বিভাগীয় শাস্তি দিয়েই দায় সারে সিআইডি

পুলিশ যখন ভাড়াটে অপহরণকারী

পুলিশ যখন ভাড়াটে অপহরণকারী

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মতো জায়গায় কঠোর নিরাপত্তা বলয় ভেঙে দুবাই ফেরত এক যাত্রীকে অপহরণ করতে যান চারজন। তবে যাত্রীর ধস্তাধস্তিতে সব ভেস্তে যায়। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে আটক হন সবাই।

তবে অপরহণচক্রে জড়িত একজনের বক্তব্যে নড়েচড়ে বসেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা। কারণ আটক একজন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সদস্য। এই পুলিশ সদস্য অপহরণকাণ্ডে ভাড়ায় খাটতে এসেছিলেন। সঙ্গে ছিলেন আরো তিন পুলিশ সদস্য। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেবল বিভাগীয় শাস্তি দিয়েই দায় সারে সিআইডি।

জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১১ নভেম্বর দুবাই থেকে ফিরছিলেন মো. সামসুদ্দোহা নামে এক যাত্রী। এ সময় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার সময় তাকে আটক করেন পুলিশ সদস্যরা। টেনেহিঁচড়ে একটি গাড়িতে তোলারও চেষ্টা করেন। কিন্তু ওই ব্যক্তি ধস্তাধস্তি ও চিৎকার শুরু করেন।

তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন বিমানবন্দরে কর্মরত আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) কর্মকর্তারা এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। এ সময় যাত্রী সামসুদ্দোহা ও অপহরণকারী হাবিবুর রহমান, মো. আলমগীর শেখ ও সিআইডির এএসআই জহির রায়হানকে আটক করা হয়। এপিবিএন কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাদের। তখনই বেরিয়ে আসে ঘটনার বিস্তারিত।

৮ এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেনের জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা জানান, সামসুদ্দোহা দুবাই থেকে পায়ুপথে করে ১২ পিস স্বর্ণের বার নিয়ে আসেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী স্বর্ণ পাচারকারী গ্রুপের সদস্য হাবিবুর রহমান ও আলমগীর শেখ তাকে অপহরণের জন্য সিআইডির চার সদস্যকে ভাড়া করেন। তারা হলেন, এসআই মো. জুয়েল, এসআই রেজাউল করিম, এএসআই জহির রায়হান ও কনস্টেবল আবু জাফর হাওলাদার। তবে অপহরণের সময় ধস্তাধস্তি শুরু হলে এএসআই জহির রায়হান ছাড়া বাকি তিন পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।

সিসি ক্যামেরার ফুটেজেও অপহরণ চেষ্টার ঘটনা ধরা পড়ে। সামসুদ্দোহা, হাবিবুর রহমান ও আলমগীর শেখের বিরুদ্ধে স্বর্ণ পাচারের অভিযোগে বিমানবন্দর থানায় মামলা করা হয়। এ ঘটনায় বিমানবন্দরে তোলপাড় শুরু হলে তদন্তে নামে সিআইডি কর্তৃপক্ষ। এতে চার পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অপহরণকাণ্ডে যুক্ত থাকার সত্যতাও উঠে আসে। পরে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেই দায়িত্ব সারে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে এএসআই জহির রায়হানকে ৭ বছরের জন্য পদাবনমন করে কনস্টেবল, এসআই জুয়েল ও রেজাউলকে দুই বছরের জন্য এএসআই পদাবনমন এবং কনস্টেবল জাফরের পদোন্নতি ১০ বছরের জন্য রহিত করা হয়।

এ ঘটনায় ফৌজদারি অপরাধে যুক্ত থাকার প্রমাণ পাওয়ার পরও চার পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা আমাদের সময়কে বলেন, ‘অপহরণ অনেক বড় অপরাধ। এটা ধর্তব্য অপরাধ। এ ক্ষেত্রে বিভাগীয় শাস্তি যথেষ্ট নয়। প্রমাণ হয়ে থাকলে বিভাগীয় শাস্তি ও নিদেনপক্ষে চাকরিচ্যুতি হতে হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলাও হতে হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন বলেন, ‘স্বর্ণ চোরাচালানকারী দুটি গ্রুপের একপক্ষের হয়ে তারা (পুলিশ) মূলত এখানে ভাড়ায় খাটতে এসেছিলেন। আমরা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জিম্মায় সিআইডির সদস্যকে বুঝিয়ে দেই।’

অপহরণের চেষ্টার প্রমাণ মেলার পরও তাদের বিরুদ্ধে কেন ফৌজদারি অপরাধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলো না, এ প্রসঙ্গে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (উত্তর) ও অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা বলেন, ‘আমার দায়িত্ব ছিল তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়া। আমি সেটি করেছি। ব্যবস্থা কী হবে, সেটি প্রশাসন শাখার দায়িত্ব।’ তিনি এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। তবে এ বিষয়ে জানতে সিআইডি প্রধান চৌধুরী আবদুুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।

অপহরণের টার্গেট মো. সামসুদ্দোহা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ওই দিন তারা (পুলিশ সদস্য) কারও প্ররোচণায় আমাকে তুলে নিতে এসেছিল। আমি এক বছর জেল খেটে বর্তমানে জামিনে রয়েছি।’

অবশ্য বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, ২০১৮ সালে গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত মাত্র নয় মাসে ৪৭ বার বিভিন্ন দেশে গেছেন সামসুদ্দোহা। মূলত স্বর্ণ চোরাচালানের জন্যই তিনি বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেন বলেও জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। আমাদের সময়।