তিন ডিএমডি নিয়োগে নজিরবিহীন কেলেঙ্কারির অভিযোগ ঢাকা ওয়াসার এমডির বিরুদ্ধে!

তিন ডিএমডি নিয়োগে নজিরবিহীন কেলেঙ্কারির অভিযোগ ঢাকা ওয়াসার এমডির বিরুদ্ধে!

ঢাকা ওয়াসায় ডিএমডি নিয়োগে নজিরবিহীন কেলেঙ্কারি সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার তাকসিম এ খান এর বিরুদ্ধে। ঢাকা ওয়াসা বোর্ড প্রক্রিয়া মেনে যোগ্য তিনজন প্রার্থীকে ডিএমডি নিয়োগের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয় এবং সেই বিধিমোতাবেক মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ তিনজন সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্তকে নিয়োগ দেয়ার সুপারিশ মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সেই প্রস্তাব অনুমোদন করে সরকারি নির্দেশ প্রকাশ করে। পরে তাকসিম এ খান মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে সেই নিয়োগ বাতিল করেন। বাতিল হওয়ার পর সংক্ষুব্ধ প্রার্থীরা আদালতে রিট করেন। এখনও বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন আছে, এরপর তাকসিম এ খান পাশ কাটিয়ে সুকৌশলে পরিচালক পদ সৃষ্টি করে তার পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুসরণ করে প্রক্রিয়া মেনে ২০১৭ সালে ঢাকা পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবর ঢাকা ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিয়োগ সংক্রান্ত একটি সুপারিশ প্রেরণ করে। উক্ত সুপারিশমালায় বলা হয়, ঢাকা ওয়াসায় বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ওএন্ডএম), উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (আরপিএন্ডডি) এবং উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অর্থ) যা বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। নোটিশ মোতাবেক গত ১৭, ১৮ ও ১৯ এপ্রিল ২০১৭ তারিখে যথাক্রমে এই তিন পদে মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রাথমিক যাচাই-বাছাই শেষে উক্ত তারিখে অনুষ্ঠিত মৌখিক পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করায় খন্দকার গোলাম মোর্শেদকে উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অর্থ) পদে নিয়োগের লক্ষ্যে সরকারের অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র সহ চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত প্রথম স্থান অধিকারী ব্যক্তির জীবন বৃত্তান্তসহ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের পাস-০২ অধিশাখা থেকে ডিএমডি নিয়োগের অনুমোদন দিয়ে একটি নির্দেশ পত্র প্রকাশ করে। উপসচিব ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম স্বাক্ষরিত উক্ত নির্দেশপত্রে বলা হয়, ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের ৯২ তম বিশেষ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ আইন ১৯৯৬ এর ধারা ২৯(১) মোতাবেক প্রকৌশলী মোঃ লিয়াকত আলীকে ঢাকা ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিয়োগের প্রস্তাব সরকারের অনুমোদনে নির্দেশ জ্ঞাপন করা হলো। এই নিয়োগ পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ আইন ১৯৯৬ অনুসারে নিয়ন্ত্রিত হবে। তার বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধাদি ঢাকা ওয়াসা বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত হবে।

পরবর্তীতে মন্ত্রণালয় থেকে প্রকৌশলী খন্দকার মোর্শেদকে নিয়োগের চুড়ান্ত নির্দেশনা দেয়ার পরেও তাকে ডিএমডি পদে নিয়োগ দেয়নি ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার তাকসিম এ খান। এতে এমডির বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে ঢাকা ওয়াসার উপ সহকারী প্রকৌশলী মোঃ জহির উদ্দিন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে একটি অভিযোগপত্র দায়ের করে। সেই অভিযোগপত্রে বলা হয়, এই নিয়োগ মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রদান করা হলেও তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ভুলভাল বুঝিয়ে মন্ত্রণালয় ও ঢাকা পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ সমস্ত প্রক্রিয়া অনুসরণ পূর্বক নিয়োগ চূড়ান্ত করা ব্যক্তি কে নিয়োগ না দিয়ে উক্ত নিয়োগ বাতিল করে।

বাধ্য হয়ে নিয়োগ বঞ্চিত হওয়া প্রকৌশলী খন্দকার মনজুর মোর্শেদ এই বিষয়ে আদালতে মামলা দায়ের করে। যা আজও বিচারাধীন রয়েছে। তিনি সেসময় ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর একটি অবহিতকরণ আবেদন করে।

প্রকৌশলী খন্দকার মনজুর মোর্শেদ উল্লেখ করেন, ঢাকা ওয়াসার ডিএমডি-আরপিডি পদে নিয়োগ পাওয়ার পর তা বাতিল করায় আমি আইনের আশ্রয় নিয়েছি। বিষয়টি এখন আদালতে নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। এরূপ অবস্থায় বিচারাধীন এই পদে ডিএমডি বা অন্য কোন নামে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হলে তা আদালত অবমাননার পর্যায়ে পড়ে। এরূপ কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য আমি চেয়ারম্যানকে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি। এমতাবস্থায় ডিএমডি নিয়োগের বিষয়টি আদালতে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত উক্ত পদে ডিরেক্টর নামে অন্য কাউকে নিয়োগ না দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন এই প্রকৌশলী। কিন্তু এসব কিছুর তোয়াক্কা না করে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক উক্ত পদে লোক নিয়োগ প্রদান করে।

এ বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলে তাকে মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি। এমনকি তার কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা ওয়াসার একজন প্রকৌশলী এ বিষয়ে বলেন, ঢাকা ওয়াসা বোর্ড মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের প্রতি বিশ্বাসী এবং যোগ্য ৩ প্রার্থীকে ডিএমডি নিয়োগের সুপারিশ করে। যেখানে বিধি মোতাবেক মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হয়, এ পরীক্ষার তিনটি পদের জন্য যে তিনজন সর্বোচ্চ নম্বর পান তাদেরকে নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। তদানীন্তন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী উক্ত প্রস্তাব অনুমোদন দেয়। অথচ পরে তাকসিম এ খান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ভুল বুঝিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ওই তিন যোগ্য ডিএমডিকে বিএনপি বানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে সেই নিয়োগ বাতিল করে। বাতিল হওয়ার পর সংক্ষুব্ধ প্রার্থীরা আদালতে রিট করে। যা এখনও বিচারাধীন রয়েছে। পরে তার পছন্দের বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের আওয়ামী লীগ সমর্থক বানিয়ে অবৈধভাবে নিয়মবহির্ভূতভাবে ডিএমডি পদের বিপরীতে আদালতে মামলা থাকা সত্তেও সুকৌশলে পরিচালক পদ সৃষ্টি করে তার পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দেয়। সুত্র: পরিবর্তন.নিউজ।