রাজধানীতে ৭ হাসপাতাল ঘুরেও চিকিৎসা মেলেনি অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষিকার, বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু

রাজধানীতে ৭ হাসপাতাল ঘুরেও চিকিৎসা মেলেনি অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষিকার, বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু

বুধবার। হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল। ছয়টি হাসপাতালে বৃদ্ধা মাকে নিয়ে ছুটেছেন সন্তানরা। কিন্তু কোনো হাসপাতালই রাখেননি মাকে। যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন মা। পাশে অসহায় সন্তানরা। দিগ্বিদিক ছুটাছুটি করছেন। এর-ওর হাতে ধরছেন। অনুনয়-বিনয় করছেন। কিন্তু কোনো হাসপাতালের কারোই মন গলছে না। সবার সন্দেহ করোনা রোগী।

অবশেষে মগবাজারের রাশমনো হাসপাতাল আশা দিলো। ভর্তি নেয়া হবে। দিন গড়িয়ে রাত আটটা। রাজধানীতে এখন এ সময়ে মধ্যরাতের পরিবেশ। রাস্তায় ছুটে চলে অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষিকাকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স। যতই এগিয়ে যাচ্ছে অ্যাম্বুলেন্স ততই অবনতি হচ্ছে মায়ের অবস্থা। অবশেষে হাসপাতালে পৌঁছানোর পরও গড়িমসি। ফেলে রাখা হয় ঘণ্টাখানেক। শেষ পর্যন্ত বিনা চিকিৎসাতেই মৃত্যু।

এমন মৃত্যুর শিকার হয়েছেন অবরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষিকা মাহমুদা খানম (৭২)।

অভিযোগ রয়েছে, রাত সাড়ে দশটার দিকে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর পর নিচতলায় মরদেহ রেখে সটকে পড়েন হাসপাতালের চিকিৎসক-স্টাফরা।

ওই শিক্ষিকার ছেলে সাংবাদিক সৈয়দ শাহীন বলেন, মগবাজারের এই হাসপাতালটিতে ফোন দিলে তারা আইসিইউ খালি আছে বলে জানান। কিন্তু হাসপাতালে আসার পর এমন অবস্থা দেখে তারা বলেন, আইসিইউ খালি নেই। তারা আমার মাকে প্রাথমিক ট্রিটমেন্টও দেয়নি।

একপর্যায়ে হাসপাতালে আসেন রমনা থানা পুলিশ। তাদের অনুরোধেও কাজ হয়নি। রাতে সাড়ে দশটায় তার মৃত্যু হয়। হতভাগ্য সন্তানরা জানান, দীর্ঘদিন শ্বাসকষ্টের রোগী ছিলেন তাদের মা। করোনার এ সময়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ধর্ণা দিলেও তাকে কেউই চিকিৎসা দিতে রাজি হয়নি।

জানা যায়, মাহমুদা খানম গত দশবছর নিয়মিত চেক আপ করাতেন এ্যাপোলো হাসপাতালে। বুধবার সকালে হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে, সন্তানরা মাকে নিয়ে হাসপাতালে আসেন। সেখানে অনেক অনুরোধ করার পর তাকে রাখেন তারা। কিন্তু কোনো আইসিইউর ব্যবস্থা হয়নি। পরে সন্তানদের অনুরোধে অক্সিজেন দিয়ে রাখে কিছুক্ষণ। এখান থেকে বাধ্য হয়ে রোগীকে সরিয়ে নেন স্বজনরা।

সৈয়দ শাহীন আরো বলেন, একেক করে রাজধানীর অনেকগুলো হাসপাতালে আমরা গিয়েছি। কিন্তু কেউ আমার মাকে চিকিৎসা দিতে রাজি হয়নি। সবার সন্দেহ করোনা। অথচ করোনা নির্ণয় করার মতো কোনো কিছু নেই হাসপাতালগুলোতে।