মানবপাচারকারী একজনের যাবজ্জীবন অন্যজনের ৩ বছর কারাদণ্ড

কুয়েতে পাপুলের মুখোমুখি ৭ ভিকটিম

কুয়েতে পাপুলের মুখোমুখি ৭ ভিকটিম

কুয়েতে ভিসাবাণিজ্য, মানবপাচার ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে আটক সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল এখনো রিমান্ডে রয়েছেন। সিআইডি তাকে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রেখেছে। তাকে বাংলাদেশি ভিকটিম শ্রমিকদের মুখোমুুখি করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৭ জন শ্রমিকের মুখোমুখি করা হয়েছে, যাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে তিনি আড়াই থেকে ৩ হাজার দিনার করে হাতিয়ে নিয়েছেন রেসিডেন্সি কার্ড নবায়নের নামে।

ওই বাংলাদেশিরা তাদের সমস্ত ডকুমেন্ট হাজির করেছে। তারপরও রিমান্ডে পাপুল নিজেকে বরাবর নির্দোষ দাবি করে চলেছেন। পাপুলের রিমান্ড ও ইন্টারোগেশন বিষয়ে কুয়েতের প্রতিষ্ঠিত জাতীয় দৈনিক আরব টাইমস বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ঢাকায় দূতাবাসের পাঠানো বার্তায়ও প্রায় অভিন্ন তথ্য দেয়া হয়েছে।

কুয়েতের পাবলিক প্রসিকিউশনের আদেশে দেশটির ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট সিআইডি শনিবার রাতে তাকে আটক করে। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত তার জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে কুয়েতের প্রথম সংবাদপত্র দাবিদার কুয়েত টাইমস তাদের ১০ই জুন প্রচারিত লিড রিপোর্টে মানবপাচার ও অবৈধ মুদ্রা পাচারের সঙ্গে জড়িতদের মোকাবিলায় দেশটির পার্লামেন্ট এবং আদালতের সক্রিয়তার বিস্তারিত তুলে ধরেছে।

মানবপাচারকারী, ভিসা ট্রেডিং এবং শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারণাকারীদের বিরুদ্ধে এমপিরা সংসদে কড়া বক্তব্য দিয়েছেন। এসব বন্ধে একটি বিল আনার কথাও জানিয়েছেন।

সেই আলোচনায় অতি সমপ্রতি কুয়েতের আদালতের দু’টি রায়কে রেফারেন্স হিসেবে তুলে ধরে কোর্ট যে সরব সেটি বোঝানো হয়েছে। আপিল আদালতের রায়ে মিশরীয় এক অভিযুক্তের ৩ বছরের জেল হয়েছে গত রবিবার।

তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত ভিসা বাণিজ্য, মানবপাচারের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তিনি কাঁড়ি কাঁড়ি দিনার হাতিয়ে নিয়েছেন। তবে তার সঙ্গে আটক সন্দেহভাজন অন্য ৩ জনকে আদালত খালাস দিয়েছেন।

কুয়েত টাইমসের রিপোর্টে যুগান্তকারী অন্য রায়ের বর্ণনায় বলা হয়- একই আদালত এর আগে কুয়েতের এক ভিসা ট্রেডার এবং তার মিশরীয় পার্টনারকে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে মিশর থেকে ১৫০ জন কর্মী নিয়োগ করা এবং প্রত্যেকে কাছ থেকে ১৫০০ দিনার করে হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হয়। সেই মামলায় ৫ জন অভিযুক্ত ছিলেন। তাদের দু’জনকে দুই বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে সহযোগিতার দায়ে। সংসদের আলোচনায় করোনাকালে ভিসা ট্রেডারদের ধরতে চলমান ক্র্যাকডাউন অব্যাহত রাখার তাগিদ দেয়া হয়েছে।

এমপি পাপুল বিষয়ক তথ্য নিয়ে দূতাবাসের লুকোচুরি

ওদিকে গত শনিবার রাতে কুয়েত সিটির মুশরিফ এলাকার বাসা থেকে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পাপুলকে আটক করে তাদের হেফাজতে নিয়ে যায় সিআইডি। কুয়েতের একজন ব্যবসায়ী হিসেবে তাকে আটকের পর থেকে তিনি তাদের হেফাজতেই রয়েছেন। মাঝখানে তাকে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে তোলা হয়। কোর্টে তার জামিন নামঞ্জুর এবং রিমান্ড মঞ্জুর হয়। গ্রেপ্তারের পর থেকে দূতাবাস পুরো বিষয়টি নিয়ে এক ধরনের লুকোচুরি করছে।

প্রথমে রাষ্ট্রদূত বলেন, তাকে আটক করা হয়নি, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়েছে বলে তিনি শুনেছেন। এখন বলছেন কোথায় আছেন? তা কুয়েত সরকার তাকে জানায়নি। পত্র-পত্রিকা যে যার মতো করে লিখছে এমন দাবিও করেন রাষ্ট্রদূত। বলেন, অফিসিয়ালি এখনও কিছু জানায়নি কুয়েত সরকার। তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চিঠি দিয়েছিলেন, কাল কল করেছেন কিন্তু কাউকেই পাননি বলে দাবি করেন। রাষ্ট্রদূত এসএম আবুল কালাম একেক মিডিয়াকে একেক কথা বলছেন। সর্বশেষ যেদিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন ঢাকায় বললেন তাকে আইনি সহায়তা দেয়া হবে, সেদিন কুয়েতের প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক আরব টাইমসকে রাষ্ট্রদূত বলেন, পাপুল ইস্যুতে দূতাবাস কোনো হস্তক্ষেপই করবে না। আজ তিনি তা পুরোপুরি অস্বীকার করেন। বলেন, ‘আরব টাইমস বা কোনো টাইমস-এর সঙ্গেই গত ৪ বছরে আমার কোনো কথা হয়নি। এরা বানিয়ে লিখেছে।’

প্রসঙ্গত, এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে কুয়েতের আরবি দৈনিক আল কাবাস ও ইংরেজি দৈনিক আরব টাইমস বাংলাদেশের এক সংসদ সদস্যসহ তিন মানবপাচারকারীর বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। কুয়েতের সিআইডি’র বরাত দিয়ে ওই প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়েছিল, এই সংসদ সদস্যসহ তিনজনের একটি চক্র অন্তত ২০ হাজার বাংলাদেশিকে কুয়েতে পাঠিয়ে প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা আয় করেছে। কুয়েতের গণমাধ্যমগুলো অভিযুক্ত সংসদ সদস্যের নাম প্রচার করেনি। তখন কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাস ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অভিযুক্ত সংসদ সদস্যের নাম কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল। কিন্তু পরদিনই কুয়েতি সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্টগুলোকে ‘ফেক নিউজ’ বলে ঢাকায় বার্তা পাঠিয়েছিলেন রাষ্ট্রদূত। তার বার্তা পেয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনও এগুলোকে ‘ফেক নিউজ’ বলেছিলেন এবং নেটিজেনের সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন।