গোপন টেন্ডারে পণ্য না কিনে কয়েক কোটি টাকা লোপাট

গোপন টেন্ডারে পণ্য না কিনে কয়েক কোটি টাকা লোপাট

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের রেললাইনে পাথর সরবরাহ ও স্টেশন পরিষ্কারের নামে অর্থ লুটপাটের অভিযোগ তদন্তে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১৭ সালে বিভিন্ন স্থানে রেললাইনে সামান্য কিছু পাথর ফেলে এবং এক বছর ধরে ভিম ও ব্লিচিং পাউডার না কিনেই গোপনে টেন্ডারের মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে। এর বাইরে আরও কয়েকটি বিষয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে দুদক। দুদকের একটি সূত্র জানায়, এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করেছে দুদক। এখন সেগুলো নিয়ে চলছে অনুসন্ধান।

রেলওয়ে সূত্র মতে, পশ্চিমাঞ্চল সাবেক প্রধান প্রকৌশলী রমজান আলীর সময়ে ২০১৭ সালে রেললাইনে পাথর সরবরাহের নামে কয়েক কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ ওঠে। রেলের গতি বাড়ানোর নামে রমজান আলীর সময় প্রায় ৪০০ কোটি টাকার উন্নয়ন করা হয়। এর পর এই অঞ্চলের বিভিন্ন লাইনে ১০-৩০ কিলোমিটার হারে গতিও বাড়ানো হয়। কিন্তু বছরখানেক না যেতেই একের পর এক রেল দুর্ঘটনার পর রেল কর্তৃপক্ষ আবার গতি আগের অবস্থানে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়। এই অবস্থায় রেললাইন সংস্কারের নামে কোটি কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে কয়েকটি অনুসন্ধানী খবর প্রকাশ হয়।

রেলওয়ে সূত্র আরও জানায়, রেললাইন সংস্কারের পাশাপাশি গত কয়েক বছরে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের স্টেশনগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নের নামেও টেন্ডার আহ্বান করে সরকারি অর্থের

অপচয় করা হয়। অথচ রেলস্টেশনগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নের কাজে ব্লিচিং বা ভিম পাউডারসহ অন্য মালামাল কোনো অর্থবছরে কেনাই হয়নি। এ নিয়েও সম্প্রতি অভিযোগ ওঠে।

তবে বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী রমজান আলী বলেন, কাজ না করে বিল পরিশোধের কোনো সত্যতা নেই। পাথর সরবরাহ করার পরই টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। যারা ঠিকমতো পাথর সরবরাহ করেনি এমন ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও সুপারিশ করা হয়েছিল। তার বিলও আটকে দেওয়া হয়েছিল। তবে আমি চলে আসার পর সেই বিল পরিশোধ করা হয়েছে বলে শুনেছি। আমি কোনো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত হইনি।

রেলওয়ে সূত্র আরও জানায়, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের আওতায় সর্বমোট ২৩১টি স্টেশন আছে। এর মধ্যে ৯২টি বন্ধ হয়ে গেছে। আর ৫৮টি ক্ষয়িষ্ণু। এসব স্টেশনে কর্মকর্তাই তেমন নেই। তবে গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন এখনো রয়েছে প্রায় ৫০টির মতো। এই ৫০টির মধ্যে ১০টি স্টেশন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয় পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার আওতায়। বাকি ৪০টি স্টেশন রয়েছে প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তার নিয়ন্ত্রণাধীন ট্রাফিকের আওতায়। এসব স্টেশন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নের নামেই কয়েক বছর ধরে কয়েক কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে।

তবে সবচেয়ে বেশি লুটপাট হয়েছে গত ২০১৮-১৭ সালে। এই দুই বছরের মধ্যে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এএসএম এমতেয়াজের দপ্তরের মাধ্যমে কোনো ভিম লিকিউড বা ডিটারজেন্ট পাউডার কেনাই হয়নি। অল্প পরিমাণে কেনা হয়েছে ব্লিচিং পাউডার। সেগুলোও নিম্নমাণের। পাউডারের ড্রামের নিচে পানি জমে গেছে নিম্নমাণের কারণে। এভাবে সরকারি অর্থ লোপাট করা হয়েছে। সবেচেয়ে বেশি অর্থ লোপাট হয়েছে এই দপ্তরের মাধ্যমে ব্লিচিং ও ভিম পাউডার কেনার নামে।

অপরদিকে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তার আওতায় ট্রাফিক বিভাগের বাকি ৪০টি স্টেশন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হলেও কেনাকাটা করা হয় প্রধান সরাঞ্জম কর্মকর্তা বেলাল উদ্দিন সরকারের দপ্তর থেকেও। তার দপ্তরের মাধ্যমেও নামমাত্র কিছু ব্লিচিং পাউডার কিনে বেশিরভাগ টাকা লোপাট করেছেন ঠিকাদাররা। আর এসব অভিযোগ তদন্ত করছে দুদক।

তবে জানতে চাইলে প্রধান সরাঞ্জম কর্মকর্তা বেলাল উদ্দিন সরকার বলেন, ‘মাল সরবরাহ না করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার সুযোগ নেই। মাল বুঝে নিয়েই টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।’ অন্যদিকে প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এসএএম এমতেয়াজের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

দুদকের রাজশাহী অফিসের উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, রেলের পাথর সরবরাহসহ বেশকিছু অনিয়ম নিয়ে অনুসন্ধান চলছে। অনুসন্ধান শেষ হওয়ার পরই পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।

এমজে/