ওয়াক্ফ সম্পত্তি থেকে টয়লেট সবই কাউন্সিলর নাঈমের দখলে

ওয়াক্ফ সম্পত্তি থেকে টয়লেট সবই কাউন্সিলর নাঈমের দখলে

পাবলিক টয়লেট থেকে শুরু করে ভবন, মাদ্রাসা, জমি, ফুটপাত, এমনকি বর্জ্যবাণিজ্য পর্যন্ত সব তার একার কব্জায়। তিনি একজন কাউন্সিলর, অথচ রাজধানীর বিমানবন্দর, কাওলা, শিয়ালডাঙ্গা ও গাওয়াইরসহ আশপাশ এলাকার মানুষের কাছে সেই তিনিই মূর্তিমান আতঙ্ক। সবজি ও মাছের ছোট্ট ব্যবসার মাধ্যমে তার রোজগেরে জীবন শুরু হলেও বর্তমানে তিনি কাড়ি কাড়ি অর্থ আর বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক। দখলবাজি করে তিনি এ অবস্থায় পৌঁছেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের রাষ্ট্রীয় বাসভবনের নামে নিজের বাড়ির নাম রেখেছেন ‘হোয়াইট হাউস’। জবরদখল করা জমিতে প্রাসাদোপম এ ভবন গড়ে তুলেছেন তিনি। অথচ

সেই জমির প্রকৃত মালিক মিনারা বেগম এখন দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন আর অশ্রু ফেলছেন। এমন আরও অনেক অভিযোগ রয়েছে যার বিরুদ্ধে, তিনি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, নাম আনিসুর রহমান নাঈম। তার নাঈম খলিফা নামে একটি বাহিনী গড়ে উঠেছে, এমন অভিযোগ তুলে এ বাহিনীর অত্যাচার থেকে নিষ্কৃৃতি পেতে গতকাল বুধবার বিমানবন্দরের গোলচত্বরে অনুষ্ঠিত হয়েছে মানববন্ধন।

ডিএনসিসির নবগঠিত ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে স্বেচ্ছাসেবক লীগের দক্ষিণখান থানা শাখার সভাপতি আনিসুর রহমান নাঈম নির্বাচিত হয়েছেন মাত্র ছয় মাস আগে। স্থানীয় অনেকেরই অভিযোগ, এ ছয় মাসেই তিনি দখলবাণিজ্যে ছাড়িয়ে গেছেন রাজধানীর অন্য সব দখলবাজ কাউন্সিলরকে। গতকাল নাঈমের বিরুদ্ধে মানববন্ধনে শত শত স্থানীয় বাসিন্দা অংশ নেন। তাদের মধ্যে দুই শতাধিকই বলেছেন, তারা নাঈমের অত্যাচার, নির্যাতন ও দখলবাণিজ্যের শিকার। এর মধ্যে ১০ থেকে ১৫ জন তুলে ধরেন কাউন্সিলর নাঈমের দখল আর নির্যাতনের কথা।

জানা যায়, টয়লেটটি ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব মূলত নজরুল ইসলাম মোহন নামের একজনের। কিন্তু এটি দখল করে নিয়েছেন নাঈম আর পরিচালনায় রয়েছেন তার অনুসারী তাজুল। প্রতিদিন ওই টয়লেট থেকে বিক্রি করা হয় হাজার হাজার লিটার পানি। অসংখ্য মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য অনেক গাড়ি ধোয়ামোছার কাজও চলে এ টয়লেটের পানি থেকে। এ টয়লেটটির ব্যবস্থাপনায় সম্পৃক্ত একাধিক ব্যক্তি জানান, এখান থেকে দৈনিক লাখখানেক টাকা আয় হয়। তবে সিটি করপোরেশন পায় শুধু টয়লেট ব্যবহারকারীদের টাকার অংশ। এ ছাড়া সিএনজি স্টেশন, অবৈধ বাজার, ফুটপাতসহ বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা দেখার জন্য নাঈমের রয়েছে পৃথক সিন্ডিকেট।

অভিযোগ রয়েছে, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা স্কুল ও কলেজের পাশের মাঠে তাঁতমেলার নামে অনেক দিন ধরেই জুয়ার আসর চালিয়ে যাচ্ছিলেন নাঈম। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর গা বাঁচাতে সেই জুয়ার আখড়া বন্ধ করে দিয়ে সেখানে মাছ, সবজি ও ফলের বাজার বসানো হয়েছে। অতিসম্প্রতি ফের মেলার নামে সেই জুয়ার আসর শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

মানববন্ধনে অভিযোগ করা হয়, কাওলা এলাকায় আশিয়ান সিটির প্রবেশমুখের কাছে প্রায় পাঁচ বিঘা জমি দখল করেছেন নাঈম ও তার লোকজন। সেখানে অবৈধ বাস টার্মিনাল ও রিকশা গ্যারেজ করে ভাড়া দওয়া হয়েছে।

ভুক্তভোগী মিনারা বেগম বলেন, তার জমি দখল করে গড়ে সেখানে বাড়ি করেছেন কাউন্সিলর নাঈম। অনেকের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন তিনি, এর প্রতিকার পাননি।

ইঞ্জিনিয়ার নাজমুল আজম প্রিন্স বলেন, বাবুস সালাম ওয়াকফ এস্টেট মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় এয়ারপোর্ট রেস্তোরাঁ ও তৃতীয় তলায় দাওয়াত রেস্ট হাউস তার নিয়ন্ত্রণে রেখেছে দীর্ঘদিন ধরে। আমি বহুবার চেষ্টা করেও সেটি উদ্ধার করতে পারিনি।

মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ড. হারুনুর রশিদ, মো. মজিবুর রহমান, মনোয়ারা বেগম, এমএ ছাদেক, ডা. রোজিনা আক্তারসহ অসংখ্য ভুক্তভোগী। তাদের প্রত্যেকের জমি এবং কারও কারও বাড়ি পর্যন্ত দখল করে নেওয়ার অভিযোগ তোলা হয়েছে কাউন্সিলর নাঈমের বিরুদ্ধে।

এসব অভিযোগ নিয়ে আনিসুর রহমান নাঈমের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, যারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে তারা সবাই দুষ্কৃতকারী। আমি কোনোরকম দখলবাজিতে যুক্ত নই; কারও জমি দখল করে বাড়ি করিনি। পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত জমিতেই আমি আমার বাড়ি করেছি। আমাদের যে ব্যবসাবাণিজ্য ও সম্পদ রয়েছে, এগুলোর সবই পৈতৃক; বাবা-চাচাদের। আমি দখল বা অপরাধ করে কোনো সম্পদ অর্জন করিনি। মার্কেট দখলের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, মার্কেটটি এখনো ওয়াকফ এস্টেট পরিচালিত। আমি অন্যদের মতোই ভাড়া দিই। কারও কাছ থেকে একটি টাকাও অবৈধভাবে নিইনি।

এমজে/