হলি আর্টিজানে হামলা : আসামি কারা, অভিযোগ কী

হলি আর্টিজানে হামলা : আসামি কারা, অভিযোগ কী

রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড বেকারিতে হামলায় জড়িত ২১ জনকে চিহ্নিত করলেও রায়ের অপেক্ষায় রয়েছেন আটজন। কারণ বাকিরা বিভিন্ন অভিযানে নিহত হয়েছেন। হলি আর্টিজানে হামলা চালিয়েছিলেন যে পাঁচ তরুণ, তারা সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযান ‘থান্ডারবোল্টে’ সেদিনই মারা পড়েছিলেন।

এদিকে রায়ের অপেক্ষায় থাকা আটজনের কেউ হলি আর্টিজান বেকারিতে সরাসরি হামলায় ছিলেন না। ওই হামলার পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ, অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহ এবং অর্থ জোগানে ভূমিকা রেখেছিলেন তারা।

আট আসামি হলেন-

জাহাঙ্গীর আলম

রাজীব গান্ধী, টাইগার, আদিল, সুভাষ নামে জঙ্গি সংগঠনটিতে তিনি পরিচিত ছিলেন বলে পুলিশের ভাষ্য। তার বাড়ি গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার পশ্চিম রাঘবপুরে। তাকে গ্রেপ্তার করা হয় ২০১৭ সালের ১৩ জানুয়ারি।

গুলশান হামলা ঘটাতে জাহাঙ্গীরের ‘গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা’ ছিল বলে মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়। হামলার পরিকল্পনায় অংশগ্রহণ থেকে শুরু করে প্রশিক্ষণ, অস্ত্র সংগ্রহ, হত্যাকাণ্ডে সক্রিয় সহায়তার অভিযোগ আনা হয়েছে জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে।

তবে আত্মপক্ষ সমর্থনে আদালতে দেওয়া বক্তব্যে জাহাঙ্গীর জঙ্গি সংগঠনে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করলেও গুলশান হামলায় যুক্ত ছিলেন না বলে দাবি করেন।

রাকিবুল হাসান রিগ্যান

দলে রাফিউল ইসলাম রাফি, রিপন, হাসান, অন্তর নামেও তিনি পরিচিত ছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। তার বাড়ি বগুড়া সদর উপজেলার ইসলামপুর পশ্চিমপাড়ায়।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, রিগেন নব্য জেএমবির প্রশিক্ষক ছিলেন, অর্থ লেনদেনের দায়িত্বও ছিল তার। নিষিদ্ধ সংগঠনের পদ গ্রহণ করে অর্থ গ্রহণ, হামলায় জড়িতদের প্রশিক্ষণ দিয়ে হত্যাকাণ্ড সংঘটনে সহায়তা ও প্ররোচিত করার অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে।

মিজানুর রহমান

দলে বড় মিজান নামে পরিচিত তিনি। বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের হাজারবিঘি চাঁনপুরে। ২০১৬ সালের ২ নভেম্বর ঢাকার দারুস সালাম এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন। গুলশান হামলায় ব্যবহৃত বিস্ফোরক সরবরাহে সহায়তা করে হত্যাকাণ্ড সংঘটনে ভূমিকা রাখার অভিযোগ আনা হয়েছে মিজানের বিরুদ্ধে।

তবে আত্মপক্ষ সমর্থনের সময় নিজেকে নির্দোষ দাবি করে মিজান আদালতে বলেছিলেন, তিনি একজন মাছ ব্যবসায়ী, শুধু নামের মিলের কারণে তাকে আসামি করা হয়েছে।

আব্দুস সবুর খান হাসান

সোহেল মাহফুজ, মুসাফির, জয়, নসুরুল্লাহ নামে সংগঠনে তিনি পরিচিত বলে পুলিশের ভাষ্য। বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালীর সাদিপুর কাবলিপাড়ায়। ২০১৭ সালের ৮ জুলাই গ্রেপ্তার হন। গুলশান হামলায় লোক, অস্ত্র, গ্রেনেড সরবরাহ করে হত্যাকাণ্ড সংঘটনের অভিযোগ আনা হয়েছে সবুর ওরফে সোহেল মাহফুজের বিরুদ্ধে।

