মায়ের মৃত্যুর পর-

জিয়া হায়দার গড়ে তুলছেন চিকিৎসা অনিয়ম প্রতিরোধ ফোরাম

জিয়া হায়দার গড়ে তুলছেন চিকিৎসা অনিয়ম প্রতিরোধ ফোরাম

বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমরা সবাই কখনো না কখনো সরকারী বা বেসরকারি চিকিৎসা সেবার দ্বারস্থ হই। তবে সেইসব অভিজ্ঞতা সবসময় খুব সুখকর হয়না। কম-বেশী ভোগান্তি আমাদের সবাইকে পোহাতে হয়েছে এবং হচ্ছে। আর এই ভোগান্তির অসহনীয় মানসিক চাপ যে কী, তা ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন। কিন্তু নিজের দেশের স্বাস্থ্য সেবাখাতে এতো অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা আর কত দিন মেনে নিব? এভাবে আর নয়। আজ সময় এসেছে নিজের চিকিৎসা অধিকার তথা বাঁচার অধিকার নিয়ে স্বকন্ঠ দাবি জানানোর। সকলের সম্মিলিত দাবি। সেই লক্ষ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের এই উদ্যোগ- ‘চিকিৎসা অনিয়ম প্রতিরোধ ফোরাম’।

মানুষের সীমাহীন ভোগান্তি:
আমরা দেখেছি, বিভিন্ন বেসরকারী হাসপাতালে শুধু রোগীরাই নয়, সাধারণ চিকিৎসক ও নার্সরাও নানাভাবে ভুক্তভোগী। সেখানে মানসম্মত চিকিৎসা না পেয়েও রোগীকে যেমন গুনতে হয় চড়া মূল্য, তেমনি চাকুরী করলেও চিকিৎসক ও নার্সদের জন্য নেই কোন চাকুরী বিধিমালা। এ যেন জীবন বাঁচানোর জন্য সেবা প্রদানকারী কোন প্রতিষ্ঠান নয়, বরং যাকে যেভাবে পারা যায় সেভাবে ঠকিয়ে রমরমা ব্যবসা করবার এক অসুস্থ প্রতিযোগিতার কারখানা। এসবের চাপে পড়ে আপনার আমার জীবন প্রদীপ নিভে গেলেও তাতে তাঁদের বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই। তাঁরা বহাল তবিয়তে ব্যবসা করেই যাচ্ছে। এইতো সেদিন আমরা প্রত্যক্ষ করলাম, ইউনাইটেড হসপিটালে ভর্তি থাকা একজন চিকিৎসকের মা কিংবা সরকারের একজন অবসরপ্রাপ্ত সচিব চিকিৎসা নিতে গিয়ে কেমন চরম অবহেলার শিকার হয়ে শেষপর্যন্ত মৃত্যুর কোলেই ঢলে পড়লেন। এমন আরও অগনিত ভাইবোন তাঁদের স্বজন হারিয়েছেন, শুধুমাত্র হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালীপনা, দুর্ব্যবহার, কিংবা অপেশাদার আচরণের কারনে।

আমাদের প্রয়াস ও প্রত্যয়:
এধরনের অনৈতিক এবং অমানবিক আচরণের বিরুদ্ধে অনেকেই বিচ্ছিন্নভাবে জোরালো পর্যবেক্ষন তুলে ধরেছেন, বিচারের দ্বারস্থ হতে চেয়েছেন, কিংবা সমর্থন চেয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর আবেদনও করেছেন কিন্তু ঐসব বিচ্ছিন্ন কণ্ঠস্বর রাষ্ট্রের নীতি-নির্ধারকদের কাছে পৌঁছায় না। তাই সকলের কষ্ট-হাহাকার-অসহায়ত্বকে পেছনে ফেলে নিজে বাঁচবার এবং আপনজনদের বাঁচাবার আকুতি নিয়ে আমরা এবার ঐক্যবদ্ধ হবো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শত পরিশ্রমের ফসলকে যারা ভূলুণ্ঠিত করছে, স্বাস্থ্য খাতের সেইসব গুটিকয়েক অসৎ ব্যবসায়ী, দুর্নীতিবাজ আমলা ও বিকারগ্রস্থ-লোভী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চরম অন্যায় জনসমক্ষে তুলে ধরবো। জীবন সায়াহ্নে এসেও স্বজন হারানোর যে কষ্ট ভোলা যায়না, সেই শোককে আমরা এবার শক্তিতে পরিণত করতে চাই। গড়ে তুলতে চাই সামাজিক প্রতিরোধ ও জনমত!!! চাই আপনাদের সকলের অকুণ্ঠ সহযোগিতা। আর যেহেতু বিষয়টি স্বাস্থ্য সুরক্ষা, জবাবদিহিতা, এবং আইনের সঙ্গে জড়িত, তাই আমাদের সম্মিলিত প্রয়াসে বর্তমান সংসদ নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর সমর্থন অনিবার্য।

সম্মানিত সদস্যদের প্রতি আহবান:
আসুন, সকলের না বলা কষ্টের কথা এই ফেইসবুক ফোরামে তুলে ধরি। সকলকে জানাই আমাদের ঘাড়ে চেপে বসা ‘ব্যবসা-সর্বস্ব’ বেসরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থা কতোটা ঘৃণ্য! আপনাদের শেয়ারকৃত একেকটি লেখা, ছবি, কিংবা ভিডিও হবে ঐসব অসাধু স্বাস্থ্য ব্যবসায়ীদেরকে আইনের আওতায় আনার হাতিয়ার। ওদের অপশক্তি আমাদের সম্মিলিত শক্তির কাছে কিছুই না। আমাদের মনে রাখতে হবে, চিকিৎসা পাওয়া অনুগ্রহ নয়- অধিকার।

