বাংলাদেশে করোনাভাইরাস: আইসোলেশনে আট জন, আক্রান্তরা স্থিতিশীল

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস: আইসোলেশনে আট জন, আক্রান্তরা স্থিতিশীল

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস আক্রান্তের খবর নিশ্চিত হবার পর রাস্তাঘাটে বহু মানুষকে দেখা যাচ্ছে মাস্ক দিয়ে মুখ ঢেকে চলাচল করতে। বাংলাদেশে শনাক্ত হওয়া তিন জন আক্রান্ত রোগী ছাড়া আরো ৮ জনকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআর।

প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান আইইডিসিআরের পরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। তিনি বলেন, আইসোলেশন ছাড়াও আরো চার জনকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এদের সবার নমুনা সংগ্রহ করা হলেও এখন পর্যন্ত পরীক্ষা শেষ হয়নি।

ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‌‘যাদের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে তাদের নেগেটিভ এসেছে। তাদের রিপোর্ট দেয়ার পর ছেড়ে দেয়া হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে তিনি আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিনের মধ্যে পার্থক্য ব্যাখ্যা করে বলেন, আইসোলেশন রোগীর জন্য প্রযোজ্য। অর্থাৎ যাদের মধ্যে উপসর্গ দেখা দিয়েছে তাদের আইসোলেশনে রাখা হয় যাতে অন্যরা আক্রান্ত না হয়। বর্তমানে ৮ জন আইসোলেশনে আছে।

‘কোয়ারেন্টিন হচ্ছে যারা রোগীর সংস্পর্শে এসেছেন তাদের জন্য প্রযোজ্য। যে চারজন কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন তারা আগে শনাক্ত হওয়া তিন জন রোগীর কন্টাক্ট। সেই চারজনকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এদের কোন লক্ষণ উপসর্গ নেই। এরা আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে এসেছিলেন,’ তিনি বলেন।

যাদের মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গ রয়েছে তাদের আইসোলেশনে নেয়া হয়। যাদের বাড়িতে কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা যাবে না তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয় বলে জানান তিনি। যেমন কেউ যদি মেসে থাকেন, বা বাড়িতে যদি বয়স্ক কেউ থাকেন তাহলে তার সংস্পর্শে অন্যদের মধ্যে ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। সেরকম পরিস্থিতিতে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন করা হয়।

এদিকে এর আগে শনাক্ত হওয়া তিন জন কোভিড-১৯ আক্রান্তের অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন যে, তাদের অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। তারা ভাল আছেন। এদের মধ্যে দুই জনের খুবই মৃদু উপসর্গ ছিল। সেগুলো চলে গিয়েছে। কিন্তু তাদেরকে এখনই ছাড়া যাবে না।

সৌদিফেরত বয়স্ক দম্পতি হাসপাতালে
এর আগে সোমবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কায় সৌদি আরব থেকে ফেরা এক বয়স্ক দম্পতিকে বিমানবন্দর থেকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহরিয়ার সাজ্জাদ বিবিসি বাংলাকে এখবর নিশ্চিত করেছেন।

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিদেশ ফেরতদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ওই দম্পতির মধ্যে শ্বাসকষ্টের উপসর্গ থাকায় তাদেরকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

বেশ কিছুদিন ধরে ওই দম্পতি শ্বাসকষ্টের চিকিৎসা নেয়ার পরও তা ভাল না হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, কিছুদিন আগে ওই দম্পতি ছেলের চীন থেকে সৌদি আরবে যান। সেখানে বাবা-মায়ের সাথে ১০ দিন অবস্থান করে সোমবার ভোরে বাংলাদেশে পৌঁছান।

বিমানবন্দরে পরীক্ষায় দেখা যায় যে, তাদের শ্বাসকষ্ট রয়েছে।

তবে ওই দম্পতির ছেলের মধ্যে কোন উপসর্গ না থাকায় তাকে বাড়িতে পাঠানো হয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা।

সম্প্রতি বাংলাদেশে তিনজন ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত করেছেন কর্মকর্তারা। এরা ঢাকার দুটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এদের মধ্যে দুজন ইটালি থেকে এসেছেন। তৃতীয়জন এই দুজনের একজনের আত্মীয়, যিনি বাংলাদেশেই ছিলেন।

এছাড়া এই তিনজনের সংস্পর্শে একদিন যারা এসেছেন এমন ৪০ জনকে গতকাল পর্যন্ত আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে বলে জানান কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়ার পর আগামী ১৭ই মার্চ অনুষ্ঠিতব মুজিব জন্ম শতবার্ষিকীর বড় আয়োজন স্থগিত করা হয়েছে।

বাতিল করা হয়েছে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচ।

অন্তত দুটি গন্তব্যে সব ফ্লাইট বাতিল করেছে দেশটির পতাকাবাহী এয়ারলাইন্স। কমানো হয়েছে অর্ধেক ফ্লাইট।

করোনাভাইরাস আক্রান্ত সবগুলো দেশেই বাংলাদেশের ভিসা দেয়া বন্ধ করা হয়েছে।

এছাড়া মার্চ মাসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে যেসব আয়োজনে জনসমাগম হওয়ার কথা রয়েছে,এসব আয়োজনও বাতিল করার ঘোষণা দিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।

সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।

আক্রান্ত দেশগুলো থেকে বাংলাদেশে এলে তাদের ১৪ দিন বাড়িতে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

প্রবাসীদের এই মুহুর্তে দেশে না আসার আহ্বান জানানো হয়েছে।

দেশের মানুষকে দেশের ভিতরে এবং বাইরে অহেতুক ভ্রমন না করতে বলা হয়েছে।