ঢাকাসহ সারাদেশে ‘করোনা সন্দেহে’ আরো ৮ জনের মৃত্যু

ঢাকাসহ সারাদেশে ‘করোনা সন্দেহে’ আরো ৮ জনের মৃত্যু

রাজধানী ঢাকা, শরীয়তপু‌র, রাজশাহী, সাতক্ষীরা, চট্টগ্রাম, ঝালকাঠি ও নড়াইলে করোনা সন্দেহে অন্তত ৭ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। বুধবার সকালে ও মঙ্গলবার রাতে এদের মৃত্যু হয়।

ঢাকা: শ্বাসকষ্টসহ নভেল করোনাভাইরাসের মতো লক্ষণ নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ষাটোর্ধ্ব ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয় বলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক মো. আলাউদ্দিন জানিয়েছেন।

একটি সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘বৃদ্ধ মারা গেছেন। তিনি অসুস্থ ছিলেন। তার নমুনা নেওয়ার জন্য আইইডিসিআরকে বলা হয়েছে।’

হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ এক স্বাস্থ্যকর্মী বলেন, ওই ব্যক্তি শ্বাসকষ্টসহ অন্যান্য উপসর্গ নিয়ে মেডিসিন বিভাগে এসেছিলেন।

‘নভেল করোনাভাইরাসের উপসর্গ থাকায় তাকে আইসোলেশন ইউনিটে পাঠানো হয়।’

এবিষয়ে জানতে চাইলে সরকারের রোগতত্ত্ব ও রোগ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘কোনো রোগীর তথ্য স্পেসিফিক বলি না। রোগীর পরিচয় নিশ্চিত করা যায় এমন তথ্য দিব না। যদি এসে থাকে তাহলে টেস্ট হয়েছে অথবা হচ্ছে।’

ঢাকা: রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন একজন রোগী মারা গেছেন। মৃত ব্যক্তিটি পুরুষ। বয়স পঞ্চাশের ঘরে।
হাসপাতালের পরিচালক উত্তম বড়ুয়া তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

মঙ্গলবার দুপুরেই সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে রোগীকে ভর্তি করা হয়। সন্ধ্যার দিকে তিনি মারা যান।

উত্তম বড়ুয়া বলেন, ওই রোগী প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। সেখান থেকে তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। কুর্মিটোলা ওই রোগীকে সোহরাওয়ার্দীতে পাঠিয়ে দেয়।

তিনি বলেন, ওই রোগীর শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়নি। তবে দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, মৃত্যুর পর তার শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে শিশু হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

শরীয়তপুর: শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে আইসোলেশনে ভর্তি থাকা ৩৪ বছ‌রের এক যুব‌কের মৃত্যু হ‌য়ে‌ছে।

মৃত ওই যুব‌কের বা‌ড়ি ন‌ড়িয়া উপ‌জেলায়। তি‌নি পেশায় শ্রমিক ছিলেন।

মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) রাত ৯টার দি‌কে তার মৃত্যু হয়।

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের চি‌কিৎসকরা জানান, শ্বাসকষ্ট, জ্বর ও কাশি থাকায় ওই যুবককে মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) সন্ধ্যায় শরীয়তপুর সদর হাসপাতা‌লের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল। রাত ৯টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

এর আগে ১৯ মার্চ কাশি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তি‌নি। পরীক্ষায় তার যক্ষ্মা ধরা পড়ায় তাকে চি‌কিৎসা দেয়া হয়। চিকিৎসা শে‌ষে ২৩ মার্চ তিনি সদর হাসপাতাল থেকে বা‌ড়ি‌তে চ‌লে যান।

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মুনির আহমেদ খান বলেন, তিনি নড়িয়া এলাকার বাসিন্দা। শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে আসেন। শারীরিক অবস্থা খারাপ ছিল তার। শ্বাসকষ্ট থাকায় তাকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছিল। চিকিৎসা দেয়া অবস্থায় তিনি মারা যান।

রাজশাহী: জ্বর ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত এক যুবক রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।

হাসপাতালের করোনা ভাইরাস রোগীদের চিকিৎসার জন্য স্থাপিত আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

