সাহেদের খাস কামরায় বসত সুন্দরীদের হাট, মনোরঞ্জন করানো হতো প্রভাবশালীদের

সাহেদের খাস কামরায় বসত সুন্দরীদের হাট, মনোরঞ্জন করানো হতো প্রভাবশালীদের সাহেদ ও তার স্ত্রী

শুধু প্রতারক রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক মোহাম্মদ সাহেদ নয়, তার স্ত্রী সাদিয়া আরাবীর গাড়িতেও ছিল হুটার (সাইরেন)। ভিভিআইপির মতো সাদিয়ার সঙ্গেও থাকত অস্ত্রধারী একজন দেহরক্ষী। গাড়ির সাইরেনের শব্দে সড়কে দায়িত্বরত আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরাও বাধ্য হতেন তাকে বিশেষ সুবিধা দিতে। তবে এসব বিষয়কে তার বোকামি বলে দাবি করেছেন সাদিয়া। বলেছেন, তার স্বামী যা বুঝিয়েছেন তিনি তা-ই বুঝেছেন।

অন্যদিকে, গত চার দিনও লাপাত্তা সাহেদ। যদিও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা বলছেন, সাহেদ এখনো দেশের ভিতরেই আছেন। এদিকে লাইফ সাপোর্টে থাকা সাহেদের বাবা সিরাজুল করিম মারা গেছেন।

জানা গেছে, ২০০৪ সালে অনেকটা নিজেদের পছন্দেই বিয়ে করেন সাহেদ এবং সাদিয়া। তাদের সংসারে দুই মেয়। এমএলএম কোম্পানি ‘বিডি ক্লিক’-এর মাধ্যমে প্রায় পাঁচশ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা এবং পরবর্তীতে সাদিয়াদের পরিবারের কয়েকজন সদস্যের টাকা মেরে দেন সাহেদ। এ ঘটনায় সাদিয়া তার বাবার বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন। তবে কিছু দিন পর আবারও দুই সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে তিনি স্বামীর সংসারে ফিরে আসেন বলে দাবি করেছেন সাংবাদিকের কাছে।

গাড়িতে হুটার এবং অস্ত্রধারী দেহরক্ষীর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেছেন, ‘সাহেদ বলেছিল, সিপিআরের (সেন্টার ফর পলিটিক্যাল রিসার্চ) চেয়ারম্যান হিসেবে সরকার থেকে তাকে এই অনুমতি দেওয়া হয়েছে।’ আর গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির স্ত্রী হিসেবে দেহরক্ষীও সে জন্যই।

সাহেদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে জানতে চাইলে তার স্ত্রী বলেন, আমাকে সে বলেছে আইন বিষয়ে কিছু দিন পড়াশোনা করেছিল। তবে শেষ করতে পারেনি। পরবর্তীতে ভারতের পুনে থেকে ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজে মাস্টার্স করেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কয়েকজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, সাদিয়া তাদেরও এমনটি বলেছেন। সাহেদের মতো এটাও সাদিয়ার কোনো কৌশল কিনা সে ব্যাপারে তারাও খোঁজখবর নিচ্ছেন। প্রয়োজনে তাকেও আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, রিজেন্ট হাসপাতালে সাহেদের একটি খাস কামরায় মাঝে মাঝেই সুন্দরীদের হাট বসত। হাসপাতালের পরিচালক (অর্থ) মার্জিয়া সুলতানার তত্ত্বাবধানেই ছিল সুন্দরীদের আনাগোনা। সহায়তায় ছিলেন সাহেদের ব্যক্তিগত সহকারী আমজাদ, সোহাগ, মশিউর এবং শিবলী। রিজেন্ট হাসপাতালে মাঝে মাঝেই আসতেন দেশের অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি। তাদের মনোরঞ্জন করানো হতো ওইসব সুন্দরী দিয়ে। পরবর্তীতে তাদের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা আদায় করে নিতেন সাহেদ। এর বাইরে দেশ-বিদেশের অনেক বিখ্যাত ব্যক্তির সঙ্গে ছবি তুলে নিজেকে জাহির করতেন বিভিন্ন জায়গায়। অনেকেই ওইসব ব্যক্তির সঙ্গে সাহেদের ছবি দেখে রীতিমতো বিস্মিত হয়ে তাকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে বাধ্য হতেন।

র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম গণমাধ্যমকে বলেন, সাহেদকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। তাকে গ্রেফতার করার পর আরও অনেক কিছু স্পষ্ট হবে। তবে আমরা প্রতিনিয়তই তার ব্যাপারে অভিযোগ পাচ্ছি।

করোনা পরীক্ষা না করে সার্টিফিকেট দেওয়ায় রিজেন্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে করা মামলায় চেয়ারম্যান সাহেদের অন্যতম সহযোগী তারেক শিবলীকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে আদালত। গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম মোর্শেদ আল মামুন ভূঁইয়া রিমান্ডের এ আদেশ দেন। এর আগে শিবলীকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উত্তরা পশ্চিম থানার পুলিশ পরিদর্শক আলমগীর গাজী। আদালতে শুনানির সময় তারেক শিবলীর পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। এর আগে বৃহস্পতিবার ভোরে শিবলীকে রাজধানীর নাখালপাড়া থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

প্রসঙ্গত, গত সোমবার রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরওয়ার আলম। এর পরেই বেরিয়ে আসতে থাকে ভুয়া করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট, করোনা চিকিৎসার নামে রোগীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়সহ বিভিন্ন থলের বিড়াল। সুত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন।