মে মাসে এক-তৃতীয়াংশের বেশি দাফন বেড়েছে ঢাকায়, নারায়ণগঞ্জে দ্বিগুণ

মে মাসে এক-তৃতীয়াংশের বেশি দাফন বেড়েছে ঢাকায়, নারায়ণগঞ্জে দ্বিগুণ

রাজধানীতে চলতি বছরের প্রথম চার মাসের তুলনায় মে মাসে এক-তৃতীয়াংশের বেশি লাশ দাফন হয়েছে। আর রাজধানী পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জে এ সংখ্যা দ্বিগুণ। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৯টি এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনাধীন ৩৩টি কবরস্থান ও তিনটি শ্মশানের হিসাব অনুযায়ী এ তথ্য পাওয়া গেছে। করোনার কারণে এমনটা হতে পারে বলে মনে করেন কবরস্থানগুলোর ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

ঢাকার দুই সিটির অধীন ৯টি কবরস্থানের হিসাব বলছে, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিলের গড় হিসাবের তুলনায় মে মাসে কবরস্থানে এক-তৃতীয়াংশের বেশি লাশ দাফন করা হয়েছে।

মে মাসে ৯টি কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়েছে দুই হাজার ৪২২ জনের। এপ্রিলে এ সংখ্যা ছিল একহাজার ৫২১ জন, মার্চে এক হাজার ৪৭৭ জন, ফেব্রুয়ারিতে এক হাজার ৪৬১ জন এবং জানুয়ারিতে দাফন করা হয় এক হাজার ৫২৪ জনকে। এই চার মাসের গড় হিসাবে দেখা যায়, শুধু মে মাসে এর এক-তৃতীয়াংশের বেশি লাশ দাফন হয়েছে। চলতি বছরের প্রথম ৫ মাসে রাজধানীতে লাশ দাফন হয়েছে মোট ৮ হাজার ৪০৫ জনের। আর প্রথম চার মাসে দাফন হয়েছে ৫ হাজার ৯৮৩ জনের লাশ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন ৯ কবরস্থানের মধ্যে সাতটি ঢাকা উত্তর এবং দুইটি ঢাকা দক্ষিণের। ঢাকা উত্তর সিটির কবরস্থানগুলোর মধ্যে খিলগাঁও তালতলা কবরস্থান এবং রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন কবরস্থানে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া লাশ দাফনের অনুমতি রয়েছে।

রায়েরবাজার বধ্যভূমির স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন কবরস্থানে জানুয়ারিতে ১৬২ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৪৮ জন, মার্চে ১৫৬ জন, এপ্রিলে ১৭৪ জন এবং মে মাসে ৫৫৬ জনের লাশ দাফন করা হয়। এর মধ্যে করোনায় মারা যাওয়া রোগী ছিল ৩৮৮ জন। জুন মাসের প্রথম ৮ দিনে এখানে ১৮৫ জনের লাশ দাফন হয়েছে। এরমধ্যে করোনায় আক্রান্ত ছিলেন ৮১ জন। এই কবরস্থানে স্বাভাবিক সময়ে গড়ে ১৫০-১৭৫ জনের লাশ দাফন হতো বলে জানিয়েছেন কবরস্থানটির সিনিয়র মোহরার আব্দুল আজিজ।

এদিকে, খিলগাঁও তালতলা কবরস্থানে জানুয়ারিতে ৪১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৪ জন, মার্চে ৫২ জন, এপ্রিলে ৩৪ জন এবং সর্বশেষ মে মাসে ৬৪ জনের লাশ দাফন করা হয়। গত পাঁচ মাসে মোট দাফন করা হয় ২২৫ জনের লাশ। এরমধ্যে ১৯১ জন ছিলেন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তির লাশ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকার কবরস্থানগুলোর মধ্যে শুধু এ দু'টি কবরস্থানেই করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের দাফনের অনুমতি রয়েছে। প্রথমে খিলগাঁও কবরস্থানে দাফনের অনুমতি দেওয়া হলেও এখানে জায়গা সংকট দেখা দেয়। এ কারণে গত ৩০ এপ্রিল থেকে রায়েরবাজার কবরস্থানেও দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়। দেখা গেছে, এ দু'টি কবরস্থানে করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরুর মাস মার্চে ২৮৪ জন করোনা রোগীর লাশ দাফন করা হয়। একই মাসে এই দুই কবরস্থানে সাধারণ লাশ (করোনা আক্রান্ত নয়) দাফন করা হয়েছে ৩৩৬ জনের, যা ফেব্রুয়ারি মাসে ছিল ২০০ জন।