আসলাম হোসেন সরদার

সংগঠনে র‌্যাশ, রাশেদ, মোহন, আবু জাররা নামে পরিচিত ছিলেন বলে পুলিশের ভাষ্য। বাড়ি রাজশাহীর পবার নওহাটা মথুরায়। ২০১৭ সালের ২৮ জুলাই গ্রেপ্তার হন। হামলাকারীদের প্রশিক্ষকের কাছে পৌঁছে দেওয়া এবং অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দেওয়া, ঘটনাস্থল রেকি, হামলার পরিকল্পনায় অংশ নিয়ে হত্যাকাণ্ডে প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে আসলামের বিরুদ্ধে।

হাদিসুর রহমান

সাগর, জুলফিকার, সাদ-বিন আবু ওয়াক্কাস, আবু আল বাঙ্গালী, আব্দুল্লাহ স্যার, আমজাদ, তৌফিক ইত্যাদি নামে সংগঠনে পরিচিত তিনি। বাড়ি জয়পুরহাট সদর উপজেলার কাদোয়া কয়রাপাড়া। ২০১৮ সালের ২১ মার্চ বগুড়ার শিবগঞ্জে গ্রেপ্তার হন। গুলশান হামলাকারীদের ঝিনাইদহে মেস ভাড়া করে আশ্রয় ও প্রশিক্ষণ দেওয়া, অর্থ লেনদেন, অস্ত্র-গ্রেনেড সরবরাহ করে হত্যাকাণ্ডে সহায়তার অভিযোগ আনা হয়েছে হাদিসুরের বিরুদ্ধে।

শরিফুল ইসলাম খালেদ

খালিদ, রাহাত, নাহিদ, আবু সুলাইমান নামে সংগঠনে পরিচিত ছিলেন বলে পুলিশের ভাষ্য। বাড়ি রাজশাহীর বাগমারার শ্রীপুরের খামারপাড়ায়। ২০১৯ সালের ২৫ জানুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জে গ্রেপ্তার হন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, হলি আর্টিজান বেকারিতেহামলার পরিকল্পনাকারীদের একজন শরিফুল। আত্মঘাতী হামলার জন্য জন্য তরুণদের তৈরির কথা তিনিই বলেছিলেন। গাইবান্ধায় যমুনার চরে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ শিবির চালাতেও তার ভূমিকা ছিল।

গুলশান হামলা সংঘটনে প্রশিক্ষণে সহায়তা এবং হামলা পরিকল্পনায় অংশ নেওয়া, হামলাকারীদের নির্দিষ্ট স্থানে পৌছে দেওয়াসহ নানাভাবে হত্যাকাণ্ডে প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে শরিফুলের বিরুদ্ধে।

মামুনুর রশিদ রিপন

রিপন নামে তিনি পরিচিত ছিলেন সংগঠনে। বাড়ি বগুড়ার নন্দীগ্রামের শেখের মাড়িয়ায়। গাজীপুরের বোর্ডবাজার থেকে ২০১৯ সালের ২০ জানুয়ারি গ্রেপ্তার হন। গুলশান হামলায় পরিল্পনার বৈঠকে অংশ নেওয়া এবং অস্ত্র সরবরাহের অভিযোগ করা হয়েছে রিপনের বিরুদ্ধে।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ১ জুলাই হলি আর্টিজানের ওই হামলায় ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২৩ জন নিহত হয়েছিলেন। ওই হামলার পর ৪ জুলাই রাতে গুলশান থানার এসআই রিপন কুমার দাস অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি মামলা করেন। এরপর ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই আটজন আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ূন কবির।

চার্জশিটে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর ‘অপারেশন থান্ডারবোল্টে’ নিহত পাঁচ হামলাকারী রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, মীর সামেহ মোবাশ্বের, নিবরাস ইসলাম, শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম পায়েল নিহত হওয়ায় তাদের নাম চার্জশিটে অব্যাহতির আবেদন করা হয়।

এ ছাড়া পরবর্তী সময়ে র‌্যাব-পুলিশের অভিযানে তামিম আহমেদ চৌধুরী, নুরুল ইসলাম মারজান, সারোয়ান জাহান মানিক, তানভীর কাদেরী, বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট, রায়হান কবির ওরফে তারেক, মেজর (অব) জাহিদুল ইসলাম ওরফে মুরাদ ও মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান নিহত হওয়ায় তাদের নামও চার্জশিটে অব্যাহতির আবেদন করা হয়।

একই বছর ২৬ নভেম্বর আদালত ৮ আসামির বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরু করেন। এক বছর শুনানির পর আজ বুধবার রায় হতে যাচ্ছে আলোচিত এই মামলার। কারাগারে থাকা এই আট আসামির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে হত্যার অপরাধ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে আইনে।

এমজে/