শুক্রবার থেকে কার্যকর

সড়ক পরিবহন আইন নমনীয় করার দাবি শাজাহান খানের

সড়ক পরিবহন আইন নমনীয় করার দাবি শাজাহান খানের

অবশেষে বহুল আলোচিত নতুন সড়ক পরিবহন আইন আজ শুক্রবার থেকে কার্যকর হচ্ছে।বিআরটিএ থেকে ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের আইনটি কার্যকর করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

৭৯ বছরের পুরনো মোটরযান অধ্যাদেশ বাতিল করে নতুন এ আইনে বেপরোয়া গাড়িচালকের কারণে মৃত্যু হলে চালক সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

আর যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে চালক বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটায়, তাহলে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড রাখা হয়েছে।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আইনটিতে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। ফলে আজ (১ নভেম্বর) থেকে এটি কার্যকর করতে কোনো বাধা নেই।

তবে নতুন সড়ক পরিবহন আইন নমনীয় করার দাবি তুলেছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি শাজাহান খান। তিনি বলেছেন, আইন কঠোর করে শাস্তি বাড়িয়ে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভবপর হবে না।

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর চেষ্টায় সরকার গঠিত একটি কমিটির প্রধান শাজাহান খান বিগত সরকারে নৌমন্ত্রী থাকাকালেও এই আইন কঠোর করার বিষয়ে আপত্তি তুলে সমালোচনায় পড়েছিলেন।

ঢাকার সড়কে বাসের চাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থী প্রাণ হারানোর পর গত বছর শিক্ষার্থীদের নজিরবিহীন আন্দোলনের পর শাস্তির বিধান কঠোর করে নতুন সড়ক পরিবহন আইন প্রণয়ন হয়।

গত বছর আইনটি হওয়ার পর সরকারের প্রজ্ঞাপন না হওয়ায় তার কার্যকারিতা ঝুলে ছিল; এর মধ্যে পরিবহন শ্রমিকদের দাবির মুখে আইনটি সংশোধনের ইঙ্গিতও আসছিল।

তবে শেষে কোনো ধরনের পরিবর্তন ছাড়াই নতুন সড়ক পরিবহন আইনটি আগামী ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হচ্ছে। এতে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনার মামলায় শাস্তি বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে, এসব মামলা হবে জামিন অযোগ্য।

নতুন আইনে শুরু থেকে আপত্তি জানিয়ে আসা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন আইন কার্যকরের আগের দিন বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে সংশোধনের কিছু প্রস্তাব দেয়।

শাজাহান খান বলেন, ‌‘এখনও বিধি প্রণয়ন করা হয়নি। বিধি প্রণয়ন ব্যতীত আইন প্রয়োগে জটিলতার অবসান হবে কীভাবে?’

আইন কঠোর করলে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা কমবে বলে যারা মনে করছেন, তাদের সঙ্গে ভিন্নমত জানান তিনি।

‘চালক বা শ্রমিককে সাজা বা ফাঁসি দিলে দুর্ঘটনা বন্ধ হবে, এমন অলীক কল্পনা যারা করেন, তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। সব দেশে আইন আছে, কেউ কাউকে হত্যা করলে তার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। এ কঠিন আইন থাকার পরও কি হত্যাকাণ্ড বন্ধ হয়ে গেছে?

‘তাদের মনে রাখতে হবে, দুর্ঘটনায় মৃত্যু হত্যাকাণ্ড নয়। দুর্ঘটনা দুর্ঘটনাই। দুর্ঘটনায় শুধু যাত্রী বা পথচারী নিহত হয় না, চালক বা শ্রমিকও নিহত হন। চালক বা শ্রমিকের কারণে যদি দুর্ঘটনা ঘটে তার দায়ভার চালক ও শ্রমিকের। আইন অনুযায়ী তাদের সাজা হবে। অন্য কারণে দুর্ঘটনার দায়ভার তারা নেবে কেন?’

‘রেলপথের ওপর মোবাইল ফোন কানে দিয়ে কথা বলতে গিয়ে আনমনা কেউ ট্রেনের চাকায় কাটা পড়লে তার জন্য কি ট্রেনের ড্রাইভারকে দায়ী করা হয়?’ বলেন তিনি।

দুর্ঘটনা নিয়ে উচ্চ আদালতের কয়েকটি আদেশের প্রসঙ্গ টেনে শাজাহান খান বলেন, ‘সম্প্রতি দুর্ঘটনার কারণে দেশের সর্বোচ্চ আদালত পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের রায় দিয়েছেন। ঢালাওভাবে এ ধরনের রায় কোনো দেশে নেই। এতে মালিক-শ্রমিক গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে আছেন।’

তিনি বলেন, ‘এসব রায় সড়কে কতটা শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবে, তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। শুধু শাস্তির ভয় দেখিয়ে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব না। বরং সড়ক আইন যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদের প্রস্তাবিত ১১১টি সুপারিশের বাস্তবায়ন জরুরি।’

ফেডারেশনের দাবির মধ্যে রয়েছে- সড়ক দুর্ঘটনার মামলাকে জামিনযোগ্য করতে হবে, তদন্ত ছাড়া দুর্ঘটনার মামলা ৩০২ ধারায় (হত্যাকাণ্ডের ধারা) দায়ের করা যাবে না, নিরপেক্ষতার স্বার্থে পুলিশ ও দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের যৌথ উদ্যোগে মামলার তদন্ত করতে হবে; লোডিং পয়েন্টে ওভারলোড চেক করার ব্যবস্থা করতে হবে।

শাজাহান খান বলেন, মালিক ও শ্রমিকরা আইনের কয়েকটি বিধান সংশোধনের প্রস্তাব করেন। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে কিছু গ্রহণ করা হয়, আবার কিছু গ্রহণ করা হয়নি। আইনটি পাস হওয়ার পর আমরা দেখতে পাই, আইনের মধ্যে কিছু অসামঞ্জস্য রয়ে গেছে। আমরা বিষয়গুলো সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের দৃষ্টিতে আনি।

‘তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি কমিটি করে দেন। কমিটি কয়েক দফা বৈঠক করে আমাদের কয়েকটি প্রস্তাবের যৌক্তিকতার সঙ্গে একমত পোষণ করেন।’

প্রজ্ঞাপন জারির আগে ওই উপকমিটির এক বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আইন সংশোধনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তবে তা নাকচ করে দেন সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

শাজাহান খান বলেন, এই আইনে মালিক-শ্রমিকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনেকগুলো ধারা রয়েছে। তবে কিছু ধারা সম্পর্কে আমাদের আপত্তির জায়গাটা বিবেচনা করা হোক, এটাই আমাদের দাবি।

বর্তমান সরকার আইনটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন। প্রশ্ন হল, এখনও বিধি প্রণয়ন করা হয়নি। বিধি প্রণয়ন ব্যতীত আইন প্রয়োগে জটিলতার অবসান হবে কীভাবে?

নতুন আইনে আপত্তি জানালেও কোনো কর্মসূচি দেয়নি সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন।

শাজহান খান বলেন, আইন বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতা অবলোকন ও নিবিড় পর্যবেক্ষণের পর তারা কর্মসূচি দেবেন।