, তিনি তো সরাসরি অস্বীকার করলেন। নতুন ছাত্র কল্যাণ পরিচালক, তার অবহেলার কারণে এরকম ঘটনা ঘটলো? অবহেলা বলবো না, আগের ডিএসডব্লিউ তো অনেকদিন ছিল। তার অবহেলার কারণে যে কাণ্ডটা ঘটেছে সেটা মেকাপ করতে যে সময় লাগে সেটাতো উনি পাননি। ছাত্ররা এরকম কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলবে, এটি আমার আসার আগে আরও খারাপ ছিল।’

ছাত্রলীগের হাতে নিহত আবার ফাহাদের লাশ ক্যাম্পাসে আনার কথা তাকে কেউ জানায়নি দাবি করে সাক্ষাৎকারে ভিসি বলেন, ‘আমি জানি আবরারের লাশ নিয়ে গেছে। সেদিন কেওয়াটিক (বিশৃঙ্খল) পরিস্থিতিতে কোথাকার খবর কোথায় দেয়ার মতো লোক ছিল না।’

বেশ কয়েকজন শিক্ষক জানাজায় অংশ নিয়েছেন আপনি তা জানতেন কিনা সম্পূরক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এখানে আবরারের লাশ এসেছে এই খবর আমাকে কেউ বলেনি। এরমধ্যে আমি আবার গিয়েছিলাম মাননীয় মন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করতে।’ সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা।

এমজে/