লাখো মুসল্লি আদায় করবে জুমার নামাজ

বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু

বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু

৫৫তম বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব টঙ্গী তুরাগ নদের তীরে ইজতেমা ময়দানে শুরু হয়েছে। আজ শুক্রবার ফজরের নামাজের পর আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের আনুষ্ঠানিকতা। ইজতেমা উপলক্ষ্যে তুরাগ তীরে জমায়েত হয়েছেন লাখো মুসল্লি। ইজতেমার মূল বয়ান মঞ্চ থেকে আগত মুসল্লিদের উদ্দেশে ইসলামি বিধানের ওপর দিক নির্দেশনামূলক গুরুত্বপূর্ণ বয়ান রাখছেন জ্যেষ্ঠ মুরব্বিরা।

গতকাল বৃহস্পতিবার বাদ আসর থেকেই শুরু হয়েছে প্রাক প্রস্তুতি বয়ান। কনকনে শীত উপেক্ষা করে মুসল্লিরা এসেছেন ময়দানে। আগামী রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের ২০২০ সালের বিশ্ব ইজতেমা।

দ্বিতীয় পর্বে অংশ নিতে মাওলানা সা’দ কান্ধলভী মনোনীত দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজের ৩২ সদস্যের জামাত এরমধ্যে ময়দানে এসে পৌঁছেছে।

এ জামাতের নেতৃত্বে রয়েছেন শূরা সদস্য মাওলানা আবদুস সাত্তার। এ জামাতকে অভ্যর্থনা জানান বাংলাদেশের শূরা সদস্য সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম ও মুফতি ইজাহার আহমেদ। এদিন ইজতেমার বিভিন্ন দায়িত্বে নিয়োজিতদের উদ্দেশে বিশেষ বয়ান (নজমের বয়ান) করেন ভারতের মাওলানা মুফতি রিয়াজুর রহমান।

এ ছাড়া বিভিন্ন দায়িত্ব সম্পাদনের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন কমিটি করা হয়েছে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, দ্বিতীয় পর্বেও প্রথম পর্বের মতো নিরাপত্তাব্যবস্থায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় আট হাজার সদস্য নিয়োজিত থাকবেন।

ইন্দোনেশিয়া থেকে আসা মুসল্লি মো. সামসুল আরেফিন জানান, প্রথম চিল্লা (৪০ দিন) বাংলাদেশ ও দ্বিতীয় চিল্লা ভারতে শেষ করে ইজতেমায় এসেছি। আখেরি মোনাজাতের পর আবার তৃতীয় চিল্লায় দাওয়াতি কাজে বেরিয়ে যাব। আল্লাহকে রাজি-খুশি করতে পারলে জিন্দেগি ও আখেরাত সুন্দর হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

আয়োজক কমিটির অন্যতম সদস্য প্রকৌশলী শাহ মো. মুহিব্ল্লুাহ জানান, ময়দানের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। তাবলিগ জামাতের স্বেচ্ছাসেবীদের প্রস্তুতি ছাড়াও ডেসকো, তিতাস, ওয়াসাসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সেবাদানকারী সংস্থাগুলো তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে মাঠ প্রস্তুতি সম্পন্ন করছেন।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সরকার মুসল্লিদের সুবিধার্থে ইজতেমা মাঠে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। ১৩টি গভীর নলকূপের মাধ্যমে দ্বিতীয় পর্বেও প্রায় সাড়ে তিন কোটি গ্যালন খাবার পানি ও ওজু-গোসলের পানি সরবরাহ করা হবে। আট হাজারের বেশি মুসল্লি একসঙ্গে টয়লেট ব্যবহার করতে পারবে। দেশ-বিদেশের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা এ পর্বেও সিটি করপোরেশনের সবধরনের সুযোগ-সুবিধা পাবে।
খিত্তাওয়ারি মুসল্লিদের অবস্থান

মিরপুর (খিত্তা-১, ২), সাভার (৩-৪), টঙ্গী (৫), উত্তরা (৬ ও ৭), কাকরাইল (৮-১৪), মোহাম্মদপুর (১৫), যাত্রাবাড়ী (১৬), ডেমড়া (১৭), কেরানীগঞ্জ (১৮-১৯), ধামরাই (২০), নবাবগঞ্জ/দোহার (২১), মানিকগঞ্জ (২২), টাঙ্গাইল (২৩), নারায়ণগঞ্জ (২৪), নেত্রকোনা (২৫), জামালপুর (২৬), ময়মনসিংহ (২৭), কিশোরগঞ্জ (২৮), শেরপুর (২৯), গাজীপুর (৩০), বগুড়া (৩১), নরসিংদী (৩২), নওগাঁ (৩৩), রাজশাহী (৩৪), নাটোর (৩৫), সিলেট (৩৮), সুনামগঞ্জ (৩৯), হবিগঞ্জ (৪০), মৌলভীবাজার (৪১), চাঁপাইনবাবঞ্জ (৪২), জয়পুরহাট (৪৩), মুন্সীগঞ্জ (৪৪), মাদারীপুর (৪৫), শরীয়তপুর (৪৬), রাজবাড়ী (৪৭), ফরিদপুর (৪৮), গোপালগঞ্জ (৪৯), পঞ্চগড় (৫০), নীলফামারী (৫১), লালমনিরহাট (৫২), গাইবান্ধা (৫৩), কুড়িগ্রাম (৫৪), ঠাকুরগাঁও (৫৫), রংপুর (৫৬), দিনাজপুর (৫৭), ব্রাহ্মণবাড়িয়া (৫৮), চাঁদপুর (৫৯), খাগড়াছড়ি (৬০), ফেনী (৬১), রাঙামাটি (৬২), বান্দরবান (৬৩), লক্ষ্মীপুর (৬৪), নোয়াখালী (৬৫), কুমিল্লা (৬৬), কক্সবাজার (৬৭), চট্টগ্রাম (৬৮), চুয়াডাঙ্গা (৬৯), কুষ্টিয়া (৭০), খুলনা (৭১), যশোর (৭২), ঝালকাঠি (৭৩), পটুয়াখালী (৭৪), বরিশাল (৭৫), ভোলা (৭৬), বরগুনা (৭৭) ও পিরোজপুর (৭৮)। তুরাগ নদের পশ্চিমপাড়ে অবস্থিত খিত্তাগুলো হলো- পাবনা (৩৬), সিরাজগঞ্জ (৩৭), মাগুড়া (৭৯), সাতক্ষীরা (৮০), নড়াইল (৮১), ঝিনাইদহ (৮২), বাগেরহাট (৮৩) ও মেহেরপুর (৮৪)। এ ছাড়াৱ ৮৫ ও ৮৬ নম্বর খিত্তা ও তুরাগ নদের পশ্চিম পাড়ে ৮৭ নং খিত্তা সংরক্ষিত খিত্তা হিসেবে রাখা হয়েছে।

গত রবিবার প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।মোনাজাত শেষে মুসল্লিরা মাঠ ছেড়ে চলে গেছে। গত মঙ্গলবারই মাঠের দায়িত্ব বুঝে নেয় স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন।