আইসোলেশন থেকে পালিয়ে মারা গেলেন গ্রামে, উপসর্গে মৃত্যু আরও ১৪

আইসোলেশন থেকে পালিয়ে মারা গেলেন গ্রামে, উপসর্গে মৃত্যু আরও ১৪

ঢাকার একটি বাড়ির নিরাপত্তারক্ষী ছিলেন কুষ্টিয়ার এক যুবক (৩৮)। সম্প্রতি ইতালি ফেরত এক প্রবাসী করোনা ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে সেই বাড়িতে এসেছিলেন। তার কাছ থেকে সংক্রমিত হন নিরাপত্তারক্ষী। পরে চিকিৎসার জন্য তাকে হাসপাতালের আইসোলেশনে পাঠানো হয়। সেখানে কয়েক দিন থাকার পর ৩ দিন আগে নিজ বাড়ি উজানগ্রাম ইউনিয়নের মৃত্তিকাপাড়ায় পালিয়ে যান। বিষয়টি গোপন রাখে তার পরিবার।

এর মধ্যেই গত শুক্রবার ওই যুবক গ্রামের মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করতেও যান। ওইদিন সন্ধ্যায় বাড়িতেই তিনি মারা যান। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসন ওই এলাকা লকডাউন করে দেয় এবং মৃতের নমুনা সংগ্রহ করেন কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন। এদিকে জেলার দৌলতপুর উপজেলায় জ্বর, হাঁচি-কাশি ও শ্বাসকষ্টে বছর পঁয়ত্রিশের আরও এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে শুক্রবার বিকালে।

এ ঘটনায় আশপাশের কয়েকটি বাড়ি লকডাউন করে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। এ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিনের মতো করোনা ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন আরও ১২ জন। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক, জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে এ তথ্য জানা যায়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরশহরে এক নারীর মৃত্যুর পর নমুনা সংগ্রহ করেছে সদর উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। গতকাল শনিবার সকাল ৭টায় শহরের কাউতলী এলাকায় নিজ বাসায় ৩৫ বছর বয়সী ওই নারী মারা যান বলে জানান সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ একরাম উল্লাহ।

পরে সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাখাওয়াত হোসেনের নেতৃত্বে একটি মেডিক্যাল টিম গিয়ে তার নমুনা সংগ্রহ করে। ওই নারীকে করোনায় মারা যাওয়া রোগীদের নিয়মেই দাফন করা হয়। এদিকে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নবীনগর উপজেলায় করোনার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা এক বৃদ্ধার (৮০) মৃত্যু হয়েছে। তার নমুনাও সংগ্রহ করা হয়েছে।

খুলনা : খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি থাকা ৬ মাসের একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার মধ্যরাতে মারা যাওয়া শিশুটি জ্বর, সর্দি-কাশি ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ছিল বলে জানান হাসপাতালের করোনা ইউনিটের ফোকাল পার্সন ডা. শৈলেন্দ্রনাথ বিশ্বাস। তার করোনা ভাইরাস ছিল কিনা, তা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর : জেলার কমলনগর ও রামগঞ্জে জ্বর ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এক বৃদ্ধসহ দুজনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার মধ্যরাতে মৃত্যু হলেও তাদের দাফন করা হয় শনিবার সকালে। এ ঘটনায় কমলনগরে মৃত বৃদ্ধের (৫৭) বাড়িসহ চারটি ও রামগঞ্জে মৃত যুবকের (৩৫) বাড়িসহ পাঁচটি বাড়ি লকডাউন করে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। তাদের দুজনেরই মৃতদেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

গাজীপুর : করোনা লক্ষণ নিয়ে গাজীপুরের শ্রীপুরে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ তার নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠিয়েছে। বাড়ির লোকজনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রণয় ভূষণ দাস বলেন, ‘শুক্রবার রাতে নগরহাওলা গ্রামে করোনা উপসর্গ নিয়ে ৪৫ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। ৮-১০ দিন ধরে তিনি ঠা-া-জ্বরে ভুগলেও করোনা আতঙ্কে কোনো চিকিৎসাকেন্দ্রে যাননি।’

মাদারীপুর : কালকিনি উপজেলায় করোনার লক্ষণ নিয়ে দুবাই প্রবাসীর স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল ভোরে তিনি মারা যান। স্বাস্থ্য বিভাগ তার নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠিয়েছে। একই সঙ্গে তাদের বাড়ি লকডাউন করে দিয়েছে প্রশাসন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম।

নওগাঁ : পত্নীতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গতকাল সকাল ৭টার দিকে ২৬ বছরের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। করোনা সন্দেহে এলাকার লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। গ্রামে লাশ দাফন করতে দেননি স্থানীয়রা। তবে পরিবারের দাবি, ওই নারী শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন।

মানিকগঞ্জ : সদর উপজেলার ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের পূর্ব শানবান্ধা গ্রামে শ্বাসকষ্টে এক ডিম ব্যবসায়ী (৬০) মারা গেছেন। গতকাল দুপুরে তার মৃত্যু হলেও বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে নমুনা সংগ্রহ করে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। স্থানীয় ইউপি সদস্য তপন কুমার বালো জানান, ওই ব্যক্তি ইউনিয়নের একটি বাজারে ডিমের ব্যবসা করতেন। কয়েক বছর ধরে তিনি শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগছিলেন। দিন বারো আগে দোকানে তার শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশে ওই দিন থেকেই হোম কোয়ারেন্টিনে ছিলেন। শনিবার সেখানেই তিনি মারা যান।

ফরিদপুর : সর্দি ও জ্বরে মধুখালীতে এক কৃষি শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার রাতে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যাওয়া ওই ব্যক্তির বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার খাজুড়িয়া গ্রামে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যেতে পারেন বলে সন্দেহ করছেন চিকিৎসকরা। তাই নমুনা সংগ্রহ করে গতকাল ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

বরগুনা : বামনা উপজেলার রামনা ইউনিয়নে ৬০ বছরের এক পল্লীচিকিৎসক করোনা উপসর্গ নিয়ে গতকাল বিকালে মারা গেছেন। তিনি এক সপ্তাহ ধরে জ্বর-সর্দি, শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা. হুমায়ুন শাহিন খান জানান, ওই ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। রিপোর্ট এলেই করোনায় আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে কিনা জানা যাবে।

মোহনগঞ্জ (নেত্রকোনা) : শ্বাসকষ্টসহ করোনার উপসর্গ নিয়ে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে এক ব্যক্তির (৫৫) মৃত্যু হয়েছে। জানা যায়, গতকাল সকালে চিকিৎসার জন্য তিনি মোহনগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে আসেন। পরে করোনার নমুনা সংগ্রহ করে ওই রোগীকে বাড়ি ফিরে যেতে বলেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। এর ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই তার মৃত্যু হয় বলে নিশ্চিত করেছেন আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. সুবীর সরকার।

এমজে/