৪৬ জেলার মুমূর্ষু রোগীরা জানেন না গন্তব্যে গিয়ে আইসিইউ পাবেন কিনা

৪৬ জেলার মুমূর্ষু রোগীরা জানেন না গন্তব্যে গিয়ে আইসিইউ পাবেন কিনা

দেশের জেলা সদর হাসপাতালে কোনও নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) নেই। যেসব জেলায় বিশেষায়িত হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে- এমন ১৮টি জেলায় আইসিইউ’র ব্যবস্থা আছে। বাকি ৪৬টি জেলার মুমূর্ষু রোগীদের কাছাকাছি জেলার আইসিইউ’র জন্য গড়ে ৬৯ দশমিক ৮৮ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। কোনও কোনও জেলা থেকে এই পথ শতাধিক কিলোমিটার। এছাড়া রয়েছে নদী ও পাহাড়ি দুর্গমপথও। এত পথ পাড়ি দিয়েও এসব জেলার মানুষ জানেন না, গন্তব্যে পৌঁছে গিয়ে আইসিইউ পাবেন কিনা। দেশের এই ৪৬ জেলায় বসবাস করেন ৭ কোটি ৯ লাখ ৮০ হাজার ৭৬২ জন মানুষ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইসিইউ’র সংকট অনেক সময়ই রোগীর মনে আস্থাহীনতা ভর করে। তীব্র এক ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। চিকিৎসা ব্যবস্থার এমন সংকটের কথা জানতে পেরে অনেক রোগী মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, দেশের জেলা সদর হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। আন্তর্জাতিক দাতাসংস্থা ও সরকারি অর্থায়নে এসব হাসপাতালে ক্রমান্বয়ে আইসিইউ বেড স্থাপন করা হবে।

গত ৫ জুন শুক্রবার সন্ধ্যায় কক্সবাজারের উখিয়ায় কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান এখানকার জনপ্রিয় সাংস্কৃতিক সংগঠক ও পর্যটন শিল্পের উদ্যোক্তা আবু সায়েম ডালিম (৪২)। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে প্রথমে তাকে আইসোলেশন সেন্টারে নেওয়া হয় মৃত্যুর তিন দিন আগে। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে বুধবার (৩ জুন) তাকে উখিয়ার কোভিড হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫ জুন সন্ধ্যায় প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট নিয়ে মারা যান তিনি। তার পরিবারের অভিযোগ— উখিয়া ও কক্সবাজারে কোনও আইসিইউ’র ব্যবস্থা নেই। আইসিইউ’র অভাবেই ডালিমের মৃত্যু হয়েছে।

আইসিইউ ও অক্সিজেন না পেয়ে এরকম মৃত্যুর অনেক অভিযোগ প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাংলা ট্রিবিউনের রিপোর্টে উঠে আসছে। দেশের জনসংখ্যার অনুপাতে আইসিইউ বেডের সংখ্যা খুবই নগণ্য। এই সীমিত সংখ্যক বেড আবার ভাগ করা হয়েছে করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য।

আইসিইউ’র জন্য কোন জেলার রোগীকে কত পথ পাড়ি দিতে হয়

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকা বিভাগের ছয় জেলার রোগীদের আইসিইউ বেডের জন্য পাড়ি দিতে হয় ৫৫ কিলোমিটার পথ। ঢাকা বিভাগের মোট ১৩টি জেলার মধ্যে ছয় জেলার কোনও হাসপাতালেই আইসিইউ’র ব্যবস্থা নেই। এই ছয় জেলায় মানুষের সংখ্যা এক কোটি ১৩ লাখ ২৬ হাজার ১৫৭ জন। আর জেলাগুলো হলো— মানিকগঞ্জ, শরীয়তপুর, টাঙ্গাইল, নরসিংদী, রাজবাড়ি ও মাদারীপুর। ১৩ জুন পর্যন্ত এই ছয় জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৩১৪ জন এবং করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৩৫ জন।

জানা গেছে, এই ছয় জেলার রোগীদের আইসিইউ’র প্রয়োজন হলে ঢাকায় আসতে হয়। এজন্য তাদের কাছাকাছি আইসিইউতে যেতে পাড়ি দিতে হয় গড়ে ৫৫ দশমিক ২৬ কিলোমিটার পথ।

