‌‌‌‌‌‘আমরা আশা ছেড়ে দিয়েছি’

‌‌‌‌‌‘আমরা আশা ছেড়ে দিয়েছি’

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্তে র‌্যাবের ওপর আস্থা নেই উভয় পরিবারের সদস্যদের। হতাশ কণ্ঠে তাদের পরিবার সদস্যরা বলছেন, ‘র‌্যাব অতীতেও পারেনি, এখনও পারছে না, ভবিষ্যতেও পারবে না।’ তবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো যতই অভিমান নিয়ে কথা বলুক এখনও আশা ছাড়েনি র‌্যাব। সংস্থাটির কর্মকর্তাদের দৃঢ় বিশ্বাস, তারা খুনিদের পাকড়াও করতে পারবেন। এ মামলায় ৭১তম বার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে ব্যর্থ হলেও প্রকৃত খুনিদের শনাক্তে এখনও কাজ চালিয়ে যাচ্ছে র‌্যাব। হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র ও নিহতদের পোশাক থেকে সংগ্রহ করা ডিএনএ প্রোফাইল দিয়ে খুনির অবয়ব অঙ্কনের চেষ্টা করছে র‌্যাব। যুক্তরাষ্ট্র থেকে এই অবয়ব আসার অপেক্ষায় আছেন তারা।

সোমবার বিকালে সাংবাদিক সাগর সরওয়ারের মা সালেহা মনির ও মেহেরুন রুনির মা নুরুন্নাহার মির্জা জানান, র‌্যাবের তদন্তে আস্থা নেই তাদের। মামলার তদন্তে কোনও অগ্রগতি না হওয়ায় তারা দুজনেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দীর্ঘদিন ধরে কোনও অগ্রগতির বিষয়েও দুই পরিবারকে অবহিত করেন না বলেও তারা অভিযোগ করেছেন।

সাগর সরওয়ারের মা সালেহা মনির বলেন, ‘৩০ বছর আগের মামলা তদন্ত করে শাস্তি হয় এদেশে। কিন্তু সাগর-রুনি হত্যার আসামিদের কেন গ্রেফতার হবে না? ওরা এমন কি করেছে যে ওদের হত্যার বিচার হবে না? র‌্যাব কী করে না করে আমরা কিছু জানি না। এখন তদন্ত কর্মকর্তা কে তাও জানি না। আমার সঙ্গে র‌্যাবের কোনও কথা হয় না। প্রায় বছর খানেক আগে র‌্যাবের এক কর্মকর্তা এসেছিলেন, আমি তাকে বলেছি, আপনারা পারবেন না। অন্য কোনও তদন্ত সংস্থাকে দিয়ে দিন। র‌্যাব এটার কিছুই পারবে না। ভবিষ্যতেও এর কিছু হবে না। আমরা আশা ছেড়ে দিয়েছি।’

সম্প্রতি ছেলে সাগর সরওয়ারকে স্বপ্নে দেখেছেন বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন সালেহা মনি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন,‘আমি কিছুদিন আগে স্বপ্ন দেখলাম, সাগরকে নিয়ে পাবনায় ওর দাদা বাড়িতে গিয়েছি। সেখানে আমার সঙ্গে হাসিখুশি ছেলে ঘুরছে। কিছুক্ষণ পর আবার হাসিখুশি ভাবে বিদায় নিয়ে কোথায় যেন চলে গেল। আমার সাগর ওপারে ভালো আছে।’

মামলার তদন্তে কোনও অগ্রগতি না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মেহেরুন রুনির মা নুরুন্নাহার মির্জাও। তিনি বলেন, ‘র‌্যাব ঘটনার পরপরই পারেনি। এত বছর পর আর কী পারবে? তারা কিছুই পারবে না। আমরা আল্লাহর কাছে বিচারের ভার ছেড়ে দিয়েছি।’

তবে এখনও আশার কথা শোনাচ্ছে র‌্যাব। ভালো একটি প্রতিবেদন দিতে পারবেন বলেই আশা প্রকাশ করেছেন বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম। তিনি বলেন, ‘আমেরিকার ডিএনএ রেজাল্টের মাধ্যমে আমরা অপরাধীর একটি অবয়ব পাবো। ডিএনএ প্রোফাইল দিয়ে এটা করা সম্ভব। আমরা সেটার জন্য অপেক্ষা করছি। আশা করছি তখন খুনিকে চিহ্নিত করা যাবে। যেহেতু অনেক দিন হয়ে গেছে, আমরাও চেষ্টা করছি ভালো একটি প্রতিবেদন দেওয়ার।’

প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনির লাশ। এ সময় বাসায় ছিল তাদের একমাত্র সন্তান মাহির সরওয়ার মেঘ। এই ঘটনায় দায়েরকৃত হত্যা মামলা প্রথমে ঢাকা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) দুই মাস তদন্ত করে। তারা নিজেদের ‘ব্যর্থতা’জানালে আদালত র‌্যাবকে তদন্তভার দেন। র‌্যাব গত ৭ বছর ১০ মাস ধরে তদন্ত করছে। এ সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য আদালতের কাছে ৭০ বার সময় প্রার্থনা করেন র‌্যাবের তদন্ত কর্মকর্তা। গত ৩০ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর হাকিম দেবব্রত বিশ্বাসের আদালত ৭০তম বারের মতো সময় বাড়িয়ে সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য করেন। তবে এদিনও প্রতিবেদন দাখিলে ব্যর্থ হয় র‌্যাব। আগামী ২৩ মার্চ পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেছে আদালত।

সাগর সরওয়ারের সঙ্গে তার ছেলে মেঘ। মেঘ বড় হয়ে এখন কৈশোরে। বাবার স্মৃতি বলতে এই ছবিগুলোই তার সম্বল।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাস্থল থেকে জব্দ করা হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি, বঁটি, ছুরির বাঁট, সাগর-রুনির পরনের কাপড়, সাগরের হাত-পা যে কাপড় দিয়ে বাঁধা হয়েছিল সেই কাপড় ও রুনির পরনের টি-শার্ট পাঠানো হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের একটি ল্যাবরেটরিতে। এরপর গ্রেফতারকৃত আট আসামি, নিহত দুজন এবং স্বজন মিলে মোট ২১ জনের ডিএনএ নমুনা পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়েছিল। তবে গ্রেফতার ব্যক্তিদের সঙ্গে কারও ডিএনএ ম্যাচিং হয়নি।

এই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এদের মধ্যে পাঁচজন—রফিকুল, বকুল, সাইদ, মিন্টু ও কামরুল হাসান ওরফে অরুণ মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসক নারায়ণচন্দ্র রায় হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। এছাড়াও গ্রেফতার দেখানো হয়েছে পারিবারিক বন্ধু তানভীর এবং বাসার নিরাপত্তাকর্মী পলাশ রুদ্র পাল ও হুমায়ূন কবীরকে। এদের মধ্যে তানভীর, মিন্টু ও পলাশ হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন। বাকিরা এখনও কারাগারে। সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন

এমজে/