রেলের ৩ বছরের প্রকল্প ৮ বছরেও হয়নি

রেলের ৩ বছরের প্রকল্প ৮ বছরেও হয়নি

একের পর এক প্রকল্প কমবেশি বাস্তবায়িত হলেও রেলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটি ঝুলে আছে ৮ বছর ধরে। প্রকল্পটি নিয়ে নানা পর্যায়ে অবহেলার অভিযোগও রয়েছে।

৩ বছরে বাস্তবায়নের টার্গেট নিয়ে ঢাকা-টঙ্গী ৩য় ও ৪র্থ প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়। এটি বাস্তবায়িত হলে বদলে যাবে রেল। ৩ থেকে ৫ মিনিট অন্তর ট্রেন কমলাপুর রেলস্টেশন ছাড়া ও ঢোকার পরিকল্পনা নিয়ে প্রকল্পটি হাতে নেয়া হলেও এখনও তা অধরাই রয়ে গেছে।

কবে শেষ হবে সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো বক্তব্য নেই। তবে বলা হচ্ছে, ২০২৩ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। অথচ এই প্রকল্প সামনে রেখে ট্রেনের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে অনেক।

কিন্তু নতুন ওইসব ট্রেন যে পথ দিয়ে রাজধানীতে ঢুকবে এবং রাজধানী থেকে বেরোবে সেই কাজই আটকে আছে ৮ বছর। ফলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রায় প্রতিটি ট্রেনকে রাজধানীতে ঢোকার সময় লাইন ক্লিয়ারের জন্য টঙ্গী ও জয়দেবপুরে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।

সূত্র বলছে, ৮৪৮ কোটি ৬০ লাখ টাকার প্রকল্পটি ২০১২ সালে একনেক সভায় অনুমোদন পায়। ২০১৫ সালের জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। এতে ভারতের ঋণ ধরা হয়েছিল ৬৯৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা।

বাকি ১৫২ কোটি ৭০ লাখ টাকা সরকারের তহবিল থেকে সরবরাহের কথা। এটি বাস্তবায়ন হলে টঙ্গী থেকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত বিদ্যমান রেললাইনের সঙ্গে কোথাও ৪টি আবার কোথাও ৩টি লাইন যুক্ত হবে। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে থাকা ৭টি প্লাটফর্ম তথা ৭টি লাইনের সঙ্গে আরও প্রায় ১০টি প্লাটফর্ম ও লাইন তৈরি হবে। বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে আরও ৬টি প্লাটফর্ম বৃদ্ধি করার মধ্য দিয়ে এটিও অত্যাধুনিক একটি স্টেশনের রূপ নেবে। কিন্তু প্রকল্পটি বাস্তবায়ন না হওয়ায় পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চল থেকে আসা ট্রেনগুলোকে টঙ্গী আউটারে দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।

জানতে চাইলে রেলপথ সচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন জানান, রেলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লাইন হচ্ছে টঙ্গী থেকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত লাইনটি। কারণ দুই অঞ্চল থেকে যেসব ট্রেন ঢাকা আসবে- সেগুলো টঙ্গী আউটারে এসে একটি লাইনে প্রবেশ করতে থাকে। প্রায় ৮ বছর আগে নেয়া এ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে- তবে যথাসময়ের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে, নিশ্চয়ই সব উন্নয়ন প্রকল্প তথা নতুন করে চালু হওয়া ট্রেনগুলো চলাচলে সুফল পাওয়া যেত। সিডিউল বিপর্যয় কমে আসত। তিনি বলেন, টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত ডাবল লাইনের কাজ পুরোদমে চলছে।

আগামী জুনের মধ্যেই এ প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হবে। তবে সবার আগে ৩য়-৪র্থ লাইনটির কাজ সমাপ্ত হলে রেলে আমূল পরিবর্তন আসত। এ প্রকল্পের আওতায় কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন দুটি অত্যাধুনিক করা হলে বহুগুণে বাড়বে প্লাটফর্ম।

রেলওয়ে পরিকল্পনা ও অর্থনীতি বিভাগ সূত্র বলছে, বর্তমানে ৩৮৪টি ট্রেন চলাচল করছে। এর অধিকাংশই ঢাকা থেকে ছাড়ছে। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে মাত্র ৭টি প্লাটফর্মে ৭টি লাইন আছে। আরও অন্তত ১৫টি লাইন প্রয়োজন।