ফোরামের লক্ষ্য/ ভিশন:
একটি জনমুখী, মানবিক, ও জবাবদিহিতামূলক স্বাস্থ্যব্যবস্থা, যেখানে মুনাফা নয় বরং প্রতিটি রোগী-চিকিৎসক-নার্সদের অধিকার সংরক্ষিত থাকে সর্বাগ্রে।

ফোরামের বিশেষ উদ্দেশ্যসমূহ:
(ক) বাংলাদেশের সকল নাগরিকের নিরাপদ ও মানসম্পন্ন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করা; (খ) চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের চাকুরী বিধিমালা নিশ্চিত করা ও সেবার মান উন্নয়নে অনুপ্রানিত করা; (গ) স্বাস্থ্য অব্যবস্থাপনায় ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের আইনি সহায়তা প্রদান করা; (ঘ) সরকারী ও বেসরকারি স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি বন্ধ করে জনগণের নিজের পকেটের খরচ ৩২% এর নীচে নামিয়ে আনার অ্যাডভোকেসি; ঙ) চিকিৎসা খাতে জাতীয় বাজেট বাড়িয়ে আধুনিক ও গবেষণামুখি চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তোলার অ্যাডভোকেসি।

চলুন জেনে নিই– এই ফোরামের নিয়মাবলী: কী কী পোস্ট করা যাবে এই ফোরামে?

চিকিৎসা পাওয়ার ক্ষেত্রে অবমাননা, অবহেলা, খামখেয়ালীপনা, অজুহাত, আর্থিক বা মানসিক ক্ষতি, প্রতারনা, প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা প্রদানে অনীহা, দূর্নীতি, শ্রেণী-বৈষম্য তথা বিভিন্ন ভাবে অনিয়মের শিকার হবার ঘটনা, কিংবা এতদ সংশ্লিষ্ট তথ্য বহুল লেখা/স্থিরচিত্র/ভিডিও/সংবাদ-লিঙ্ক, অনিয়ম প্রতিরোধে উৎসাহব্যঞ্জক বক্তব্য ও আইনি পরামর্শ।

কী কী পোস্ট করা যাবে না?
বিজ্ঞাপন, ব্যক্তিগত বাক্যালাপ, ট্রল, ধর্মীয় প্রচার বা অবমাননাকর পোস্ট, রাজনৈতিক পোস্ট।

জেনে রাখবেন–
১। জীবন বাঁচানোর অধিকার রক্ষার এই ফোরামকে পরিচ্ছন্ন রাখা আপনারই দায়িত্ব। আপনার সমমনা, কিংবা অন্যের মন-মানসিকতা ও চিন্তা-চেতনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল এমন মানুষকে এই ফোরামে যুক্ত (ইনভাইট) করুন। তবে, ফেক আইডি থেকে দূরে রাখবেন এই ফোরামকে।

২। পোস্টের গঠনমূলক সমালোচনা এখানে গ্রহণযোগ্য। তবে অন্যকে ব্যাক্তিগত ভাবে আঘাত করে কিছু লেখা, অসম্মানজনক শব্দ, অভব্য আচরণ, বা অশ্লীলতা একেবারেই কাম্য নয়।

৩। ধর্ম-বয়স-জেন্ডার-শ্রেনীভেদে সকল মানুষের প্রতি সম্মানবোধ প্রদর্শন করতে হবে।

৪। পোস্ট করার ব্যাপারে নিজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হলে অ্যাডমিনকে (ইনবক্সে) অবহিত করে ছদ্মনামে ঘটনা প্রকাশ করতে পারেন। সংবেদনশীল যেকোন তথ্য অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে সংরক্ষণ করা হবে।

৫। কোনও বিশেষ দলভিত্তিক রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা কিংবা কোনও রাজনৈতিক দলকে হেয় প্রতিপন্ন করে পোষ্ট দেয়া সমীচীন নয়। মনে রাখতে হবে, আমাদের এই যাত্রা জীবন বাঁচাতে প্রাতিষ্ঠানিক অনিয়মের বিরুদ্ধে যা কোনভাবেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত নয়।

৬। কোনও লিঙ্ক বা অন্য কারও পোষ্ট শেয়ার করলে, সেই সাথে আপনার নিজ ভাষায় সংশ্লিষ্ট ক্যাপশন দিতে পারেন যাতে অন্যান্য সদস্যরা সেটি পড়তে/ জানতে আগ্রহী হয়।

৭। যেকোন পোস্ট, এই ফোরামের উদ্দেশ্যের সাথে সামঞ্জস্যহীন বা সাংঘর্ষিক প্রতীয়মান হলে অ্যাডমিনকে জানানোই শ্রেয়। সেক্ষেত্রে অ্যাডমিন প্যানেল বিষয়টি পর্যালোচনা করে পোস্ট ও পোস্টদাতার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। ফোরামের লক্ষ্য ও মান রক্ষার স্বার্থে অ্যাডমিন যেকোনও পোস্ট সরিয়ে নেওয়ার অধিকার রাখেন।