করোনা আক্রান্তদের জন্য ঢাকা মহানগর ছাড়া এই বিভাগের গোপালগঞ্জ জেলায় ৮টি, ফরিদপুরে ১০টি, গাজীপুরে ৭টি, নারায়ণগঞ্জে ১০টি, মুন্সীগঞ্জে ২টি এবং কিশোরগঞ্জে ১০টি আইসিইউ রয়েছে। অর্থাৎ, রাজধানী ব্যতীত ঢাকা বিভাগে মোট আইসিইউ আছে ৪৭টি। এসব জেলা নিজেদের রোগীদের আইসিইউ ব্যবস্থা করতেই হিমশিম খাচ্ছে। তাই পাশের জেলার রোগীদের এসব জেলায় আসতে নিরুৎসাহী করা হচ্ছে। বাধ্য হয়ে আইসিইউবিহীন জেলাগুলোর রোগীরা ছুটে যান রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে।

চট্টগ্রাম: ৯ জেলার মানুষকে পাড়ি দিতে হয় ৮৮.৬১ কিলোমিটার

চট্টগ্রাম বিভাগে মোট জনসংখ্য ২ কোটি ৯১ লাখ ৪৫ হাজার। তথ্য বলছে, এ বিভাগের ১১ জেলার মধ্যে ৯টিতে কোনও আইসিইউ নেই। এই ৯ জেলার লোক সংখ্যা ১ কোটি ৭৪ লাখ ৯৪ হাজার। এরমধ্যে রয়েছে আবার বিশাল পাহাড়ি দুর্গম এলাকাও। চট্টগ্রাম বিভাগের আইসিইউবিহীন জেলাগুলো হলো- খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, ফেনী, চাঁদপুর, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া, কক্সবাজার, বান্দরবান, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী। ৯ জেলার মুমূর্ষু রোগীদের আইসিইউ পেতে গড়ে পাড়ি দিতে হয় ৮৮ দশমিক ৬১ কিলোমিটার পথ।

জানা গেছে, গুরুতর অসুস্থ রোগীদের সরকারি চিকিৎসকরা সবসময় নিজ বিভাগের মধ্যে রেফার করে থাকেন। যদিও এ বিভাগের চাঁদপুর জেলার গুরুতর অসুস্থ রোগীরা চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আসেন।

চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলার সিভিল সার্জনদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ১৩ জুন পর্যন্ত ১১ জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১১ হাজার ১২৫ জন। এরমধ্যে আইসিইউবিহীন ৯ জেলায় ১৩ জুন দুপুর পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৪ হাজার ৬৭২ জন এবং করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২২৭ জন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, এসব জেলার কোনও রোগীর আইসিইউ প্রয়োজন হলে কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে রেফার করেন চিকিৎসকরা। কিন্তু মুমূর্ষু রোগীদের এত দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে আইসিইউ পর্যন্ত যেতে প্রাণ হারানোর আশঙ্কা থাকে। এসব জেলায় দ্রুত আইসিইউ’র প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন সিভিল সার্জনরা। বান্দরবান জেলার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, ‘বান্দরবানে আইসিইউ প্রয়োজন। এটা এখন সময়ের দাবি।’

চট্টগ্রাম বিভাগে করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য চট্টগ্রাম নগরীতে ১০টি ও কুমিল্লায় ২৪টি- মোট ৩৪টি আইসিইউ বেডের ব্যবস্থা আছে। ১৩ জুন দুপুর পর্যন্ত কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৬ হাজার ৫৫৩ জন এবং মারা গেছেন ১৬০ জন। চট্টগ্রাম নগরীর রোগীদেরই সেখানকার আইসিইউতে জায়গা হচ্ছে না, এমন অভিযোগ রোগীর স্বজনদের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সেখানে অন্য জেলা থেকে আসা রোগীদের আইসিইউ দেওয়া তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

ময়মনসিংহ: চার জেলার জন্য ৭ আইসিইউ, তিন জেলার মানুষ পাড়ি দেয় ৬৪ কিলোমিটার

ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলার করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য ময়মনসিংহ শহরে সূর্যকান্ত হাসপাতালে (এস কে হাসপাতাল) ৭টি আইসিইউ বেড রাখা হয়েছে। এ বিভাগে মোট জনসংখ্যা ১ কোটি ১৪ লাখ ৪৭ হাজার ৫৮৩ জন। এরমধে আইসিইউবিহীন তিন জেলা— নেত্রকোনা, জামালপুর ও শেরপুরের জনসংখ্যা হলো ৬১ লাখ ৩৪ হাজার ২০ জন। এই তিন জেলার রোগীদের গড়ে ৬৪ কিলোমিটার পাড়ি দিতে হয় আইসিইউর জন্য। আইসিইউবিহীন তিন জেলায় ১৩ জুন দুপুর পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৮৮৬ জন এবং মারা গেছেন ১০ জন। অপরদিকে, ময়মনসিংহ জেলায় আক্রান্ত ৯০২ জন এবং মারা গেছেন ৯ জন। এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে।

