স্বাস্থ্যসেবার ভয়াবহ দুরবস্থা: আনু মুহাম্মদ

স্বাস্থ্যসেবার ভয়াবহ দুরবস্থা: আনু মুহাম্মদ

তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ এর আক্রমণে যখন সারাবিশ্বই দিশেহারা, যখন বাংলাদেশের মানুষ চিকিৎসা, খাদ্য ও নিরাপত্তা সংকটে বিপর্যস্ত তখনও সরকার আগের তথাকথিত ‘উন্নয়ন’ ধারা অব্যাহত রেখেই বাজেট (২০২০-২১) পেশ করেছেন। সরকার যখন ‘উন্নয়নের মহাসড়কে’ দেশকে নিয়ে যাবার দাবি করছেন তখন আমরা দেখছি, স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার ভয়াবহ দুরবস্থা, ডাক্তার নার্সের অভাব, সরঞ্জাম নেই, বাজেট নেই, পর্যাপ্ত শয্যা নেই, অক্সিজেন ব্যবস্থা মহাদুর্বল, আইসিইউ হাতেগোনা।

রবিবার দুপুরে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি প্রস্তাবিত বাজেট (২০২০-২০২১) এর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, সুরক্ষার অভাবে ডাক্তার নার্সসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা আক্রান্ত হচ্ছেন, মারা যাচ্ছেন। আর সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাবে, জরুরি ভিত্তিতে করোনা সংকটে কর্মহীন কয়েক কোটি মানুষকে খাদ্য যোগান না দেয়া, অনাহারে-অর্ধাহারে রয়েছে অসংখ্য মানুষ, লকডাউন অকার্যকর হয়ে পড়ছে। এই বাজেটে রাষ্ট্রের এই দায়িত্বের কোনো প্রতিফলন নেই। উল্টো মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি আরো বৃদ্ধির বিভিন্ন প্রকল্পকেই অগ্রাধিকারভুক্ত প্রকল্প হিসেবে সরকার অব্যাহত রেখেছে। পায়রা, মহেশখালী ও মাতারবাড়ীতে বিদ্যুতের হাব বানানো হবে, রামপাল, পায়রা ও মাতারবাড়ীতে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ চলছে পূর্ণোদ্যমে বলে অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন। রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ চলছে। অথচ বিশ্বজুড়ে এসবের চাইতে সুলভ পরিবেশ বান্ধব হিসেবে সৌর ও বায়ু বিদ্যুৎ প্রমাণিত।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, উন্নয়নের কথা বলে সরকার শুধু সুন্দরবন বিনাশী রামপাল প্রকল্প অব্যাহত রাখেনি আরো তিন শতাধিক, সুন্দরবন ও উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য বিপজ্জনক প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। অথচ আইলা, সিডর, বুলবুলের পর সাম্প্রতিক আম্ফান আবারও দেখিয়েছে বাংলাদেশ রক্ষায় সুন্দরবন কতোটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাজেটে শিক্ষা ও গবেষণাকে গুরুত্ব দেয়া হয়নি।

লিখিত বক্তব্যে জাতীয় কমিটি দাবি করে, অবিলম্বে রামপাল, রূপপুর, মাতারবাড়ী, বাঁশখালী, মহেশখালী, পায়রা, বরগুনাসহ স্বাস্থ্যঝুঁকিপূর্ণ ও প্রাণবিনাশী ব্যয়বহুল প্রকল্প বন্ধ করে সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ও খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে।

জাতীয় কমিটির প্রস্তাবিত খসড়া মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার জন্য সরকারি নীতিমালা পুনর্বিন্যাস করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ দিতে হবে। অযৌক্তিকভাবে গ্যাস ও বিদ্যুতের দামবৃদ্ধি চলবে না।

দুর্নীতি লুটপাটের ‘দায়মুক্তি আইন’ বাতিল করতে হবে। জ্বালানী ও বিদ্যুৎ খাতে ভয়াবহ অনিয়ম, দুর্নীতি ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করে অপরাধীদের সম্পদ বাজেয়াপ্তসহ বিচারের সম্মুখীন করতে হবে।

দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে খনি প্রকৌশলী, ভূতত্ত্ববিদ, বিশেষজ্ঞ তৈরির জন্য নতুন বিভাগ খোলা, পুরনো বিভাগগুলো শক্তিশালী করা এবং প্রয়োজনীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জন্য পৃথকভাবে অর্থ বরাদ্দ করতে হবে।

এসকল দাবিসমূহ পূরণে করোনাকালে জুন মাসজুড়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় অনলাইন ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সভা সমাবেশ করা হবে।

আগামী ২০ জুন ঢাকা মহানগর শাখার পক্ষ থেকে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে। এবং এই দাবির পক্ষে আগামী ৪ জুলাই শনিবার বাংলাদেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের প্রবাসীদের নিয়ে অনলাইন বৈশ্বিক সংহতি সভা অনুষ্ঠিত হবে সেই সভা থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।