নুসরাতের লাশ কবর দিতে পারছ, বাকিদের পারবা না: হুমকি আসামিদের

নুসরাতের লাশ কবর দিতে পারছ, বাকিদের পারবা না: হুমকি আসামিদের

ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার মামলায় ১৬ জন আসামিকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। তাদের রাখা হয়েছে কারাগারের কনডেম সেলে। কিন্তু তারপরও নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে নুসরাতের পরিবার। কারণ, গতকাল যখন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের আদালত থেকে বের করা হচ্ছিল, প্রিজন ভ্যানে তোলার সময় প্রকাশ্যে তারা নুসরাতের পরিবারকে হুমকি দিচ্ছিলেন।

সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ করেছেন নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান। তার চেয়েও গুরুতর অভিযোগ করেছেন নুসরাতের মা শিরীন আখতার।

আমাদের সময়কে শিরীন জানান, আসামিপক্ষের লোকজন তাদের বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে। তারা হুমকি দিয়ে বলছে, ‘ঘরে চেরাগ (বাতি) জ্বালানোর মতো কোনো লোক থাকবে না। নুসরাতের লাশ কবর দিতে পারছ, ঘরের বাকিদের কবর দিতে পারবা না’।

টেনশনে শিরীন ঘুমাতে পারেন না। তার ছেলেরা বাইরে বাইরে থাকে। তাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে তিনি অনুরোধ করেছেন, রায়ের পরও যেন তার ছেলেদের নিরাপত্তা দেওয়া হয়।

নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান আমাদের সময়কে বলেন, ‘আসামিরা আদালত চত্বরে প্রকাশ্যে আমাদের হুমকি দিয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন মাধ্যমে তারা আমাদের হুমকি দিচ্ছেন। আমরা আশা করি রায় কার্যকর হওয়া পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী আমাদের নিরাপত্তা দেবেন।’

নুসরাতের বাবা মাওলানা একেএম মুসা বলেন, ‘আমরা প্রতিনিয়ত টেনশনে থাকি। আমরা এক পরিবার, আর আসামিরা ১৬ পরিবার। তাদের অনেক আত্মীয়-স্বজন। আমাদের ভয় হয়; তারা আমাদের ক্ষতি করে কিনা? অনেক কিছু বলতে পারছি না, বলার সাহস পাচ্ছি না।’

এর আগে ৩০মে আদালতে কাঠগড়া থেকে মামলার বাদী নুসরাতের বড় ভাই মাহমদুল হাসান নোমান ও বাদী পক্ষের আইনজীবী রফিকুল ইসলাম খোকনকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে হুমকি-ধামকি দেয় আসামিরা।

বাদী পক্ষের আইনজীবী রফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, ‘প্রতিদিন আসামিরা আদালতের কাঠগড়া থেকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেছে। আসামিরা পারলে সেখানেই আমাদের খুন করতো। তাদের ব্যবহারে বুঝা যায় তারা সংঘবদ্ধ একটি খুনি চক্র। তাদের আত্মীয় স্বজনও হুংকার দিয়েছে।’

এ বিষয়ে ফেনীর পুলিশ সুপার খোন্দকার নুরুন্নবী আমাদের সময়কে বলেন, ‘রায়ের পর থেকে নুসরাতের বাড়িতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ বাড়ানো হয়েছে। তবে যারা নুসরাত পরিবারকে ক্ষতি করতে চাইবে তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। নুসরাতের পরিবার যখনই আমাদের কাছে সহযোগিতা চাইবে, আমরা তাদের সহযোগিতা করবো।’

এদিকে, নুসরাত হত্যায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ১৬ আসামিকে কনডেম সেলে রাখা হয়েছে। ১৬ আসামিদের মধ্যে পুরুষ ১৪জনকে ৮টি সেলে রাখা হয়েছে। মহিলা ২জনকে ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবারই আদালত থেকে ফিরে যাওয়ার পর পরই তাদেরকে কনডেম সেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফেনী জেলা কারাগারের তত্ত্ববধায়ক রফিকুল কাদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

রফিকুল কাদের জানান, আদালত থেকে আসার পর ১৪ জনকে কনডেম সেলে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে কামরুন নাহার মনি ও উম্মে সুলতানা পপিকে ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। জেলা কারাগারগুলোতে কনডেম সেলের পদ্ধতি নেই। তবে এখানে ১০ জনের জন্য সাধারণ সেল রয়েছে। যখনই কোনো মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আসে তখন তাদেরকে এসব সেলে রাখা হয় এবং সেগুলো কনডেম সেল হিসেবে নামকরণ করা হয়। তবে সাধারণ সেল এবং কনডেম সেলের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই বলেও তিনি জানান।

ফেনী জেলা কারাগারের তত্ত্ববধায়ক আরও জানান, আগামী রোববার রায়ের কপি ফেলে আসামিদের কোথায় পাঠানো হবে সেটি আইজি প্রিজনের কাছে আবেদন করা হবে। পরে তার সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী উপযুক্ত কারাগারে পাঠানো হবে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের জেলা কারাগারে রাখা হয় না, কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখতে হয়।

নুসরাত হত্যা মামলার রায়ের পর আলোচনা কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে রায় কার্যকরের বিষয়টি। মামলার বাদী পক্ষের অন্যতম আইনজীবী শাহজাহান সাজু জানান, যে আদালত থেকে রায় দিয়েছে সে আদালত থেকে রায়ের কপি লাল কাপড়ে মুড়িয়ে ৭ দিনের মধ্যে হাইকোর্টে বিভাগে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। সেখানে রাষ্ট্রপক্ষের অ্যাটর্নি জেনারেল, বাদী ও আসামি পক্ষের শুনানি শেষ আপিল বিভাগে পাঠানো হবে। আপিল বিভাগে শুনানির পর রিভিউসহ আরও কিছু আইনি প্রক্রিয়া শেষ দণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া হবে। উচ্চ আদালতের ব্যাপারে কোনো সময় বেধে দেওয়া নেই।

রায় দ্রুত কার্যকরের ব্যাপারে তিনি আরও জানান, নিম্ন আদালতে সরকারি কর্মচারীরা যেরকম সাক্ষী দিয়েছেন, সেভাবে অ্যাটর্নি জেনারেল উচ্চ আদালতে সহযোগিতা করলে দ্রুত রায় কার্যকর করা সম্ভব হবে। এখন আর কোনো সাক্ষীর প্রক্রিয়া নেই। মামলার নথি, ডকেটসহ এসব বিষয়ে দালিলিক আলোচনা হবে।