পাপিয়ার মামলা ডিবিতে, তদন্ত করতে চায় র‌্যাব

পাপিয়ার মামলা ডিবিতে, তদন্ত করতে চায় র‌্যাব

বহুল আলোচিত যুব মহিলা লীগ থেকে বহিষ্কৃত আলোচিত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়ার মামলা বিমানবন্দর থানা থেকে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) দফতরে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে মামলাটি তদন্তে আগ্রহী র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব )। পাপিয়াসহ চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছে র‌্যাব।

বিষয়টি নিশ্চিত করে র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার সহকারী পরিচালক এএসপি সুজয় সরকার গণমাধ্যমকে বলেন, পাপিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আবেদন করেছি। অনুমোদন পেলে কোর্টের মাধ্যমে তাকে আমাদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এ ব্যাপারে রবিবার অনুমতি পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

এ দিকে বিমানবন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বিএম ফরমান আলী বলেন, পাপিয়ার মামলাটি ডিবিতে স্থানান্তর করা হয়েছে। আর পাপিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বুধবার রাতে গোয়েন্দা দফতরে নেয়া হয়। এখন তিনি সেখানেই আছেন।

তিনি জানান, বিভন্ন গণমাধ্যমে পাপিয়ার ব্যাপারে যেসব খবর প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলো তার জিজ্ঞাসাবাদের প্রাথমিক স্বীকারোক্তি ছিল।

ওসি ফরমান আলী আরো বলেন, পাপিয়ার ব্যাপারে আমরা অনেক তথ্যই গণমাধ্যম থেকে পেয়েছি। এরমধ্যে অনেক ব্যাপারই আমরা আগে থেকে জানতাম না। তিনি বলেন, তবে তদন্তের স্বার্থে অনেক কিছু বলা যাবে না।

অপরদিকে মহানগর গোয়েন্দা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিবির উত্তরের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও প্রতিরোধ টিমের সহকারী পরিচালক শাহিদুল ইসলাম মামলাটি তদন্ত করছেন।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, সোস্যাল মিডিয়ায় পাপিয়ার সম্পর্কে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে সে ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাতে পাপিয়া বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে । সেগুলো যাচাই বাছাই করা দেখা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত ২২ ফেব্রুয়ারি দুপুরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে থাইল্যান্ড পালানোর সময় জাল টাকাসহ শামীমা নুর পাপিয়া, তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন, তাদের সহযোগী সাব্বির খন্দকার ও শেখ তায়্যিবা (২২) কে আটক করে র‌্যাব।

ওই দিন র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১-এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাফিউল্লাহ বুলবুল পাপিয়ার ব্যাপারে চাঞ্চল্যকর তথ্য গণমাধ্যমকে জানান।

তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি, এদের প্রধান কাজ ছিল দেশ থেকে অবৈধ পথে টাকা পাচার ও নারীদের দিয়ে বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা করা। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক তদবির, অস্ত্র ও মাদকের ব্যবসাও পরিচালনা করে আসছিলেন তারা।

এছাড়া, সমাজ সেবার নাম করে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নারীদের ধরে এনে অবৈধ কাজে লিপ্ত করতেন। অধিকাংশ সময় রাজধানীর বিভিন্ন বিলাসবহুল হোটেল ভাড়া করে এই ব্যবসা চালাতেন। বিশেষ করে এই ব্যবসা পরিচালনার জন্য ঢাকা এবং নরসিংদিতে দামী হোটেল এবং দামী গাড়ি ভাড়া করে রাখতেন। তারা রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেল ওয়েস্টিন ভাড়া করে গত কয়েক মাসে ৮৮ লাখ টাকা ভাড়া দিয়েছে। প্রতিরাতে ওয়েস্টিনের পুরো বারটি বুক করে রাখতেন। সব মিলিয়ে প্রতি মাসে হোটেল ও বারের বিল আসত এক কোটি ত্রিশ লাখ টাকা।

এরপর রাজধানীর ফার্মগেটের ইন্দিরা রোডে ও নরসিংদীতে বিলাসবহুল বাড়ি-গাড়িসহ তাদের নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অর্থের খবর পেয়ে অভিযান পরিচালনা করে র্যা ব। অভিযানে ইন্দিরা রোডে পাপিয়ার বাসা থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগজিন, ২০ রাউন্ড গুলি, ৫ বোতল বিদেশি মদ, ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, ৫টি পাসপোর্ট, ৩টি চেক, বেশ কিছু বিদেশি মুদ্রা ও বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি এটিএম কার্ড উদ্ধার করা হয়।

পরদিন ২৩ ফেব্রুয়ারি বিমানবন্দর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি এবং ২৪ ফেব্রুয়ারি সোমবার শেরেবাংলা নগর থানায় অস্ত্র আইনে একটি ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে আরেকটি মামলা করা হয়।

এ সব মামলায় পাপিয়া ও তার স্বামী সুমন চৌধুরীর ১৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। তাদের অপর দুই সহকারী সাব্বির খন্দকার ও শেখ তায়্যিবার ৫ দিন রিমান্ড দেন আদালত।