বাতাসেই কি উড়ে গেল তরুণী নার্সের প্রাণ!

বাতাসেই কি উড়ে গেল তরুণী নার্সের প্রাণ!

ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে ইবনে সিনা হাসপাতালের নার্স হাবিবা সুলতানা গত বুধবার ভর্তি হয়েছিলেন রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে। শনিবার দিবাগত রাতে তার অবস্থা আরো খারাপ হতে শুরু করে। চিকিৎসক পরিবারের সদস্যদের পরামর্শ দেন কোনো আইসিইউতে ভর্তির জন্য।

এর মধ্যে তার করোনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় করোনা নেগেটিভ আসে হাবিবার।

হাবিবা সুলতানা ২০১৮ সালে ইবনে সিনার নার্সিং ইনস্টিটিউটে ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করেন। পরে ওই হাসপাতালে তিনি নার্স হিসেবে কাজে যোগ দেন। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাকে ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এলেও নিজের সহকর্মীরা তাকে ভর্তি করাননি। কারণ হাবিবার পরিবার করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট দেখাতে পারছিলেন না।

তাড়াহুড়ায় তা হারিয়ে ফেলেছিল তার পরিবার। কিছুতেই সেটি আর খুঁজে পাওয়া গেল না। কাগজের ওই সার্টিফিকেট হাত থেকে পড়ে যাওয়া বা হারিয়ে যাওয়া খুব স্বাভাবিক। অথবা তা এতই হালকা যে বাতাসেও উড়ে যেতে পারে। কিন্তু কে ভেবেছিল সামান্য কাগজের সঙ্গে বাতাসের মতোই উড়ে যাবে হাবিবা সুলতানার জীবনও।

হাবিবার খালা রূপা মৌটুসি বলেন, ডাক্তার বলার পর আমরা তাকে ইবনে সিনা হাসপাতাল নেয়ার সিদ্ধান্ত নেই। কারণ সে ওখানে কর্মরত ছিল। এর আগে যেহেতু পরীক্ষায় তার করোনাও নেগেটিভ আসে, সে জন্য আমরা নিশ্চিত ছিলাম যে তাকে ভর্তি নেয়া হবে।

তিনি জানান, কিন্তু ওই হাসপাতালে গিয়ে আমরা আর করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট খুঁজে পাচ্ছিলাম না। যদিও ওর মেডিকেলের কাগজপত্রের ফাইলের ওপর চিকিৎসক লিখে দিয়েছিলেন করোনা নেগেটিভ। কিন্তু সেটা ইবনে সিনা কর্তৃপক্ষের জন্য যথেষ্ট ছিল না।

তার দাবি, নিউরোসয়েন্স হাসপাতালের চিকিৎসকরাও ইবনে সিনা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন হাবিবা করোনা নেগেটিভ তবে তাতেও কোনো লাভ হয়নি।

হাবিবার খালা আরো অভিযোগ করে বলেন, আমরা দুই ঘণ্টা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি। যেন তারা অন্তত কিছু প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়। আর এ ফাঁকে আমরা অন্য কোথাও ব্যবস্থা করে নিতে পারি। কিন্তু তারা তাকে ছুঁয়েও দেখছিল না।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, ওই রোগীকে আমরা চিনি। তার শ্বাসকষ্ট ছিল। হাসপাতালের নিয়ম অনুযায়ী শ্বাসকষ্টের রোগীকে প্রথমে ফ্লু কর্নারে ভর্তি করাতে হয়। তাকে সরাসরি আইসিইউতে নেয়ার নিয়ম নেই। এ নিয়মের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।

হাবিবার পরিবারের বক্তব্য, তার যে অবস্থা ছিল তাতে ফ্লু কর্নারে নিয়ে গেলে কোনো লাভ হতো না। তাকে আইসিউতেই ভর্তি করাতে হতো। এ অবস্থায় তারা ৯৯৯ এ ফোন দিলে ধানমন্ডি থানা পুলিশ সেখানে হাজির হয়। রাত সাড়ে ৩টার দিকে পুলিশ ওই হাসপাতালে যায়। তারা সেখানে হাবিবাকে আইসিইউতে ভর্তির বিষয়ে কথা বলেন।

রূপা মৌটুসি বলেন, তবে ততক্ষণে হাবিবার হাত ও পা অসাড় হয়ে যাচ্ছিল। আমরা বুঝতে পারছিলাম আমরা তাকে হারাতে যাচ্ছি। পুলিশ দ্রুত তাকে জরুরি ভর্তি নিতে বলে। চিকিৎসকরা তাকে তখন ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রামের সঙ্গে যুক্ত করেন। কিন্তু ততক্ষণে সেখানে কোনো স্পন্দন নেই। মনিটরে শুধু একটা সরল রেখা ফুটে উঠল।

হাবিবার খালা বলেন, ইবনে সিনায় আমরা যখন তাকে নিয়ে আসি সে তখনও শ্বাস নিচ্ছিল, কথা বলছিল। দুই ঘণ্টা ধরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ভর্তি না নেয়ার সময়টার তার মৃত্যু হয়।

ইবনে সিনা হাসপাতালের জেনারেল ম্যানেজার বলেন, তাকে মৃত অবস্থায় বা মৃত্যুর কাছাকাছি অবস্থায় এখানে আনা হয়েছিল। তার করোনার লক্ষণ ছিল। আমরা তাকে প্রাথমিক চিৎিসা দিয়েছি। এ অবস্থায় তাকে বাঁচানো সম্ভব ছিল না।

২২ বছর বয়সী ওই নার্সকে নওগাঁয় তার নিজ এলাকায় দাফন করা হয়।