ইউপি চেয়ারম্যান থেকে যেভাবে ‘কোটিপতি’ হলো আ’লীগ নেতা

ইউপি চেয়ারম্যান থেকে যেভাবে ‘কোটিপতি’ হলো আ’লীগ নেতা

পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। তবে এই অভিযোগকে ষড়যন্ত্র বলছেন তিনি।

গত বৃহস্পতিবার তিন পৃষ্ঠা সংবলিত দুর্নীতির এক ডজনের বেশি অভিযোগ ৮ ইউপি সদস্য জমা দিয়েছেন পাবনা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমন্নিত কার্যালয়ের উপপরিচালক ও পাবনা জেলা প্রশাসকের কাছে।

অভিযোগপত্রে চেয়ারম্যান আসাদুর রহমানের নানা অনিয়মের তদন্ত করে শাস্তি দাবি করেছেন ইউপি সদস্যরা।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরে উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নে ৪০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্পে ২০৭ জন শ্রমিকের ব্যাংক স্বাক্ষর জাল করে ১৪ লাখ ৪৯ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন ইউপি চেয়ারম্যান আছাদুর রহমান। এ ছাড়া ইউনিয়নের ৫২১ জন ভিজিডি কার্ডধারী নারীকে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়ার সময় তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে প্রতি মাসে ৫০ টাকা করে আদায় করেন তিনি। টাকা দিতে না পারলে তাদের চাল দিতেন না।

এভাবে প্রতি মাসে ২৬ হাজার ৫০ টাকা তিনি নিহের পকেটে তোলেন। এমনকি ইউনিয়নের ঘোষবেলাই গ্রামের চায়না দাস, দাসবেলাই গ্রামের হাজেরা খাতুনের ভিজিডি কার্ডের চাল চেয়ারম্যান নিজেই ভোগ করেন। ভিজিডি খাতে অনিয়ম করে গত চার বছরে ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুর রহমান প্রায় অর্ধকোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

এরপর ‘জমি আছে ঘর নাই’ প্রকল্পেও নানা অনিয়ম করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান। তিনি আর্থিক স্বচ্ছলতা থাকা সত্ত্বেও নিজস্ব লোকদের সরকারি ঘর পাইয়ে দিয়েছেন। সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে রাস্তা নির্মাণেও তার বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অনিয়মের অভিযোগ।

এ ছাড়া ইউনিয়নের সাতবাড়িয়া থেকে সমাজ গ্রাম পর্যন্ত কর্মসৃজন প্রকল্পের মাধ্যমে রাস্তা পুনর্নির্মাণ করে, একই রাস্তায় আরেকটি প্রকল্প দেখিয়ে ২ দশমিক ২৫০ মেট্রিকটন চাল আত্মসাৎ করেন চেয়ারম্যান।

এই লিখিত অভিযোগে চেয়ারম্যানের শোষণ ও নির্যাতনের শিকার অনেক সাধারণ মানুষের ভোগান্তির চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে।

তুচ্ছ অভিযোগে ইউনিয়নের পলাশপুর গ্রামের সাইফুল ইসলাম, রমনাথপুর গ্রামের রবিউল ইসলাম, দোহারি গ্রামের মোমিনসহ অনেককে ইউনিয়ন পরিষদে আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন করে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।

চলনবিল অধ্যুষিত নিমগাছি প্রকল্পের পুকুর চাষীদের কাছ থেকেও জোরপূর্বক লাখ লাখ টাকা আদায় করেন বলেও অভিযোগ চেয়ারম্যান আসাদুর রহমানের বিরুদ্ধে।

অভিযোগে আরো জানা যায়, সরকারি সেবা দিতেও ওই চেয়ারম্যান অবৈধভাবে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে থাকেন। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে উত্তরাধিকার সনদ দিতে তার নির্দেশে ১০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আদায় করা হয়।

জন্ম নিবন্ধন করতে সরকারি ফি ২৫ থেকে ৫০ টাকার পরিবর্তে ১৫০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়। গ্রাম আদালতে বিচার পেতে ১০ থেকে ২০ টাকা সরকার নির্ধারিত ফির পরিবর্তে তিনি ১ হাজার ২০০ টাকা করে আদায় করেন। এসব অনিয়ম করে ওই চেয়ারম্যান গত চার বছরে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ইউপি সদস্যরা।

ইউপি সদস্যরা আরো অভিযোগ করেন, এলজিএসপি প্রকল্প ও ইউনিয়ন পরিষদের আয়-ব্যয়ের হিসাব-নিকাশ নিয়ে কারও সঙ্গে আলোচনা করেন না ইউপি চেয়ারম্যান। সম্প্রতি এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ইউপি সদস্যরা প্রতিবাদ করলে তাদের ইউনিয়ন পরিষদে প্রবেশ নিষেধ করে দেন চেয়ারম্যান। এ অবস্থায় নিরুপায় হয়ে ইউপি সদস্যরা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন।

অভিযোগকারী ইউপি সদস্যরা বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুর রহমান গত চার বছর ধরে সব ইউপি সদস্যসহ গ্রামের সাধারণ মানুষের ওপর শোষণ ও নির্যাতন চালিয়ে আসছেন। সব প্রকল্পের টাকা নামমাত্র কাজ করে দুই-একজন ইউপি সদস্যের সঙ্গে ভাগ যোগ করে খেয়েছেন। এত দিন ভয়ে তারা কেউ মুখ খুলতে পারেননি। এখন আমরা সবাই একজোট হয়ে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধ বিচার চাচ্ছি।

তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি চেয়ারম্যান আছাদুর রহমান জানান, তার বিরোধী আওয়ামী লীগের একটি গ্রুপ ষড়যন্ত্র করে ইউপি সদস্যদের দিয়ে এই অভিযোগ দায়ের করিয়েছেন। তদন্তে সঠিক তথ্য-প্রমাণাদি তুলে ধরে এসব অভিযোগ তিনি মিথ্যা প্রমাণ করবেন।

এ বিষয়ে পাবনা জেলা প্রশাসক কবির মাহমুদ বলেন, ‘ভাঙ্গুড়া উপজেলার একজন ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। পরবর্তী সময়ে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’