স্বাস্থ্যখাতে আরেক ‘অবিশ্বাস্য’ দুর্নীতি, জাহের উদ্দিনের পুকুরচুরি

স্বাস্থ্যখাতে আরেক ‘অবিশ্বাস্য’ দুর্নীতি, জাহের উদ্দিনের পুকুরচুরি

সিন্ডিকেট করে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও সরকারি হাসপাতালে যন্ত্রপাতি সরবরাহের নামে একের পর এক পুকুর চুরি করে কালো তালিকাভূক্ত বেঙ্গল সায়েন্টিফিক এন্ড সার্জিক্যাল কোম্পানি লিমিটেড এখনও কাজ করছে একই ভবনের পাশের ফ্ল্যাটে। আর এসবের সঙ্গে জড়িত জাহের উদ্দিন সরকার ও তাদের পরিবারের তিন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বিদেশে বসেই একের পর এক টেন্ডার বাগিয়ে নিয়ে এরই মধ্যে পাচার করেছে কোটি কোটি টাকা।

কালো তালিকাভূক্ত বেঙ্গল সায়েন্টিফিক এন্ড সার্জিক্যাল কোম্পানি সিলগালা করলেও ফ্ল্যাটটি পরিবর্তন করে পাশের ফ্ল্যাটেই এখনো কাজ চলছে জোরেশোরেই। সিলগালা দরজাটির অপরপাশে এখন অন্য একটি কোম্পানি। তারা জানান, ছয় মাস আগে জিনিসপত্র সরিয়ে পাশের ফ্ল্যাটে অফিস শুরু করেন তারা। দু'তিন দিন পরপরই তারা দরজা খোলেন।

হংকং এ পারভেন্ট কোম্পানি লিমিটেড নামে আরো একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে জাহের উদ্দিন সরকারের। সিরাজগঞ্জ শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের কেনাকাটায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অর্থ ছাড় দেয়া ১৩২ কোটি টাকার ঠিকাদারি পাওয়া বেঙ্গল সায়েন্টিফিক কোম্পানি কোন যন্ত্রপাতি সরবরাহ না করেই ৩০ কোটি টাকা পাচার করেছেন হংকংয়ে।

এছাড়া দুদকের অনুসন্ধানে পাওয়া যায়, ২৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক দেয়ার কথা থাকলেও সরকারি যন্ত্রপাতির কথা জানিয়ে শুল্ক দিয়েছেন মাত্র ১ শতাংশ। এ নিয়ে কথা বলতে চাইলে, সময় নিউজের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি প্রকল্প পরিচালক।

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. ইকবাল আর্সলান বলেন, যারা ক্রয় প্রক্রিয়ার সঙ্গে থাকেন, তারাই আসলে দায়ী। চিকিৎসায় দুর্নীতি নির্ভর করে শুধুমাত্র ব্যবস্থাপনার উপরই। তাই এই ব্যবস্থাপনা ঠিক করতে হবে।

শুধু তাই নয় রংপুর মেডিকেলের ২০১৮ সালের যন্ত্রপাতি কেনাকাটায় বেঙ্গল সায়েন্টিফিকের জাহের উদ্দিন সরকার অংশ নেন, সাথে আরো যে তিনটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়, সেগুলো মার্কেন্টাইল ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক জাহের উদ্দিনের বাবা যথাক্রমে আব্দুস সাত্তার সরকার ও ছেলে আহসান হাবীবের নামে এবং ইউনির্ভাসেল ট্রেড কর্পোরেশনের মালিক আসাদুর রহমান যিনি জাহের উদ্দিন সরকারের ভগ্নীপতি। পরিচয় গোপন করে পরস্পর যোগসাজশে সিন্ডিকেট করে সাজানো দরপত্র দাখিল করেন তারা। কিন্তু শর্ত অনুযায়ী যন্ত্রপাতি সরবরাহ না করে অপ্রয়োজনীয় ও নিম্নমানের ব্যবহার অনুপযোগী যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে চার কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। একইভাবে এই সিন্ডিকেট সাতক্ষীরা মেডিকেল, রংপুর মেডিকেল , চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে অন্তত অর্ধশত কোটি টাকা আত্মসাৎ করে।

স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলন সম্পর্কিত জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান ডা. রশিদ ই মাহবুব বলেন, একটা হলো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরেকটি হলো অর্থ মন্ত্রণালয়। দেখার বিষয় অর্থ মন্ত্রণালয় কবে টাকা দিয়েছে এবং ছাড়া হয়েছে। আর স্বাস্থ্যখাত থেকে যেহেতু এই টাকা যায় তার থেকেই শুরু এই দুর্নীতির।

এরই মধ্যে বেঙ্গল সায়েন্টিফিকের জাহের উদ্দিনের নামে মামলা হলেও তার বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, গত কয়েক বছর তিনি আছেন দেশের বাইরে। কাগজপত্র বলছে, তার অবর্তমানেই চলছে সব কার্যক্রম।

এমজে/