নায্য পারিশ্রমিকের দাবিতে লেবাননে বাংলাদেশি শ্রমিকদের ধর্মঘট

নায্য পারিশ্রমিকের দাবিতে লেবাননে বাংলাদেশি শ্রমিকদের ধর্মঘট

নায্য পারিশ্রমিকের দাবি ও নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান “র‍্যামকো”র অমানবিক আচরণের প্রতিবাদে গত দুই সপ্তাহ ধরে ধর্মঘট পালন করছেন লেবাননের প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকরা। প্রতিষ্ঠানটি মাউন্ট লেবানন ও দেশটির রাজধানী বৈরুতের কিছু অংশে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ করে।

জানা গেছে, ডলার সঙ্কটের কারণে র‍্যামকো ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের কর্মরত শ্রমিকরা (যাদের বেশিরভাগই বাংলাদেশি ও ভারতীয়) চুক্তি অনুযায়ী মার্কিন ডলারে বেতন পাচ্ছেন না।

যদিও অর্থনৈতিক সঙ্কটের দরুণ মার্কিন ডলারের বিপরীতে লেবানিজ পাউন্ডের বিনিময় মূল্য প্রায় তিনগুণ কমে গেছে।

লেবাননের নিউজ পোর্টাল আইএমলেবাননের তথ্যানুযায়ী, র‍্যামকোর চুক্তিতে বলা হয়েছে, বিদেশি শ্রমিকদের বেতন, ব্যবসায়িক কাজে আমদানি করা মালামালের দাম ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচ মার্কিন ডলারে পরিশোধ করবে দেশটির সরকার।

কিন্তু ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া সত্ত্বেও চুক্তির সময়কালীন বিনিময়মূল্য অনুযায়ী শ্রমিকদের বেতন দেওয়া হচ্ছে। ফলে প্রায় তিনগুণ কম বেতন পাচ্ছেন তারা।

প্রতিবাদে গত ১২ মে প্রতিষ্ঠানটির মূল প্রবেশদারে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করেন প্রবাসী শ্রমিকরা।

১৫টি ট্রাকও ভাংচুর করেন তারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ও বিক্ষোভ দমনে সরকারি কর্তৃপক্ষের সহায়তা নেয় র‍্যামকো।

কিন্তু শ্রমিক অসন্তোষ কমতে কমতে ঘটে যায় আরও কিছু অনাকাঙ্খিত ঘটনা।

পরে শ্রমিকরা র‍্যামকোর বিরুদ্ধে অধিকার হননের অভিযোগ আনেন। তারা দাবি করেন, নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান তাদের নায্য ক্ষতিপূরণ ও স্বাস্থ্য সুবিধা দিচ্ছে না।

পাশাপাশি, নিরাপত্তা বাহিনী এনায়েত উল্লাহ নামে এক বাংলাদেশি শ্রমিককে হত্যার চেষ্টা করেছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।

শ্রমিকদের অভিযোগ, গত ৮ এপ্রিল এনায়েতের মানসিক অসুস্থতার লক্ষণ দেখা দিলে র‍্যামকো কর্তৃপক্ষ চিকিৎসা দেওয়ার বদলে তাকে মাটির নিচের একটি অন্ধকারাচ্ছন্ন কক্ষে তিন দিন বন্দি করে রাখে। সেখানে তার ওপর চালানো হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন।

এ বিষয়ে দেওয়া বিবৃতিতে শ্রমিকরা আরও উল্লেখ করেন, “তিনি পুরোপুরিভাবে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন। তারপর সিকিউরিটি গার্ডরা তাকে ক্যান্টিনে বন্দি করে রাখে। উপুড় করে তাকে সেখানে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে শ্বাসরোধের চেষ্টা করা হয়।”

লন্ডন-ভিত্তিক মানবাধিকার থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ইমপ্যাক্ট ইন্টারন্যাশনালের তথ্যানুযায়ী, প্রতিমাসে অন্তত ১০-১৫ জন কর্মীকে পুরোপুরি বা আংশিক মজুরি বঞ্চিত করা হয়। সুপারভাইজারের কাছে অভিযোগ করলে হয় তিনি ভ্রুক্ষেপ করেন না অথবা ক্রুদ্ধ হন।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বৈরুতের বাংলাদেশ দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “মূলত গত নভেম্বর থেকে লেবাননে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ডলারের দাম বেড়ে যায়। ফলে কোম্পানি কর্মীদের ডলারে বেতন না দিয়ে পাউন্ডে বেতন দিচ্ছিলো। এতে কর্মীদের বেতন প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমে যায়।”

তিনি বলেন, “সাধারণত কর্মীরা মাসে ২৬ দিন কাজ করে থাকে। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউন থাকায় কর্মীরা ১ দিন অন্তর অন্তর করে ১৩ দিন কাজ করছে। কোম্পানিও তাদের শুধুমাত্র ওই ১৩ দিনের বেতন দিচ্ছিলো। ফলে তাদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়।”

ফার্স্ট সেক্রেটারি আরও বলেন, “সোমবার কোম্পানির প্রতিনিধিরা অ্যাম্ব্যাসিতে এসেছিলেন। তারা বেতন বাড়াবেন এবং লকডাউনকালীন সময়ে পুরো ২৬ দিনের বেতনই দেবেন বলে কথা দিয়েছেন। মঙ্গলবার আমাদের প্রতিনিধি কর্মীদেরকে বিষয়গুলো জানিয়েছে। তারা আশ্বস্ত হয়েছে।”

র‍্যামকোর আশা, চুক্তি অনুযায়ী ডলার অথবা পরিবর্তিত দাম অনুযায়ী (১ ডলার সমান ৪,০০০ হাজার লেবানিজ পাউন্ড) বেতন দেবে সরকার।

প্রতিষ্ঠানটির সিইও ওয়াসিম আম্যাখ লেবাননের টেলিভিশন মুর্‌ টিভিকে বলেন, যেহেতু মার্কিন ডলার নিয়ে সমস্যা সেহেতু সবচেয়ে ভাল উপায় হলো প্রবাসী শ্রমিকদের দেশে ফেরত পাঠানো।

ওয়াসিম বলেন, “এতে করে হয়ত সেইসব লেবানিজ নাগরিকদের জন্য নতুন সুযোগের সৃষ্টি হবে যাদের এখন অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে কাজের প্রয়োজন।”