কঠোর নজরদারিতে রাজধানীর সাড়ে ৩ হাজার বিদেশ ফেরত

কঠোর নজরদারিতে রাজধানীর সাড়ে ৩ হাজার বিদেশ ফেরত

রাজধানীতে অবস্থানরত সাড়ে ৩ হাজার বিদেশ ফেরত লোকের ওপর চলছে কঠোর নজরদারি। হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে এ নজরদারি চালাচ্ছে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন। এছাড়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে নগরীর বাস টার্মিনাল ও লঞ্চঘাটসহ জনসমাগমস্থলে ব্লিচিং পাউডার মেশানো পানি ছিটানো হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো. ইমদাদুল হক বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের বিদেশ ফেরত ১ হাজার ২০০ জনের তালিকা দেয়া হয়েছে। এসব নগরবাসী তাদের বাসা-বাড়িতে হোম কোয়ারেন্টিন মানছেন কিনা, তা খতিয়ে দেখতে কাউন্সিলরদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, পাশাপাশি শহরের জনসমাগমস্থান, লঞ্চ, রেল স্টেশন এবং বাস টার্মিনাল এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখতে ব্লিচিং পাউডার মেশানো পানি ছিটিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হচ্ছে।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল হাই বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশ ফেরত ২ হাজার ৪৯২ জনের তালিকা দেয়া হয়েছে। সেসব লোকেরা তাদের দেয়া ঠিকানা অনুযায়ী কোয়ারেন্টিন করছেন কিনা, সেটা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। যদি কেউ কোয়ারেন্টিন না করেন, তাকে বাধ্য করবেন স্থানীয় কাউন্সিলররা। সব কাউন্সিলরকে এমন নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। এদিকে শনিবার রাজধানীর মহাখালী ও গাবতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করে ডিএনসিসি।

মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন ডিএনসিসির ভারপ্রাপ্ত মেয়র মো. জামাল মোস্তফা। এ সময় তিনি বলেন, আমরা উত্তর সিটিতে স্যানিটেশন কার্যক্রম শুরু করেছি। বাস টার্মিনালগুলোতে স্যানিটেশন করা হচ্ছে। সেসঙ্গে রাস্তায় ব্লিচিং পাউডার ছিটানো হচ্ছে ও পানি দেয়া হচ্ছে। এর পাশাপাশি বাজারগুলোর প্রবেশ মুখেই হ্যান্ডওয়াশ ও স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা আমাদের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করেছি। সে সঙ্গে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের জন্য বিশেষ পোশাকেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সিটি কর্পোরেশনের ৮০টি ইউনিটের মাধ্যমে বাস টার্মিনাল ও রাস্তাঘাট স্যানিটাইজেশন করা হচ্ছে। প্রয়োজনে সিটি বাস সার্ভিসগুলোতেও স্যানিটাইজেশন করা হবে।

বিদেশ ফেরতদের বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত মেয়র বলেন, বিদেশ থেকে দেশে ফেরাদের জন্য সরকার বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করেছে। যা তদারকির জন্য ডিএনসিসিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল হাই, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মোমিনুর রহমান মামুন প্রমুখ।

এদিন সকালে উত্তরা কমিউনিটি সেন্টারে ডিএনসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা একটি সভা করেছেন। ওই সভায় প্রত্যেক ওয়ার্ডে কাউন্সিলরের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। কমিটির সদস্যরা, সম্প্রতি বিদেশ ফেরতদের হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করবে। কেউ কোয়ারেন্টিন না মানলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা প্রদানসহ ওইসব বাড়ি সিল করে দেয়ার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে ওই বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।

এর বাইরে মশক নিধন কর্মীদের মাধ্যমে জীবাণুনাশক তরল ছিটানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মোমিনুর রহমান মামুন যুগান্তরকে বলেন, শহরের প্রধান সড়ক থেকে অলিগলি সর্বত্র ব্লিচিং পাউডার মেশানো পানি ছিটানো হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা বাজারে তরল ওষুধ অনুসন্ধান করছি, যদি সে ধরনের কোনো ওষুধ পেয়ে যাই, তাহলে আমরা সেটা গ্রহণ করব। তবে ব্লিচিং পাউডার পানি মিশিয়ে ছিটালেও ক্ষতিকর জীবাণু প্রতিরোধে ভালো ভূমিকা রাখবে।

এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির নবনির্বাচিত মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। সংস্থার ভারপ্রাপ্ত মেয়র মো. জামাল মোস্তফার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল হাই, সচিব মোজাম্মেল হক, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আমিরুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এম মঞ্জুর হোসেন প্রমুখ।

এমজে/