পায়রা বন্দরের কোল টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পে ৮ খাতের ব্যয় প্রশ্নবিদ্ধ

পায়রা বন্দরের কোল টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পে ৮ খাতের ব্যয় প্রশ্নবিদ্ধ

সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) পায়রা বন্দরে নির্মাণ করা হবে কোল টার্মিনাল। এটি বাস্তবায়নে প্রস্তাবিত লিংক প্রকল্পের পরামর্শকসহ ৮ খাতের ব্যয় প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
এই কোল টার্মিনাল প্রকল্পের সংযোগ সুবিধাদি নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্প আজ পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভায় উঠবে। সেখানে এসব প্রশ্ন উপস্থাপন করবে পরিকল্পনা কমিশন। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ২১৪ কোটি টাকা।

প্রক্রিয়াকরণ শেষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে কাজ শুরু হবে। ২০২২ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, মূল কোল টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের সুপারভিশনের জন্য পরামর্শক বাবদ ৩০ কোটি টাকা ব্যয় প্রস্তাবিত প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রকল্পটি আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।

তাই মূল প্রকল্পের সুপারভিশন পরামর্শক বাবদ ব্যয়ের যৌক্তিকতা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সভায় উপস্থাপন করতে পারে। এছাড়া প্রকল্পে ৯ কর্মকর্তা প্রেষণে এবং ১৮ কর্মকর্তা ও কর্মচারী আউটসোর্সিংয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের জনবল নিয়োগ সংক্রান্ত কমিটির কোনো সুপারিশ গ্রহণ করা হয়নি। প্রকল্পে মূল বন্দর ও কোল টার্মিনালের সংযোগ স্থাপনের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের উপর ৯ দশমিক ৩ কিলোমিটার রাস্তা পুনর্নির্মাণ ও উন্নয়নের প্রস্তাব করা হয়েছে।

এজন্য প্রতি কিলোমিটর ৯ কোটি টাকা ধরে মোট ৮৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। এর যৌক্তিকতা সভায় আলোচনা করা যেতে পারে। সাব-স্টেশন নির্মাণ ও লাইট স্থাপনের জন্য ৫০ কোটি টাকা ব্যয় প্রস্তাবে ভিত্তি ও যৌক্তিকতা আলোচনা করা প্রয়োজন।

এছাড়া প্রকল্পের আওতায় ভ্রমণ খাতে ব্যয় ৩০ লাখ টাকা, পেট্রল-তেল ও লুব্রিকেন্ট খাতে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা, গ্যাস ও জ্বালানি খাতে ৩০ লাখ টাকা, স্টেশনারি-সিল-স্ট্যাম্প খাতে ৩০ লাখ টাকা, অন্যান্য খাতে ৩৬ লাখ টাকা এবং মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ৩৬ লাখ টাকা ধরা হয়েছে, যা অত্যাধিক।

খাতগুলোর বরাদ্দ নিয়ে সভায় আলোচনা করা যেতে পারে। সেই সঙ্গে ১৮টি কম্পিউটার, ১০টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র কেনার প্রস্তাব যথাযথ কি না, এ বিষয়ে আলোচনা প্রয়োজন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পায়রা সমুদ্রবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর এম জাহাঙ্গীর আলম বুধবার গণমাধ্যমকে বলেন, বিষয়টি পরিকল্পনা কমিশনের বুঝতে ভুল হয়েছে। আমরা খরচ ধরেছি ইনডিপেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ারের। কিন্তু তারা মনে করেছে পরামর্শকের জন্য এই ব্যয় রাখা হয়েছে। পিপিপি প্রকল্পে ইনডিপেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার বেসরকারি ও সরকারি উভয় অংশের জন্যই কাজ করে। তাই এ খাতের ব্যয় উভয় অংশই সমানভাবে বহন করতে হয়। সেজন্যই ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ের অর্ধেক ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের উপর রাস্তা তৈরিতে ও সংস্কারের জন্য পরামর্শক বাবদ সামান্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বাঁধের উপর সড়ক সংস্কারের যে ব্যয় ধরা হয়েছে, সেটি চলমান অন্য একটি প্রকল্পের ব্যয়ের সমান।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা মনগড়াভাবে প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করি না। অথবা যা প্রস্তাব দেয়া হয়, সেটিও যদি অনুমোদন হয়, তাহলেও আমরা মনগড়াভাবে খরচ করতে পারব না। টেন্ডারসহ সরকারি ক্রয় সম্পর্কিত নানা বিষয় রয়েছে। তবে অনেক সময় পরিকল্পনা কমিশন প্রস্তাব থেকে কমিয়ে দিলে পরবর্তী সময়ে দরপত্রের দাম বেশি হলে আবার প্রকল্প সংশোধন করতে হয়। তবে পরিকল্পনা কমিশন যা সুপারিশ করবে, আমরা সে অনুযায়ী ডিপিপি সংশোধন করব। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, পিপিপিতে মূল প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা।

সূত্র জানায়, প্রকল্পটি চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দহীনভাবে অননুমোদিত নতুন প্রকল্পের তালিকায় নেই। তাই এটি প্রক্রিয়াকরণের জন্য পরিকল্পনামন্ত্রীর সম্মতি নেয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় সড়ক ও বিদুৎ সংযোগ স্থাপনসহ অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি করা হবে।

প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের ১৯ নভেম্বর দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর হিসেবে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে পায়রা সমুদ্রবন্দর। এ বন্দরকে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি- এই তিন ভাগে ভাগ করে উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে বহির্নোঙরে ক্লিংকার, সার ও অন্যান্য বাল্ক পণ্যবাহী জাহাজ আনয়ন এবং লাইটার জাহাজের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরে পরিবহন করা। মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে- ২০১৯ সালের মধ্যে ১০ মিটার গভীরতার চ্যানেল ড্রেজিং, একটি কনটেইনার, একটি মাল্টিপারপাস ও একটি বাল্ক টার্মিনালসহ বন্দর অবকাঠামো তৈরি করে কার্যক্রম শুরু করা। আন্তর্জাতিকমানের দেশীয় ও আঞ্চলিক বন্দর সুবিধা সৃষ্টির মাধ্যমে পায়রা গভীর সমুন্দ্রবন্দর স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া।

এজন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ঢাকা থেকে পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ, একটি এলএনজি টার্মিনাল, একটি লিকুইড বাল্ক টার্মিনাল, জাহাজ রক্ষণাবেক্ষণ সুবিধা সংবলিত ডকইয়ার্ড নির্মাণ, বিমানবন্দর তৈরি, কুয়াকাটাকেন্দ্রিক পর্যটন কেন্দ্র ও রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা স্থাপন করা। স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য পিপিপির আওতায় মূল প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য লিংক প্রকল্প হিসেবে এ প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।