লাইসেন্স নবায়ন ছাড়া বারডেম-আইসিডিডিআরবি কীভাবে চলবে: প্রশ্ন হাইকোর্টের

লাইসেন্স নবায়ন ছাড়া বারডেম-আইসিডিডিআরবি কীভাবে চলবে: প্রশ্ন হাইকোর্টের

দেশের বেসরকারি বড় বড় নামকরা অনেক হাসপাতালের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও তা নবায়ন না করে চলছে এমন বিষয় নজরে আসার পর তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্ট।

বুধবার এক রিট আবেদনের শুনানিকালে হাইকোর্ট এই প্রশ্ন তোলেন।

বিষয়টি নিয়ে আদালতে রিটকারী আইনজীবী বলেছেন, দেশের তিনভাগ বেসরকারি হাসপাতালের মধ্যে দু’ভাগেরই লাইসেন্স নেই। তবে হাইকোর্ট পুরো বিষয়টি শুনে সংশ্লিষ্ট ফোরামে আবেদন করার পরামর্শ দিয়েছেন।

লাইসেন্স নিয়ে প্রশ্ন তুলে হাইকোর্ট বলেছেন, বারডেম, আইসিডিডিআরবি’র মতো বেশ কিছু বড় বড় হাসপাতালেরও লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি! তাহলে এখন এসব চলবে কিভাবে?

অবৈধ বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালের তালিকা প্রকাশ ও রিজেন্ট হাসপাতালে করোনার ভুয়া রিপোর্ট প্রদানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে করা রিটের শুনানিতে বুধবার (২৯ জুলাই) হাইকোর্টের বিচারপতি তারিক উল হাকিমের নেতৃত্বাধীন ভার্চ্যুয়াল বেঞ্চ এমন প্রশ্ন তোলেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার মো. আব্দুল হালিম ও অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাস গুপ্ত।

শুনানিতে আইনজীবী ইশরাত হাসান আদালতকে বলেন, বেসরকারি হাসপাতালের মধ্যে লাইসেন্স আছে মাত্র এক তৃতীয়াংশের। মোট বেসরকারি হাসপাতালের সংখ্যা ১৭ হাজার ২৪৪টি, এর মধ্যে লাইসেন্স আছে ৫ হাজার হাসপাতালের। কিন্তু কোন ৫ হাজার হাসপাতালের লাইসেন্স রয়েছে তা স্বাস্থ্য অধিদফতরের ওয়েবসাইটে নেই। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতাল পরিচালনা সংক্রান্ত আইনে লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক করা আছে। অথচ এরপরও লাইসেন্স ছাড়া বেসরকারি হাসপাতাল চলছে। সরকার কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য অনেক হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তিও করে ফেলেছে। যার ফলে রিজেন্ট হাসপাতেলের মত অনেক হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে সরকারেরও দায় এড়ানোর সুযোগ নেই।

এসময় আদালত বলেন, এগুলোতো হচ্ছেই। এগুলো নিয়ে তদন্ত হচ্ছে, মামলাসহ অনেক কিছুই হচ্ছে।

এ সময় রিটকারী আইনজীবী ইশরাত হাসান আদালতকে বলেন, আমরা রিট পিটিশনের মাধ্যমে বৈধ বেসরকারি হাসপাতালের তালিকা চাচ্ছি। এই তালিকা ওয়েবসাইটে আপলোড করলে আমরা বৈধ হাসপাতাল সম্পর্কে জানতে পারবো।

রিটকারী আইনজীবীর শুনানির সময় আদালত প্রশ্ন তুলে বলেন, বারডেম, আইসিডিডিআরবি’র মতো বেশ কিছু বড় বড় হাসপাতালেরও লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি। তাহলে এসব হাসপাতাল কিভাবে চলবে?

আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, এজন্যই রিটে আমরা বৈধ বেসরকারি হাসপাতালের তালিকা চেয়েছি। এরপর আদালত মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৯ আগস্ট দিন নির্ধারণ করেন।

এর আগে গত ১৯ জুলাই এসব বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসানের পক্ষে ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম সংশ্লিষ্টদের একটি আইনি নোটিশ পাঠান। তবে সে নোটিশের জবাব না পেয়ে এ রিট দায়ের করা হয়।

গত ২৬ জুলাই বেসরকারি রিজেন্ট হাসপাতালে ভুয়া করোনা টেস্টের শিকার ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশ, তাদের কাছ থেকে টেস্টের নামে নেওয়া টাকা ফেরত এবং প্রত্যেক ক্ষতিগ্রস্তকে অন্তর্বর্তীকালীন ২৫ হাজার টাকা প্রদানের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে এ রিট দায়ের করা হয়। রিটে বেসরকারি হাসপাতালে রোগীদের নিকট থেকে অতিরিক্ত বিল আদায় বন্ধে মনিটরিং সেল গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়।

পাশাপাশি রিট আবেদনে দেশের সকল বৈধ ও লাইসেন্সপ্রাপ্ত হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও করোনা চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালের তালিকা প্রকাশ এবং প্রতিটি থানায় স্বাস্থ্য মনিটরিং কমিটি গঠনেরও নির্দেশনা চাওয়া হয়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসানের পক্ষে ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম এ রিট দায়ের করেন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ও রিজেন্ট হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে রিটে বিবাদী করা হয়।