বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কে ৯০ কিলোমিটার যানজট!

বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কে ৯০ কিলোমিটার যানজট!

বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কে ৯০ কিলোমিটার সড়কজুড়ে ভয়াবহ যানজট দেখা দিয়েছে।

যানজটে শত শত যাত্রীবাহী কোচ, মালবোঝাই ট্রাক ও মাইক্রোবাসসহ অন্যান্য পরিবহন আটকা পড়েছে।

মঙ্গলবার রাত থেকে যানজট শুরু হলেও বুধবার গভীর রাত থেকে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা পর্যন্ত পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। হাইওয়ে, ট্রাফিক ও পুলিশ প্রশাসন পরিস্থিতি নিরসনের চেষ্টা চালাচ্ছে।

এ দিকে যানজটের আটকাপড়া পরিবহন যাত্রীরা তীব্র শীত, খাবার সংকটসহ প্রাকৃতিক কাজ সারা নিয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা বেশি বিপাকে পড়েছে।

বরযাত্রী গাড়িগুলো আটকা পড়ে তারা লগ্ন ভঙ্গের আশঙ্কায় রয়েছেন বর-কনের পরিবার।

যাত্রীবাহী কোচের চালক, যাত্রী ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের চলনবিলের হামকুড়িয়া ও মান্নাননগর এলাকায় মাত্র ৫০ মিটার রাস্তা সংস্কার কাজে ধীরগতির কারণে ওই যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া বগুড়া-ঢাকা মহাসড়কের রায়গঞ্জ উপজেলার ভূঁইয়াগাতিতে একটি ব্রিজ দেবে যাওয়ায় রংপুর,পঞ্চগড়, দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁসহ উত্তরের ১৬ জেলার সব পরিবহন নাটোর ঘুরে এই মহাসড়কে চলাচল শুরু করে। এতে করে যানজট পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

মহাসড়কে তীব্র যানজটের কারণ সম্পর্কে দায়িত্বরত নাটোর জেলা ট্রাফিক পুলিশের সার্জন মও. মশিউর রহমান জানান, বনপাড়া-হাটিকুমরুল সড়ক দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৬ জেলার পরিবহন চলাচল করে থাকে। সংস্কার কাজের জন্য বেশ কিছুদিন ধরে যানজট সয়ে বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কে এ সব পরিবহন চলাচল করছে।

তিনি জানান, বগুড়া-ঢাকা মহাসড়কের ভূঁইয়াগাতিতে ব্রিজ দেবে যাওয়ার কারণে রংপুর,পঞ্চগড়, দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁসহ উত্তরের ১৬ জেলার সব পরিবহন নাটোর ঘুরে এই মহাসড়কে চলাচল শুরু করেছে। এ কারণে যানজট পরিস্থিতি বেসামাল হয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি নিরসনে পুলিশকে বেগ পেতে হচ্ছে।

পরিবহনের চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘ যানজটের কারণে বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের বনপাড়া গোলচত্বর থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত যানজট দেখা দিয়েছে। পুলিশি কার্যক্রম সন্তোষজনক নয় বলেও অভিযোগ করেন তারা। যানজটের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার হাজিরহাটে আটকে থাকা শ্যামলী পরিবহনের যাত্রী মও. নজরুল ইসলাম, আবিদুর রহমানসহ পাঁচজন যাত্রী বলেন, তারা বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে পঞ্চগড় থেকে গাড়িতে উঠেন। মাঝ রাতে বগুড়া ছেড়ে ভূঁইয়াগাতি পর্যন্ত বাসটি এসেছিল। কিন্তু সেখানকার ব্রিজটি দেবে যাওয়ায় প্রায় ১৫০ কিলোমিটার পথ ঘুরে নাটোর হয়ে সেখানে আটকে পড়েছেন।

প্রায় ৫ ঘণ্টা সেখানে আটকে রয়েছেন ওই কয়েক বাসের যাত্রীরা। তাদের সঙ্গে থাকা কমপক্ষে ১০ জন নারী ও শিশুকে নিয়ে দুর্ভোগে রয়েছেন। তাদের মতো অসংখ্য কোচের যাত্রী এমন পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন।

যাত্রীবাহী কোচের পাশাপাশি কাঁচামালবাহী ট্রাকগুলো আটকা পড়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকায় ট্রাকে থাকা কাঁচামাল নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এতে কাঁচামালের মহাজনরা আর্থিক ক্ষতিতে পড়বেন বলে তারা জানান।

এ দিকে বুধবার ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা কয়েকটি কোচের চালকরা জানান, বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত তারা সহজে এলেই সেতুতে এ পাশে এসে যানজটে আটকা পড়েন। টানা প্রায় ৬ ঘণ্টা দুর্ভোগ সয়ে তারা গুরুদাসপুরের নয়াবাজার এসে পৌঁছেন।

তাদের ভাষ্যমতে সেতু থেকে গুরুদাসপুর পর্যন্ত হাজার হাজার গাড়ি সড়কটির উভয় পাশে লাইন ধরে আটক রয়েছে। পুলিশের তৎপরতা নিয়েও অভিযোগ করেন এ সব চালক।

সিরাজগঞ্জ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মও. আশরাফুল ইসলাম বলেন, মাছ পরিবহনের গাড়ির পানি পড়ে মহাসড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সংস্কার কাজ শুরু হওয়ায় যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। ঢালাইয়ের মাধ্যমে রাস্তা সংস্কার করার কারণে একটু সময় লাগছে। দ্রুতই তা নিরসন হবে।

এমজে/