যাচাই না করে বেক্কলের মতো কাম করছি, বোকামি হয়েছে: মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী

যাচাই না করে বেক্কলের মতো কাম করছি, বোকামি হয়েছে: মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী

বহুল আলোচিত রাজাকারদের তালিকা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘রাজাকারের তালিকা যা পাইছিলাম, যাচাই না কইরা বেক্কলের মতো কাম কইরা ফেলছি, এটা বোকামি হয়েছে। আমি দুঃখিত।’

বৃহস্পতিবার নওগাঁ সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন আ ক ম মোজাম্মেল হক। জেলার ১১টি উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের উদ্বোধন ফলক উন্মোচন শেষে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্যে দেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী।

আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমি আন্তরিকভাবে দুঃখপ্রকাশ করেছি। আমার নাম যদি রাজাকারের তালিকায় আসত, আমি যে কষ্টটুকু পেতাম আমার কোনো সহকর্মী হওয়াতে ঠিক একইভাবে কষ্ট পেয়েছি। একটা বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম রাজাকারের তালিকায় আসবে এটা দুঃখজনক। আমি দুঃখ পেয়েছি। ক্ষমা চেয়েছি। তার মানে এই না তালিকা হবে না। তারা যদি মনে করে থাকেন যে হুংকার দিলেই আমরা পিছিয়ে যাব, পাক বাহিনীকে মোকাবিলা করেছি। আর আপনারা পরাজিত শক্তি। আপনাদের মোকাবিলা করতে পারব না, ভাববেন না। ওয়াদা করছি রাজাকারদের তালিকা হবে, হবে এবং হবে ইনশা আল্লাহ। তবে যাতে নির্ভুল হয়, সেজন্য আমার কমিটি নাই, আমি বিপদে আছি। যদি মুক্তিযোদ্ধা কমিটি থাকত তাহলে আরো সহজ হতো। এখন চাপের ঠেলায় একটু নীরব আছি। তুফান উঠছে, তুফানটা একটু থামুক। তারপর এই তালিকা করব। মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে তালিকা করব।উপজেলাভিত্তিক করব। ওই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের রক্ষিত তালিকা আর প্রকাশ করব না।’

মন্ত্রী আরো বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট, সঠিক ইতিহাস এবং সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসমূহ সংরক্ষণ করে আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে না পারলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে যাবে। আর ইতিহাস মুছে গেলে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি লাভবান হবে। তারা জয়ী হবে। দেশের স্বাধীনতা ভুলুণ্ঠিত হবে। তাই মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বর্তমান সরকার সারা দেশের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি, বড় বড় যুদ্ধের স্থানসমূহ, গণহত্যা এবং বধ্যভুমিসমূহে একই ডিজাইনে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।’

বর্তমান সরকার কর্তৃক দেওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সরকারের দেওয়া সর্বোচ্চ মর্যাদার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের সন্মানী ভাতা আরো বৃদ্ধি করা, বিজয় দিবস ভাতা এবং উৎসবভাতা প্রদানের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। তা অবিলম্বে বাস্তবায়িত হবে।’

মন্ত্রী দেশের ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার ৪৮ বছরে মাত্র ১৯ বছর ক্ষমতায় রয়েছে। এই ১৯ বছরে দেশের শতকরা ৮০ ভাগ উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। অথচ বিএনপি-জামায়াত জোট ও অন্যরা ৩০ বছর এ দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল। তারা এই দীর্ঘ ৩০ বছরে মাত্র ২০ ভাগ উন্নয়ন সাধন করেছে। মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট এবং মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে আগামী প্রজন্মের মধ্যে সম্যক ধারণা দিতে আগামী বিসিএস পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের মধ্যে প্রশ্নপত্র তৈরি করা হবে। এর মধ্যে ৫০ নম্বর নির্ধারিত থাকবে ১৯৭১ সালে সংঘটিত ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে।’

নওগাঁর জেলা প্রশাসক হারুন অর রশীদের সভাপতিত্বে আয়োজিত উদ্ধোধনী ও জেলার মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, জাতীয় সংসদের বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি শহিদুজ্জামান সরকার, সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দিন তরফদার, পুলিশ সুপার প্রকৌশলী আবদুল মান্নান মিয়া, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. আব্দুল হাকিম এবং নওগাঁ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার হারুন-অর-রশীদ।