তবে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ওই যুবক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত নন। তিনি হাঁপানির রোগী ছিলেন।

মৃত ওই যুবকের বাড়ি নাটোর জেলার লালপুর উপজেলার নবীনগর গ্রামে।

হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস জানান, মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে যুবককে হাসপাতালের করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত রোগীদের জন্য নির্ধারিত ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছিল। ‘জ্বর ও শ্বাসকষ্ট’ থাকার কারণে হাসপাতালের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সাড়ে ৮টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

নড়াইল: জ্বর-শ্বাসকষ্ট আর বমি নিয়ে নড়াইল সদর হাসপাতালে আসার পর এক তরুণ মারা গেছেন। ২৫ বছর বয়সী এই তরুণ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের চিকিৎসকরা।

জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তৌহিদুর রহমান বলেন, মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে ওই রোগীকে তাদের হাসপাতালে আনা হয়। তার শ্বাসকষ্ট ও বমি হচ্ছিল। জ্বর ছিল না। জরুরি বিভাগ থেকে চিকিৎসা দিয়ে ওয়ার্ডে পাঠানোর পরপরই তিনি মারা যান।

সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার কালীগঞ্জে জ্বর, সর্দি, কাশি ও হাঁচি নিয়ে এক নারী মারা গেছেন।

বুধবার ভোরে কালীগঞ্জ উপজেলার বন্দকাটি গ্রামে বাবার বাড়িতে তাঁর মৃত্যু হয়।

উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে ওই নারীর মৃত্যু হয়েছে বলে তারা প্রাথমিকভাবে মনে করছে।

ওই নারীর নাম রাশিদা খাতুন (২৫)। তিনি কালীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর গ্রামের ফতেপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী ও পাশের বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের বন্দকাটি গ্রামের আবদুস ছালামের মেয়ে।

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় শ্বাসকষ্ট ও জ্বর নিয়ে ৭০ বছর বয়সী একজনের মৃত্যু হয়েছে।
মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে পোমরা ইউনিয়নের নিজ বাড়িতে তিনি মারা যান।

পরিবার বলছে, তিনি দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগে ভুগছিলেন। কয়েক বছর ধরে তার শ্বাসকষ্ট ছিল। মঙ্গলবার বিকালে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় তাকে বাড়িতে নেবুলাইজ করা হয়। তার জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট থাকায় স্থানীয় চিকিৎসক তাকে চট্টগ্রাম সংক্রামকব্যাধি হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই তিনি মারা যান। মৃতের পরিবারে বিদেশ ফেরত কিংবা সংস্পর্শে যাওয়ার কোনো ইতিহাস নেই।

বুধবার সকালে তাকে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রাজীব পালিত বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘ওই রোগীর বিষয়ে আমরা খবর নিয়েছি। যতটুকু জেনেছি- কয়েক বছর ধরে তার হৃদরোগ ও শ্বাসকষ্ট ছিল। তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন না বলেই ধারণা করছি। তারপরও বিষয়টি চট্টগ্রাম কন্ট্রোলরুমে জানানো হয়েছে। কারণ, স্থানীয় লোকজন করোনা সন্দেহ করে উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েছিল।’

উপজেলা করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান বলেন, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টার স্থানীয় এক ব্যক্তি মুঠোফোনে আমাকে জানিয়েছেন। আমি তাৎক্ষণিক উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে দেখতে বলেছি। বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।

ঝালকাঠি: ঝালকাঠিতে জ্বর ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে আলভী (৩) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে জেলার কাঁঠালিয়া উপজেলার আমুয়া এলাকার পূর্বপাড় সরদারপাড়া গ্রামে তার মৃত্যু হয়।

আলভীর গত কয়েক দিন পর্যন্ত জ্বর, পাতলা পায়খানা ছিল। গতকাল রাতে অবস্থার অবনতি হলে পরিবারের লোকজন কাঁঠালিয়া আমুয়া স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

আলভী একই গ্রামের শহীদ উদ্দিন সরদারের ছেলে। এ ঘটনায় ওই বাড়ির ছয়টি পরিবারকে ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।