চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে সরকারের বৈষম্যমূলক আচরণে ড্যাবের নিন্দা

চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে সরকারের বৈষম্যমূলক আচরণে ড্যাবের নিন্দা

চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের সঙ্গে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বৈষম্যমূলক আচরণের নিন্দা জানিয়েছে ডক্টরস এসোসিয়েশনস অব বাংলাদেশ (ড্যাব)।

বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ নিন্দা জানায় সংগঠনটি।

বিবৃতিতে সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ ও মহাসচিব ডা. মো. আব্দুস সালাম বলেন, করোনা ভাইরাস বিশ্বব্যাপী মহামারী আকার ধারণ করার পর থেকেই সকল চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীরা তাদের পেশার সম্মান সমুন্নত রাখতে চিকিৎসা সেবা প্রদান করে যাচ্ছে। সারা বিশ্ব তাদের এই আত্মত্যাগকে ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে সম্মানিত করেছেন। বাংলাদেশের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীরা যথাযথ ব্যাক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী ব্যতীত সম্মুখ যোদ্ধা হিসেবে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে নিরলসভাবে লড়াই করে যাচ্ছে। করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবা প্রদান করতে গিয়ে ইতিমধ্যে ৬০০ জন চিকিৎসকসহ সহস্রাধিক স্বাস্থ্যকর্মী ভাইরাসটির সংক্রমণের শিকার হয়েছেন।

এছাড়া সংখ্যক চিকিৎসক আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিনে আছেন। অথচ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ শুরু থেকেই চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন নিবর্তনমূলক, অসম্মানজনক, বৈষম্যমূলক, বিমাতাসূলভ, পরিপত্র জারি করেছেন।

তারা আরো বলেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সর্বশেষ চিকিৎসকদের জন্য প্রেরিত নকল ব্যাক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী গ্রহণ না করায় এবং প্রকৃত সুরক্ষা সামগ্রী নিশ্চিত করার দাবী জানানোর প্রেক্ষিতে বিভিন্ন হাসপাতালের পরিচালক, সহকারী পরিচালকসহ চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে বিধিবহির্ভুতভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। কোন কোন ক্ষেত্রে পরিপত্র জারি করার পর প্রত্যাহারও করা হয়েছে। এতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সমন্বয়হীনতা বিদ্যমান এবং পরিপত্র জারির ক্ষেত্রে চিকিৎসক সমাজের প্রতি কোন বিশেষ মহলের আক্রোশ ও প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।

তারা বলেন, প্রেষণে থাকা চিকিৎসকবৃন্দ তাদের স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠনের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি চিকিৎসা সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন। এমনকি উক্ত প্রতিষ্ঠান সমূহের করোনা ইউনিটের বিধি মোতাবেক নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছেন। এমতাবস্থায় তাদের প্রেষণ স্থগিত করে অন্যত্র পদায়ন করা হলে তাদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হবে এবং চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হবে।

তারা বলেন, ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে চীনের উহানে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর সরকারের উচিত ছিল জরুরি ভিত্তিতে জাতীয় করোনা প্রতিরোধ কমিটি গঠনপূর্বক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ নীতিমালা প্রণয়ন করে সেই মোতাবেক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা।

কিন্তু সরকার বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের কল্যাণের বিষয় বিবেচনায় না নিয়ে একনায়ক মানসিকতায় এককভাবে দলীয় বিবেচনায় মহামারী মোকাবিলার চেষ্টা করেছে। ফলশ্রুতিতে শুরু থেকেই সমন্বয়হীন বিশৃংখল পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।

বিদেশ থেকে আগত ব্যাক্তিদের স্ক্রিনিং করার সামর্থ্য সরকারের ছিলো না, এমনকি তাদেরকে যথাযথভাবে আইসোলেশন বা কোয়ারেন্টিনে রাখতেও সরকার ব্যর্থ হয়েছে। যার ফলে ভাইরাস সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

তারা বলেন, করোনা মহামারী প্রতিরোধের যথেষ্ট হোমওয়ার্ক না থাকায় সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাসময়ে লকডাউনের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সমর্থ হয়নি। উপরন্ত লকডাউনকালীন সময়ে প্রান্তিক দরিদ্র জনগোষ্ঠীর নুন্যতম খাদ্য চাহিদা পূরণে অক্ষমতায় পরিচয় দিয়েছে। তারা সরকারকে শুভ মানসিকতা নিয়ে জনগণের জন্য কল্যাণকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার আহবান জানিয়েছেন।

ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) সভাপতি ও মহাসচিব চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের বিরুদ্ধে এ যাবত জারিকৃত হঠকারী পরিপত্র প্রত্যাহারপূর্বক ভবিষ্যতে অসম্মানজনক, অসৌজন্যমূলক, বিমাতৃসুলভ. প্রতিহিংসা পরায়ন সিদ্ধান্ত না নেয়ায় আহবান জানান এবং প্রয়োজনে করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় আরো নবীন চিকিৎসক নিয়োগ দিয়ে অনতিবিলম্বে উচ্চ শিক্ষার নিমিত্তে প্রেষণে থাকা চিকিৎসকদের শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখার ব্যবস্থা করার জোর দাবি জানান।