যশোরে ‘পুলিশের নির্যাতনে’ কলেজছাত্রের কিডনি নষ্ট, তদন্তে কমিটি

যশোরে ‘পুলিশের নির্যাতনে’ কলেজছাত্রের কিডনি নষ্ট, তদন্তে কমিটি

যশোরে এক কলেজছাত্রকে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাঁকে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরিবারের অভিযোগ, পুলিশের নির্যাতনে ওই কলেজছাত্রের দুটি কিডনি অকেজো হয়ে গেছে। ঘটনা তদন্তে পুলিশ তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

ওই কলেজছাত্রের নাম ইমরান হোসেন (২৩)। তিনি যশোর সদর উপজেলার শাহাবাজপুর গ্রামের মো. রাকিব উদ্দীন ওরফে নেছার আলীর ছেলে। ইমরান যশোর সদর উপজেলার কাজী নজরুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।

ইমরান হোসেন বলেন, গত বুধবার সন্ধ্যার দিকে তিনি যশোরের চৌগাছা উপজেলার সলুয়া বাজার থেকে ইজিবাইকে করে বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে একই এলাকার অপর একটি ছেলে ছিল। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছালে সাজিয়ালী ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরা ইজিবাইকটি থামান। এরপর পুলিশ তাঁর সঙ্গে থাকা ছেলেটির ব্যাগ তল্লাশি শুরু করেন। এ সময় ভয়ে তিনি মাঠের মধ্যে দৌড় দেন। পুলিশ তাঁকে ধাওয়া করে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে গিয়ে ধরে বেদম মারপিট করে। এতে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। জ্ঞান ফিরলে তিনি দেখতে পান, তাঁকে পাশের আমবটতলা বাজারের একটি ফার্মেসিতে নেওয়া হয়েছে। এ সময় পুলিশ তাঁর পকেটে গাঁজা দিয়ে আটকের কথা বলে।

ইমরানের বাবা নেছার আলী বলেন, বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে ইমরানের মুঠোফোন দিয়ে পুলিশ তাঁকে ফোন করে। অপর প্রান্ত থেকে বলা হয়, ইমরান অসুস্থ হয়ে আমবটতলায় এক পল্লিচিকিৎসকের কাছে আছেন। সেখানে গেলে পুলিশ তাঁকে ভ্যানে করে সাজিয়ালী পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। এ সময় ইমরানকে ছাড়াতে ৩০ হাজার টাকা দাবি করে পুলিশ। পরে ৬ হাজার টাকা দিলে পুলিশ ইমরানকে ছেড়ে দেয়। ইমরানকে মারপিটের ঘটনা কাউকে বললে রিমান্ডে নিয়ে ফের মারপিটের হুমকি দেয় তারা। রাতে ইমরান গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। বৃহস্পতিবার সকালে তাঁকে যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় রোববার তাঁকে জেলা শহরের বেসরকারি কুইন্স হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেছেন তিনি।

যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগের চিকিৎসক উবায়দুল কাদির বলেন, ইমরান হোসেনের দুটি কিডনির কার্যকারিতা খুবই খারাপ অবস্থায় আছে। রোববার থেকে তাঁর কিডনি ডায়ালাইসিস শুরু হয়েছে। এখনই ঠিক বলা যাচ্ছে না তাঁর কিডনি ভালো হবে কি না।

সাজিয়ালী পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) মুন্সী আনিসুর রহমান বলেন, ঘটনার সময় ফাঁড়ির দায়িত্বে ছিলেন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সুমারেশ সাহা ও সাজদার রহমান এবং চার কনস্টেবল। বিষয়টি নিয়ে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাঁরা বলেছেন, ওই কলেজছাত্র বমি করার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে নির্যাতন করা বা টাকাপয়সা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তাঁরা।

ইমরানের বাবা নেছার আলী তাঁর ছেলেকে নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্যদের শাস্তি চেয়েছেন। এ দাবিতে তিনি রোববার যশোরের পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি তদন্তের জন্য মঙ্গলবার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ‘ক’ সার্কেল মো. গোলাম রব্বানী শেখকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন যশোর পুলিশের বিশেষ শাখার ডিআইও-১ (জেলা ইনটেলিজেন্স কর্মকর্তা) এম মশিউর রহমান এবং কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান। তদন্ত কমিটিকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

যশোরের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। পুলিশ বাড়াবাড়ি করেছে বলে তদন্তে প্রমাণিত হলে, কোনো অবস্থাতেই ছাড় দেওয়া হবে না।