ঢাকার দুই সিটি’র ভোটের হার কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে

ঢাকার দুই সিটি’র ভোটের হার কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ভোটের হার চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে সবার কপালে। হতাশ নির্বাচন কমিশন। রাজনৈতিক দল, প্রার্থী সবাই অখুশি ভোটার উপস্থিতি নিয়ে। ভোটের চিত্র দেখে শঙ্কিত নির্বাচন বিশ্লেষক ও দেশের বিশিষ্টজনরা। তারা বলছেন, ভোটের এই নিম্নগতি চলতে থাকলে এক সময় এটি উদ্বেগজনক পর্যায়ে চলে যেতে পারে।

পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বিগত নির্বাচনগুলোর তুলনায় ধারাবাহিকভাবে ভোটের হার কমছে। পাঁচ বছর আগে ২০১৫ সালের ২৮শে এপ্রিল ঢাকার দুই সিটি ও চট্টগ্রাম সিটিতে একদিনেই ভোট হয়েছিল। তাতে ব্যালট পেপারে গড়ে ভোট পড়েছিল ৪৩ শতাংশ।

সে সময় ঢাকা উত্তর সিটিতে ভোটার উপস্থিতির হার ছিল ৩৭ শতাংশ ও দক্ষিণ সিটিতে ৪৮ শতাংশ এবং চট্টগ্রামে ভোট পড়েছিল ৪৭ শতাংশ। আর ২০১৯ সালে ঢাকা উত্তরের মেয়র পদের উপ নির্বাচনে ভোট পড়েছিলো ৩১ শতাংশ। ওই নির্বাচনে এক বছরের জন্য মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন আতিকুল ইসলাম। কম সময়ের জন্য নির্বাচন হওয়ায় এবং শুধু মেয়রের ভোট হওয়ায় ওই নির্বাচন তেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ছিল না। কিন্তু এবার অনেকটা উৎসবমুখর পরিবেশে ব্যাপক প্রচার প্রচারণার পর ভোট হলেও দুই সিটিতে গড়ে ভোট পড়েছে ২৭ ভাগের মতো। দক্ষিণে ২৯ ভাগ ভোট পড়লেও উত্তরে পড়েছে ২৫ ভাগ।

সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত ঢাকার নির্বাচনগুলোর মধ্যেই এটি সর্বনিম্ন ভোটের রেকর্ড। ২০১৪ সালে অধিকাংশ দলের বর্জনের মধ্যে দশম সংসদ নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর থেকে বিভিন্ন নির্বাচনে ভোটের হার কমতে থাকে, যাকে গণতন্ত্রের জন্য অশনি সঙ্কেত মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কে এম নূরুল হুদা কমিশন দায়িত্ব নেয়ার দুই বছরের মাথায় একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটের হার ছিল ৪০ শতাংশ, তা নিয়েও রয়েছে অনেক অভিযোগ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৮৬ টি আসনে ভোট পড়েছে ৮০ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে ১৩টি আসনের ভোট ৯০ শতাংশেরও ওপরে। অন্যদিকে ৫০ শতাংশের নিচে ভোট পড়েছে মাত্র ৩টি আসনে।

অন্যদিকে ৮০ শতাংশের নিচে ভোট পড়েছে ১১২টি আসনে। ৫০ শতাংশের নিচে ভোট পড়েছিলো খুলনা-২ আসনে ৪৯.৪১ শতাংশ, ঢাকা-৬ আসনে ৪৫.২৬ এবং ঢাকা-১৩ আসনে ৪৩.০৫ শতাংশ। এ তিনটি আসনে ইভিএমে ভোট হয়। গত কয়েকটি নির্বাচনে ভোটারদের অনাগ্রহের প্রেক্ষাপটে এবার ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইসির বড় বিজ্ঞাপন ছিল ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)। অনেক বির্তকের মধ্যেও ইভিএমের প্রতি আগ্রহী হয়ে ভোটাররা কেন্দ্রে আসবে বলে আশায় ছিল কমিশনের। কিন্তু সেই আশাও পূরণ হয়নি।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম-৮ আসনে উপনির্বাচনে মাত্র ২২ শতাংশ ভোটগ্রহণ ইসির মাথায় চিন্তার ভাঁজ ফেললেও তাদের জন্য উৎসাহের উপলক্ষ ছিল তার আগে বিভিন্ন পৌরসভায় ইভিএমে ৮০ শতাংশের উপরে ভোটের হার। কিন্তু ঢাকা সিটি নির্বাচনে ভোটের হারে উন্নতি ঘটেনি, যদিও সিইসি কে এম নূরুল হুদার ভাষ্যে, তাদের তৎপরতার কোনো ঘাটতি ছিল না। ভোটের আগে প্রস্তুতি নিয়ে নিজেদের সন্তুষ্টির কথাও প্রকাশ করে ইসি। কিন্তু ভোটের চিত্রে হতাশা ছিল পুরো কমিশনের। সিইসি কে এম নূরুল হুদাও ভোটার উপস্থিতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন।

ইসি সচিব গতকাল আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, ভোটের হার নিয়ে গবেষণা করবে কমিশন। ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার পিছনে কিছু যুক্তিও উপস্থাপন করেছেন তিনি। এমনও প্রশ্ন তুলেছেন, এতো কম ভোট পড়েছে যে আওয়ামী লীগের অনেকে হয়তো ভোট দিতে যাননি।

অন্যদিকে বিএনপি দাবি করেছে ভোটের যে হার প্রকাশ করা হয়েছে প্রকৃত পক্ষে এটি আরো কম। পাঁচ থেকে সাত ভাগ ভোট হয়তো পড়েছে। বিকালে ভোট শেষ হলেও ভোর রাতে ফল ঘোষণা করায় এই হার নিয়ে বিতর্কের সুযোগ পাচ্ছেন অনেকে। ঢাকা দক্ষিণে মোট ২৪ লাখ ৫৩ হাজার ভোটারের মধ্যে মাত্র ২৯ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন। উত্তরে ভোটের হার আরও কম ২৫ দশমিক ৩ শতাংশ। দুই সিটিতে গড়ে ২৭.১৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। উত্তর ও দক্ষিণ মিলিয়ে ২৪শ‘র বেশি কেন্দ্রের বাইরে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত প্রার্থীদের সরব উপস্থিতির মধ্যে কেন্দ্রের ভেতরে ভোটারের জন্য ছিলো খরা।

গতকাল অনুষ্ঠিত নির্বাচনে দক্ষিণে নৌকা প্রতীকে তাপস পেয়েছেন ৪ লাখ ২৪ হাজার ৫৯৫ ভোট, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ইশরাক হোসেন ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ২ লাখ ৩৬ হাজার ৫১২ ভোট। এই সিটিতে মোট ভোট রয়েছে ২৪ লাখ ৫৩ হাজার ১৯৪ জন। এদিকে উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় মোট ভোটার রয়েছে ৩০ লাখ ১০ হাজার ২৭৩ জন। এই সিটিতে নৌকা প্রতিক নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। তিনি পেয়েছেন, ৪ লাখ ৪৭ হাজার ২১১ ভোট ও তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির তাবিথ আউয়াল ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৬১ ভোট।