বরিশালের ছয় জেলার পাঁচটিতেই নেই আইসিইউ

বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার মোট জনসংখ্যা ৮৩ লাখ ২৫ হাজার ৬৬৬ জন। এ বিভাগের ছয় জেলার মধ্যে পাঁচটির কোনও হাসাপাতালেই নেই কোনও আইসিইউ বেড। পাঁচটি জেলা হলো- ভোলা, ঝালকাঠি, বরগুনা, পটুয়াখালী ও পিরোজপুর। এই পাঁচ জেলায় ৬০ লাখ ১ হাজার ৩৫৬ জন মানুষ বসবাস করেন। এই বিভাগে করোনা আক্রান্তদের জন্য বরিশালে শেরে-ই- বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৮টি আইসিইউ বেডই একমাত্র ভরসা। আইসিইউ পেতে পাঁচ জেলার রোগীদের নিজ নিজ জেলা থেকে গড়ে ৪৬ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বরিশাল শহরে আসতে হয়। এরমধ্যে নদীপথও রয়েছে। এসব জেলায় প্রতিদিনই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। ১৩ জুন দুপুর পর্যন্ত পাঁচ জেলায় মোট আক্রান্তে সংখ্যা ৫৩২ জন এবং মারা গেছেন ২০ জন। অপরদিকে, বরিশাল জেলা ও মহানগরে মোট আক্রান্ত ৮৬২ জন এবং মারা গেছেন ১১ জন। এ বিভাগের ছয় জেলায় মোট আক্রান্ত ১৩৯৪ জন এবং মারা গেছেন ৩১ জন।

সিলেট: তিন জেলার রোগীদের পাড়ি দিতে হয় ৭০ কিলোমিটার

সিলেট বিভাগের চার জেলার মধ্যে তিন জেলায় কোনও আইসিইউ বেড নেই। এই জেলাগুলো হলো— মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ। বিভাগের চার জেলার মধ্যে সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন আহমেদ হাসপাতালে করোনাভাইরাস আক্রান্তদের জন্য ১৬টি আইসিইউ বেড রাখা হয়েছে। বিভাগের আইসিইউবিহীন তিন জেলার মানুষকে ৭০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে আইসিইউ’র জন্য সিলেটে আসতে হয়। ১৩ জুন দুপুর পর্যন্ত আইসিইউবিহীন তিন জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৮৩৭ জন এবং মারা গেছেন ১১ জন। সিলেট জেলা ও মহানগরে আক্রান্ত হয়েছেন ১৩০৫ এবং মারা গেছেন ৩৫ জন।

২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, আইসিইউবিহীন তিন জেলার জনসংখ্যা ৬৫ লাখ ৫৬ হাজার ৩১ জন। এই বিপুল জনগোষ্ঠীর জন্য নিজ নিজ জেলায় কোনও আইসিইউ নেই। এই বিভাগের মোট জনসংখ্যা হলো প্রায় ৯৯ লাখ ৬০ হাজার।

রাজশাহী: ছয় জেলার রোগীদের পাড়ি দিতে হয় ৬৯ কিলোমিটার

রাজশাহীর আট জেলার মোট জনসংখ্যা জনসংখ্যা ১ কোটি ৮৪ লাখ ৮৫০০০ হাজার প্রায়। বিভাগের আটটি জেলার মধ্যে ছয়টি জেলার কোনও সদর হাসপাতালেই নেই কোনও আইসিউই। ছয় জেলায় মোট জনসংখ্যা ১ কোটি ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৬০০ জন। যেসব জেলায় আইসিইউ নেই সেগুলো হলো— নাটোর, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, জয়পুরহাট, নওগা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ। বিভাগের কেবল রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২১টি এবং বগুড়ার মোহাম্মদ আলী ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ৭টি আইসিইউ বেড করোনা রোগীদের জন্য রাখা হয়েছে। ছয় জেলার রোগীদের আইসিইউর জন্য গড়ে ৬৯ দশমিক ২৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। ১৩ জুন দুপুর পর্যন্ত আইসিইউবিহীন ছয় জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৯২১ জন এবং নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ ছাড়া বাকি চার জেলায় মারা গেছেন ১২ জন। অপরদিকে, বগুড়া ও রাজশাহীতে আক্রান্ত ১২৮৮ জন এবং এই দুই জেলায় মারা গেছেন ১৮ জন।

