নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বেতন দেয়ার আহ্বান বিকেএমই ও বিজিএমইএ’র

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বেতন দেয়ার আহ্বান বিকেএমই ও বিজিএমইএ’র

করোনা ভাইরাসের মহামারীর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে দেশের প্রধান রপ্তনি খাত পোশাকশিল্পে। বেশিরভাগ পোশাক কারখানার অর্ডার বাতিল বা স্থগিত হয়ে গেছে। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করা শ্রমিকদের বেতন দেয়া নিয়ে সংকটে পড়েছেন কারখানা মালিকরা। এক্ষেত্রে সংকট কাটিয়ে উঠতে পোশাক কারখানাগুলোর জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার। তারপরও শ্রমিকদের বেতন দিতে দেরি করছে বেশ কিছু কারখানা।

সারাদেশে বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা তাদের বেতনের দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন। গাজীপুরে লকডাউন ভেঙে সকালে বেতনের দাবিতে কারখানার সামনে বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকরা। নগরীর সাইনবোর্ড এলাকার ইস্ট-ওয়েস্ট গ্রুপ ও ভোগড়ার নিউওয়ে ফ্যাশনস লিমিটেড এবং টঙ্গীর গাজীপুরার এসআরপি ও মিক সোয়েটার কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন। এক পর্যায়ে ইস্ট-ওয়েস্ট গ্রুপ ও ভোগড়ার নিউওয়ে ফ্যাশনস লিমিটেডের শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন।

নিউওয়ে ফ্যাশন লিমিটেডের নিটিং অপারেটর শাহিনা বেগম অভিযোগ করেন, আমরা দুই মাস ধরে বেতন ভাতা পাচ্ছি না।

কারখানা কর্তৃপক্ষ দেই-দিচ্ছি করে ঘুরাচ্ছে। এখন আমাদের ঘরে খাবার নেই। বাড়ি ভাড়া ও দোকান বাকি পড়ে আছে। পাওনাদারদের জন্য বাসা থেকে বের হতে পারছি না। এর মধ্যে গাজীপুর লকডাউন করা হয়েছে। এখন আমাদের না খেয়ে মরার উপক্রম হয়েছে।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বলেন, আমরা মালিকদের পক্ষ থেকে যে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে সেটা এখনও পার হয়নি। আমরা আশাবাদী ১৬ই এপ্রিলের মধ্যে ৮০ ভাগ পোশাক কারখানায বেতন দিয়ে দিতে পারবে।

পোশাক কারখানা মালিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা আপনাদের কারখানার গেটে বেতন প্রদানের তারিখ নির্দিষ্ট করে নোটিশ দেন। শ্রমিকরা আশ্বাস পেতে চায়। বেতন প্রদানের সঠিক তারিখ নিশ্চিত করা মালিকদের দায়িত্ব।

বিজিএমইএ সভাপতি শ্রমিকদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা দয়া করে ধৈর্য ধরুন। বর্তমানে রাস্তাঘাট বন্ধ রয়েছে। ব্যাংকগুলোও পুরোপুরি চালু না। এই মুহূর্তে কেউ স্বস্তিতে নেই। দয়া করে বিশ্বাস করুন আমরা মার্চের বেতন দেব।

এদিকে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর পক্ষ থেকে এক যৌথ প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে পোশাকশিল্পের মালিকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলা হয়, সারা বিশ্ব এক কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলায় সংগ্রাম করছে। পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে আমাদের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা নিয়ে এক অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। এমতাবস্থায় ব্যাংক কর্মকর্তাগণকে বিনীত অনুরোধ করছি এ মহা সংকট কালে আপনারা আপনাদের গ্রাহকদের শ্রমিকের বেতন প্রদানের ক্ষেত্রে সহজ শর্তে সহযোগিতা করুন। অনেক স্থানে লকডাউন থাকলেও শ্রমিকদের বেতনের টাকা দেয়ার জন্য ২/৩ দিন কয়েক ঘণ্টা খোলা রেখে বেতনের টাকাটা দেয়ার ব্যবস্থা করুন।

পোশাকশিল্পের মালিকদের উদ্দেশ্যে বলা হয়, আপনারা যারা এখনও মার্চ মাসের বেতন পরিশোধ করেননি যে কোন পরিস্থিতিতে পরিশোধ করার ব্যবস্থা করুন। এক সঙ্গে সমবেত না করে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গ্রুপে ভাগ করে এবং সময় ভাগ করে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখ বেতন পরিশোধ করুন। যারা এখনও শ্রমিকদের ব্যাংক বা মোবাইলে আর্থিক সেবা (এমএফএস) একাউন্ট করতে পারেননি অতি দ্রুত তা সম্পন্ন করুন। এমএফএস প্রতিষ্ঠান সমূহ ‘নগদ’, ‘রকেট’ও ‘বিকাশ’ একাউন্ট করার জন্য সর্বপ্রকার সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে। প্রয়োজনে বিজিএমইএ বিকেএমইএ’র সহযোগিতা নিন।

মালিকদের উদ্দেশে বলা হয়, মনে রাখবেন ‘শ্রমিক বাঁচলে শিল্প বাঁচবে, শিল্প থাকলে শ্রমিক বাঁচবে।’ আমরা জানি আপনারা শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণে সচেষ্ট আছেন। তারপরও বলবো বিষয়টি অগ্রাধিকার দিন। শ্রমিকদের মার্চ মাসের বেতন পরিশোধ করা হলে সরকারের দেওয়া ঋণ সুবিধা পেতে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ এবং সরকারের পক্ষ থেকে সর্বাত্বক সহযোগিতা পাবেন।

বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিজিএমইএ’র সদস্যভুক্ত দেশের ২ হাজার ২৭৪টি পোশাক কারখানার মধ্যে এ পর্যন্ত ৬৭১টি পোশাক কারখানায় বেতন দেয়া হয়েছে।