স্টেশন ঘিরে জায়গা থাকলেও শুধু পরিকল্পনার অভাব ও দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের উদ্যোগের অভাবে প্রকল্প নেয়া যাচ্ছে না। অর্থনীতি বিভাগে এক কর্মকর্তা জানান, টঙ্গী-ভৈরব ডাবল লাইনের কাজ শেষ হচ্ছে। টঙ্গী-জয়দেবপুর ডাবল লাইনের কাজও আগামী জুনের মধ্যে শেষ হবে।

এছাড়া পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চল রেলে প্রায় ৩৮১ কিলোমিটার নতুন রেলপথও নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টঙ্গী-ঢাকা ৩য় ও ৪র্থ রেললাইন প্রকল্প এখনও বাস্তবায়ন না হওয়ায় যাত্রীসেবা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। অর্থনৈতিকভাবেও লোকসান হচ্ছে রেলের।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিটের আওতায় এই প্রকল্পটিসহ টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ২০১৮ সালের ২৪ জুলাই ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়। গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রকল্পের ভৌত কাজের উদ্বোধন করেন। বর্তমানে ভৌত কাজে অগ্রগতি প্রায় ২৫ শতাংশ।

প্রকল্প পরিচালক মো. শহীদুল ইসলাম জানান, ভারতীয় এলওসির আওতায় প্রকল্পটির মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু হয়ে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি। ইতিমধ্যেই ২৫ শতাংশ ভৌত কাজ হয়েছে। ভারতীয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান অ্যাফকন্স এবং কল্পতরু পাওয়ার ট্রান্সমিশন লিমিটেড (কেপিটিএল) নামে দুটি প্রতিষ্ঠান নির্মাণ কাজ করছেন। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ রাজধানীতে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের সঙ্গে সমন্বয় রেখে প্রকল্পের কাজ করায় কাজের গতি কমেছে। কিছু সমস্যা দেখা দিচ্ছে, তা দ্রুত সমাধান হলে গতিও বাড়বে। ২০২৩ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ায় ব্যয়ও বেড়েছে। ব্যয় এখন ১ হাজার ১০৬ কোটিতে ঠেকেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা রেলওয়ে বিভাগীয় এক কর্মকর্তা জানান, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লাইন হচ্ছে টঙ্গী থেকে কমলাপুর স্টেশন পর্যন্ত লাইনটি। টঙ্গী-জয়দেবপুর ডাবল লাইন নির্মাণের আগে টঙ্গী-ঢাকা ৩য় ও ৪র্থ লাইন নির্মাণ জরুরি ছিল।

এ লাইনের কাজ আগে শেষ হলে টঙ্গী আউটারে ট্রেন দাঁড় করিয়ে রাখার প্রয়োজন ছিল না। দিন দিন ট্রেন বাড়ার সঙ্গে বাড়ছে সমস্যাও। বাড়ছে সিডিউল বিপর্যয়ও। প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়ন হলে ঢাকা-টঙ্গী, টঙ্গী-জয়দেবপুর, টঙ্গী-নরসিংদী লাইনে অন্তত ৩০টি কমিউটার ট্রেন চালানো যেত।

রেলওয়ে মহাপরিচালক শাসছুজ্জামান জানান, প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই। এটি হলে রেলের সেবা বাড়ানোর সঙ্গে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো ও সিডিউল অনুযায়ী ট্রেন চালানো সম্ভব হতো।

টঙ্গী-ঢাকা রেলপথে পর্যাপ্ত লাইন না থাকার কারণে যে সমস্যাটি হচ্ছে তা দীর্ঘদিনের। পর্যাপ্ত লাইন না থাকায়, পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চল থেকে আসা ট্রেনগুলো জটলা বাঁধে টঙ্গীর কাছে এসে। আমরা আশা করছি, ভারতীয় এলওসি’র আওতায় গ্রহণ করা এ প্রকল্পটি যথাসময়ের মধ্যেই সমাপ্ত হবে। এজন্য আমরা সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করছি।সূত্র : যুগান্তর

এমজে/