খুলনা: আট জেলার রোগীরা আইসিইউ’র জন্য পাড়ি দেন গড়ে ৮৪ কিলোমিটার

দেশের অন্যতম বৃহত্তর বিভাগ খুলনা। এ বিভাগের মোট জনসংখ্যা ১ কোটি ৫৬ লাখ ৮৭ হাজার ৭৫৯ জন। বিভাগের ১০ জেলার মধ্যে আট জেলায় আইসিইউ বেডের কোনও ব্যবস্থা নেই। এই আট জেলায় ১ কোটি ১৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮৫৪ জনসংখ্যার বসবাস। কেবল সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ ও খুলনা ডায়াবেটিক হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য আইসিইউ’র ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ বিভাগের যেসব জেলায় আইসিউই নেই, সেগুলো হলো— বাগেরহাট, ঝিনাইদাহ, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, যশোর, নড়াইল ‍ও মাগুড়া। এ জেলাগুলোতে ১৩ জুন দুপুর পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ছিল ৯০৮ জন এবং মারা গেছেন ১২ জন। এই আট জেলার রোগীদের কাছাকাছি জেলার আইসিইউ পেতে গড়ে ৮৪ দশমিক ১৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। আবার আট জেলার মধ্যে মেহেরপুর ও কুষ্টিয়ার রোগীদের জন্য রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ খুলনা বা সাতক্ষীরার চেয়ে কাছাকাছি। তথ্য বলছে, খুলনা জেলায় ১৩ জুন দুপুর পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩৪২ জন, মারা গেছেন ৪ জন এবং সাতক্ষীরা জেলায় আক্রান্ত ৬৮ জন, তবে এই জেলায় কেউ মারা যাননি বলে জানিয়েছেন জেলার সিভিল সার্জন।

রংপুর: ছয় জেলার রোগীদের আইসিইউ’র জন্য পাড়ি দিতে হয় ৬০ কিলোমিটার

রংপুর বিভাগের মোট জনসংখ্যা ১ কোটি ৫৫ লাখ ৩৭ হাজার ৬৭৬ জন। এ বিভাগের আট জেলার মধ্যে ছয় জেলায় কোনও আইসিইউ নেই। কেবল রংপুর ও দিনাজপুরের দুটি হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য আইসিইউ’র ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাকি যেসব জেলায় আইসিইউ নেই সেগুলো হলো— কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নিলফামারী ও গাইবান্ধা। এই ছয় জেলার মোট জনসংখ্যা ১ কোটি ১ লাখ ১৭ হাজার ৭৪৪ জন প্রায়। এসব জেলার রোগীদের গড়ে ৬০ দশমিক ২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে রংপুর বা দিনাজপুরে যেতে হয় আইসিইউর জন্য। এই ছয় জেলায় ১৩ জুন দুপুর পর্যন্ত ৭৯৭ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটে কেউ মারা যাননি। বাকি চার জেলায় মারা গেছেন ১৫ জন। অপরদিকে, দিনাজপুর ও রংপুরে আক্রান্ত মোট ৭৩৯ জন এবং মারা গেছেন ১৪ জন।

রাজধানীতে করোনো রোগীদের জন্য আইসিইউ বেডের চিত্র

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, গত ১ জুন পর্যন্ত ঢাকা মহানগরীর সরকারি সাতটি হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য ১৩৭টি এবং বেসরকারি আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালসহ পাঁচটি হাসপাতালে ৮১টি আইসিইউ বেড রয়েছে। তবে আনোয়ার খান হাসপাতাল ইতোমধ্যে সরকারের চুক্তি থেকে বের হয়ে গেছে। তাদের ১০টি আইসিইউ বেড বাদ দিলে ৭১টি বেসরকারি আইসিইউ বেড রয়েছে। অর্থাৎ, ঢাকা মহানগরীতে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে মোট আইসিইউ বেড রয়েছে ২০৮টি। ১৩ জুন দুপুর পর্যন্ত রাজধানীতে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৩২৪ জন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য

বিভিন্ন জেলায় আইসিইউ সংকটের বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. হাবিবুর রহমান খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা জেলা সদর হাসপাতালগুলোতে ওইভাবে আইসিইউ স্থাপন করতে পারিনি। তবে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা ও বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতায় প্রতিটি জেলা সদর হাসপাতালে আইসিইউ বেড স্থাপন করা হবে। দ্রুতই কাজ শুরু হবে।’ তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, ক্রমান্বয়ে সব জেলা হাসপাতালে আইসিইউ বেড স্থাপন করা হবে।’

নোট: এই প্রতিবেদনে ২০১১ সালের সর্বশেষ আদমশুমারির হিসাব নেওয়া হয়েছে। জেলাগুলো থেকে নিকটস্থ আইসিইউ’র দূরত্ব নির্ণয়ের জন্য গুগল ম্যাপ ব্যবহার করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেওয়া আইসিইউ সংক্রান্ত আপডেট তথ্য ১ জুন পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে।

সুত্র: বাংলাট্রিবিউন।