গোলাপে ‘চোখ রাঙানি’ যশোরে প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়

গোলাপে ‘চোখ রাঙানি’ যশোরে প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়

কবিতায় প্রিয়তমার জন্য বিশ্ব সংসার তন্ন তন্ন করে ১০৮টি নীলপদ্ম খুঁজে এনেছেন কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে দুর্লভ নীলপদ্ম আনতে না পারলেও প্রিয়জনের জন্য অন্তত লাল টকটকে গোলাপ সংগ্রহ করতে চান সবাই। তবে সেই গোলাপের দামে এবার চোখ রাঙানি শুরু হয়েছে।

সোমবার ফুলের রাজধানী খ্যাত যশোরের গদখালিতে গোলাপের দাম রেকর্ড ভেঙেছে। পাইকারিতে প্রতি পিস ১৫ টাকায় বিক্রি করছেন চাষীরা। শহরে তা খুচরায় বিক্রি হয়েছে ২০ টাকায়, যা স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি দাম বলছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, এ দাম আরও বাড়তে পারে।

গোলাপের রেকর্ড দাম পেলেও খুশি নন চাষীরা। কুঁড়ি পচা রোগ ও বৈরী আবহাওয়ায় গোলাপ উৎপাদনে ধস নেমেছে বলে দাবি গদখালির ফুলচাষীদের। এজন্য চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না থাকায় দাম বেড়েছে। সোমবার সরেজমিন গদখালি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বসন্তবরণ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘিরে ফুলচাষীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। বাহারি ফুলের মেলায় কৃষকের মুখে স্বপ্নের ঝিলিক। বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরাও ভিড় জমিয়েছে।

হাড়িয়া গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ সলেমান জানালেন, চার বিঘা জমিতে গোলাপ ফুলের চাষ করেছেন। সকালে গদখালির বাজারে দুই হাজার পিস গোলাপ ফুল বিক্রি করেছেন। প্রতি পিস ফুলের দাম পেয়েছেন ১৫ টাকা। আগামী তিনদিনে গোলাপের দাম আরও বাড়বে বলে আশাবাদী। তিনি বলেন, এবার গোলাপের কুঁড়িপচা রোগ চাষীদের শেষ করে দিয়েছে। গতবছরের তুলনায় এবার ফলন তিন ভাগের দুই ভাগ কমেছে। ভালোবাসা দিবস আর বসন্তবরণ অনুষ্ঠান ঘিরে ৬ হাজার পিস গোলাপ বিক্রির টার্গেট রয়েছে তার।

পাটুয়াপাড়া গ্রামের চাষী আলমগীর হোসেন জানালেন, সাত বিঘা জমিতে ফুল চাষ করেছেন। এর মধ্যে গোলাপ ফুল রয়েছে ৩ বিঘা জমিতে। এবার গোলাপের উৎপাদনে ধস নেমেছে। কাঁচাপাতা ঝরা ও কুঁড়িপচা রোগে উৎপাদন ৮০-৯০ শতাংশ কমেছে। এজন্য গোলাপের দাম রেকর্ড ছাড়িয়েছে। তিনি বলেন, ১৫ বছর ধরে ফুলচাষ করছি, কখনও ১৫ টাকা পিস বিক্রি করতে পারিনি। এবার ফুলের দাম আরও বাড়বে। রেকর্ড দামে গোলাপ বিক্রি করলেও চাষীর বিঘাপ্রতি ৫০ হাজার টাকা লোকসান হবে। ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে না। কুলিয়া গ্রামের চাষী আনিসুর রহমান বলেন, বসন্তবরণ ও ভালোবাসা দিবসে হলুদ ফুল ও গোলাপের চাহিদা বেশি থাকে। এজন্য দামও বেশি হয়।

এদিন গদখালিতে জমজমাট ছিল ফুল বাণিজ্য। দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকাররা কিনেছেন নানা প্রজাতির ফুল। বাজারে সব রকমের ফুলের দাম বেড়েছে। আড়তদাররা জানালেন, প্রতি পিস গোলাপ ১৫ টাকা, রজনীগন্ধা ২-৩ টাকা, গ্লাডিওলাস তিন থেকে আট টাকা, জারবেরা পাঁচ থেকে ১০ টাকা, চন্দ্রমল্লিকা ২ থেকে ৩ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়াও গাঁদাফুল প্রতি হাজার একশ’ থেকে দেড়শ’ টাকা, জিপসি ও রথস্টিক ফুল ১৫ থেকে ২০ টাকা আঁটি (মানভেদে) বিক্রি হয়েছে।

গদখালির পাইকারি ফুল ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, ভালোবাসা দিবসে গোলাপ, বসন্তবরণে জারবেরা আর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে গাঁদাফুলের চাহিদা বেশি থাকে। চাষীদের কাছ থেকে কিনে সাতক্ষীরা, ফরিদপুরে সরবরাহ করছি।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাব, নভেম্বর ও ডিসেম্বরে বৃষ্টিপাতের প্রভাবে ফুল উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এ ছাড়াও গোলাপক্ষেতে ভাইরাস লেগে উৎপাদনে ধস নেমেছে। সরবরাহ কম থাকায় চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ফুল।

এমজে/