এক প্রকল্পেই ১০ পরিচালক, সময় বৃদ্ধির মাশুল ৬৫ কোটি

এক প্রকল্পেই ১০ পরিচালক, সময় বৃদ্ধির মাশুল ৬৫ কোটি

এক প্রকল্পে একজন নয় দুজন নয়, একে একে ১০ জন প্রকল্প পরিচালক (পিডি) দায়িত্ব পালন করেছেন। ফলে চলমান প্রকল্পের কাজ এক জনের কাছ থেকে অন্যজন বুঝিয়ে নিতেই সময় চলে গেছে অনেক। ঘন ঘন প্রকল্প পরিচালক পরিবর্তিত হওয়ায় প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে। বেড়েছে সময়ও।

শুধু ৫ বছর সময় বৃদ্ধির কারণেই একটি প্রকল্পে মাশুল গুণতে হয়েছে ৬৪ কোটি ৫৮ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। প্রকল্পটির সময় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নির্মাণ সামগ্রীর রেট সিডিউলও বেড়েছে সমান তালে। সময় বৃদ্ধির কারণে ব্যয় বেড়ছে ৫৫ দশমিক ২৩ শতাংশ।

এমন ঘটনা ঘটেছে ‘ভোমরা স্থলবন্দর সংযোগসহ সাতক্ষীরা শহর বাইপাস সড়ক নির্মাণ’ প্রকল্পে। ভবিষ্যতে প্রকল্প বাস্তবায়নে পূর্ণ সময়ের জন্য প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছে সরকারের একমাত্র প্রকল্প তদারকি সংস্থা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। সময় বৃদ্ধির সঙ্গে ব্যয় বৃদ্ধির ঘটনাকে সবচেয়ে দুর্বল দিক হিসেবে বিবেচনা করেছে আইএমইডি। সদ্য সমাপ্ত হওয়া প্রকল্পটি আইএমইডির সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মিজানুর রহমান মিয়া সরেজমিন পরিদর্শন করেন।

আএমইডি সূত্র জানায়, প্রকল্পটির পূর্ত কাজ ছয়টি প্যাকেজের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়েছে। এর মধ্যে ৫ নং প্যাকেজের কাজ মূল চুক্তি অনুযায়ী হয়েছে বাকি প্যাকেজগুলোর মূল চুক্তির সময়সীমা বেড়েছে। প্রকল্পের সময়-বৃদ্ধি সবচেয়ে দুর্বল দিক। ভবিষ্যতে মূল প্রাক্কলিত ব্যয় ও বাস্তবায়ন মেয়াদকালের মধ্যে যাতে প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়িত হয় সে বিষয়ে সচেষ্ট হওয়া প্রয়োজন বলে সতর্ক করেছে আইএমইডি।

ভোমরা স্থল বন্দর সংযোগসহ সাতক্ষীরা শহর বাইপাস সড়ক নির্মাণ প্রকল্পটি নির্মাণে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা। প্রকল্পের আওতায় ৭ দশমিক ৩ মিটার প্রস্থের ২৪ কিলোমিটার মহাসড়কটিতে ৩টি ব্রিজ, ৫০টি কালভার্টও নির্মাণ করা হয়েছে।

২০১০ সালের ২৩ জুলাই শ্যামনগর মহাসীন ডিগ্রি কলেজ মাঠে এক জনসভায় সাতক্ষীরা বাইপাস সড়কসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পরে প্রকল্পটি ১১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে অক্টোবর ২০১০ থেকে জুন ২০১৪ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায়। প্রকল্পটি সমাপ্ত হতে প্রকৃত সময় থেকে ৫ বছর সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। যা প্রকল্পটির সবচেয়ে দুর্বল দিক হিসেবে চিহ্নিত করেছে আইএমইডি।

প্রকল্পটির বিষয়ে নানা মতামত ও সুপারিশ দিয়েছে আইএমইডি। আইএমইডির সরেজমিন প্রতিবেদনে দেখা গেছে, প্রকল্পটির মাধ্যমে নির্মিত নতুন সড়কের ১২ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার (সাতক্ষীরা বাইপাস সড়ক) পেভমেন্ট খুব ভালো রয়েছে। সাতক্ষীরা শহর বাইপাস সড়ক নির্মিত হওয়ায় ভোমরা স্থলবন্দরের মালবাহী গাড়িসহ অন্যান্য যানবাহন বাইপাস দিয়ে চলাচল করায় সাতক্ষীরা শহরে যানজট অনেকাংশ কমেছে।

প্রকল্পটির মাধ্যমে ছয় বছর পূর্বে ২০১৪ সালে পুনঃনির্মিত ভোমরা স্থলবন্দর সড়কের পেভমেন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পটহোল সৃষ্টি হয়েছে। এগুলো মেরামত করে যান চলাচলের উপযোগি করতে হবে। অস্পষ্ট হয়ে যাওয়ায় পুনরায় রোড মার্কিং করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত গাইড পোস্ট পুনঃনির্মাণ করতে হবে। রোড মার্কিং যেন সব সময় কার্যকারী থাকে এই বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে।

অধিকাংশ সড়কব্যাপী পর্যাপ্ত সফট সোল্ডার দেখতে পাওয়া যায়। তবে ব্রিজ, কালভার্টের মাটির এপ্রোচ এবং সড়ক ও মেঠো মাটির রাস্তার সংযোগস্থলে সফট শোল্ডার ক্ষতিগ্রস্ত দেখা যায়। এগুলো দ্রুত মেরামত করতে হবে। ভোমরা স্থল বন্দর সংযোগসহ সাতক্ষীরা সড়ক নির্মাণের মাধ্যমে সাতক্ষীরা শহরের যানজট দূরীকরণ, বিকল্প সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা, ভোমরা বন্দরগামী সড়কের উন্নয়ন এবং ভোমরা বন্দরের কার্যক্রম দ্রুত করার জন্য প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছিল। কিন্তু বার বার প্রকল্প পরিচালক পরিবর্তনের কারণে বেড়েছে সময়। সময় বৃদ্ধির শ্রোতে বেড়েছে প্রকল্পের ব্যয়।

বার বার প্রকল্প পরিচালক পরিবর্তন প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন অনুবিভাগ) বলেন, ‘প্রকল্প পরিচালক মাঠ পর্যায়ে থেকে নিয়োগ হয়। এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার পিডি হলেন, পরে উনি তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হলেন। পরে তিনিও হয়তো ঐ প্রকল্পে থাকেন না। একজন অতিরিক্ত প্রকৌশলী বড় কোনো প্রকল্পের পরিচালক হলেন। উনার চাকরির বয়স আছে আর তিন মাস। এই সময় পরে নতুন করে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দিতে হয়। আমাদের ১৫০ জনের বেশি প্রকল্প পরিচালক আছেন। মূলত এসব কারণেই পিডি পরিবর্তন হয়ে থাকে। সরকারি চাকরিতে নানা কারণেই পিডি বদলি হয়ে থাকে।

এমজে/