এদিকে রাজধানীর অন্য সাতটি কবরস্থানে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের দাফনের অনুমতি না থাকলেও দেখা গেছে, করোনাকালে এসব কবরস্থানের কোনও কোনোটিতে লাশ দাফনের সংখ্যা বেড়েছে। তবে এর সঠিক কারণ বলতে না পারলেও সংশ্লিষ্টদের ধারণা—হয়তো করোনার কারণেই এসব কবরস্থানেও দাফনের সংখ্যা বেড়েছে।

মীরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে জানুয়ারিতে ১৫২ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৩৬ জন, মার্চে ১৪২ জন, এপ্রিলে ১৫১ জন এবং মে মাসে ২০৮ জনের লাশ দাফন করা হয়েছে।

বনানী কবরস্থানে জানুয়ারিতে ৫৪ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৬৮ জন, মার্চে ৭৭ জন, এপ্রিলে ৭১ জন এবং মে মাসে ৯৫ জনের লাশ দাফন করা হয় বলে জানান এই কবরস্থানের সিনিয়র মোহরার আব্দুল হান্নান।

উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরের কবরস্থানের মোহরার মনিরুল ইসলাম জানান, জানুয়ারি মাসে এই কবরস্থানে ২৫ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২৪ জন, মার্চে ২২ জন, এপ্রিলে ২১ জন এবং মে মাসে ২৩ জনের লাশ দাফন করা হয়।

উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টর কবরস্থানে জানুয়ারিতে ১৪ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২১ জন, মার্চে ১৭ জন, এপ্রিলে ১৯ জন এবং মে মাসে ২০ জনের লাশ দাফন করা হয় বলে জানিয়েছেন কবরস্থানটির মোহরার মো. হারুন উর রশিদ।

উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টরের কবরস্থানে জানুয়ারিতে ৫, ফেব্রুয়ারিতে ৪, মার্চে ৯, এপ্রিলে ৬, আর মে মাসে ১২ জনের লাশ দাফন করা হয়েছে।

অপরদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন আজিমপুর ও জুরাইন কবরস্থানেও একই চিত্র দেখা গেছে। ডিএসসিসির উপ-সমাজকল্যাণ ও সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা মো. লুৎফর রহমান সংবাদমাধ্যমকে জানান, আজিমপুর কবরস্থানে জানুয়ারিতে ৮১৪, ফেব্রুয়ারিতে ৭৯১, মার্চে ৭৪০, এপ্রিলে ৭৭৩ জনের লাশ দাফন করা হলেও মে মাসে লাশ দাফনের সংখ্যা বেড়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৭৪ জনে।

এছাড়া, জুরাইন কবরস্থানে জানুয়ারিতে ২৫৬, ফেব্রুয়ারিতে ২৩৫, মার্চে ২৬২, এপ্রিলে ২৭২ এবং মে মাসে ৩৭০ জনের লাশ দাফন করা হয়।

এসব কবরস্থানে দাফনের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে ডিএসসিসির কর্মকর্তা লুৎফর রহমান জানান, করোনার কারণে লাশ দাফনের বাড়তি এমন চিত্র হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।

নারায়ণগঞ্জ করোনা সংক্রমণের হটস্পট হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকায় আগের স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এপ্রিল ও মে মাসে দ্বিগুণ লাশ দাফন হয়েছে। সিটি করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণাধীন ৩৩টি কবরস্থান ও ৩টি শ্মশানের সংশ্লিষ্টদের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, ১ এপ্রিল থেকে ৩০ মে পর্যন্ত দুই মাসে দাফন করা হয়েছে একহাজার ২ জনের লাশ। এরমধ্যে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৫৩ জনের। এসব কবরস্থানে স্বাভাবিক সময়ে দুই মাসে ২৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৩০০ লাশ দাফন হয়ে থাকে—নারায়ণগঞ্জ সিটির মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর ব্যক্তিগত সহকারী আবুল হোসেন সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

দেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। তবে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ১৮ মার্চ। দিন দিন সংক্রমণের হার বেড়েই চলেছে। বাড়ছে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যাও। সরকারি হিসাবে মঙ্গলবার (৯ জুন) পর্যন্ত সারাদেশে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৯৭৫ জন। শনাক্ত হয়েছেন ৭১ হাজার ৬৭৫ জন। আর করোনায় আক্রান্তের পর সুস্থ হয়েছেন ১৫ হাজার ৩৩৬ জন।