'হাসপাতালের লাইসেন্স নবায়নে ব্যর্থদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা'

'হাসপাতালের লাইসেন্স নবায়নে ব্যর্থদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা'

বাংলাদেশে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারসমূহের মধ্যে যাদের নিবন্ধন নেই, অথবা লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি, তাদের নিবন্ধন এবং লাইসেন্স নবায়নের জন্য সরকারের বেঁধে দেয়া সময়ের মেয়াদ শেষ হয় রোববার ২৩শে অগাস্ট।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, রোববার রাত ১২টার মধ্যে যারা নিবন্ধন ও লাইসেন্স নবায়ন প্রক্রিয়ায় আবেদন সম্পন্ন করবে না, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক বিভাগের পরিচালক ডা ফরিদ হোসেন মিয়া বলেছেন, যেসব প্রতিষ্ঠান এর মধ্যে লাইসেন্স নবায়ন বা নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে ব্যর্থ হবে, তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস মহামারির মধ্যে স্বাস্থ্য খাতে নানা ধরণের দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। তখন দেখা যায়, করোনা ভাইরাস চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালেরও লাইসেন্স নাই। তখন সরকার এক মাস সময় দিয়ে দেশের বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোকে নিবন্ধন এবং লাইসেন্স নবায়নের জন্য সময় বেধে দেয়।

ডা ফরিদ হোসেন মিয়া বলেছেন, "যাদের আদৌ লাইসেন্স নেই, তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে, অর্থাৎ তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হবে। পাশাপাশি যাদের লাইসেন্স আছে, কিন্তু নবায়ন করেনি তাদের প্রয়োজনে কিছুটা সময় দেয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রে তারা আবেদন করলেই একমাত্র সেটি সম্ভব।"

তিনি জানিয়েছেন, রোববারের মাঝরাতের মধ্যে কতগুলো হাসপাতাল লাইসেন্স নবায়ন বা নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেনি, তা বোঝা যাবে। কিন্তু এ সংক্রান্ত চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করতে কয়েকদিন সময় লাগবে।

"এরপরই নির্ধারণ করা হবে, কোন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কী ধরণের পদক্ষেপ নেয়া হবে।"

২০১৮ সাল থেকে ম্যানুয়ালি লাইসেন্স প্রদান প্রক্রিয়া থেকে সরকার অনলাইনে লাইসেন্স দেয়া শুরু করে।

বাংলাদেশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ২০১৮ সালের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে সাড়ে ১৭ হাজার ২৪৪টি বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ হাজারের মত প্রতিষ্ঠান ডায়াগনস্টিক সেন্টার।

নিবন্ধন ও লাইসেন্স পুনঃনবায়ন ছাড়াই চলছিল বহু প্রতিষ্ঠান

বাংলাদেশে জুলাই মাসের শুরুতে ভুয়া করোনা ভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা, কোভিড-১৯ রোগের চিকিৎসায় সরকার নির্ধারিত হাসপাতাল হবার পরও, অর্থাৎ বিনামূল্যে সেবা দেয়ার জন্য সরকারের সাথে চুক্তিবদ্ধ হবার পরেও রোগীদের কাছ থেকে বিল আদায় এবং লাইসেন্সবিহীনভাবে কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতাল বন্ধ করে দেয় সরকার।

এরপর বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের অনিয়ম বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বেশ কয়েকটি হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে কোনটি সীলগালা, কোনটির কার্যক্রম বন্ধ এবং কোনটিকে জরিমানা করা হয়।

সে সময় দেখা যায়, পুরো দেশে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার ডায়াগনস্টিক সেন্টারসমূহের একটি বড় অংশের নিবন্ধন নেই। এর বাইরে লাইসেন্স নবায়ন করেনি এমন হাসপাতাল ও ক্লিনিকের সংখ্যাও কম নয়।

এরপর লাইসেন্স নবায়ন ও নিবন্ধনের জন্য স্বাস্থ্য খাতে সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে এক মাসের সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়।

কী বলছেন বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিকেরা

বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক মালিক সমিতি জানিয়েছে, এ পর্যন্ত দশ হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স নবায়ন এবং নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে।

সমিতির সভাপতি মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া বিবিসিকে বলেছেন, নিবন্ধন ও লাইসেন্স নবায়নের জন্য সরকার যেসব শর্ত দিয়েছে, অল্প সময়ের মধ্যে সেগুলো পূরণ করা অনেক প্রতিষ্ঠানের জন্য কঠিন।

সেজন্য রবিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাথে একটি বৈঠক করে তারা সরকারি নিয়মকানুন কিছুটা শিথিলের আবেদন জানিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, "যেমন ধরুন, হাসপাতালে ডাক্তার ও নার্সের যে অনুপাত চাওয়া হয়েছে, সেটা নিশ্চিত করা যাবে না। সরকারি নিয়ম হচ্ছে, ১০ বেডের জন্য তিনজন ডাক্তার এবং ছয়জন নার্স থাকতে হবে। কিন্তু দেশে ডিপ্লোমা নার্সের সংখ্যা অপ্রতুল, ফলে অনেক হাসপাতাল ও ক্লিনিক চাইলেও সেটা পারবে না।"

"আবার পরিবেশের জন্য সব হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ইটিপি বা পরিশোধন ব্যবস্থা রাখতে হবে, সেটা ব্যয়সাপেক্ষ একটি ব্যাপার। সেটাও অনেক হাসপাতাল ম্যানেজ করতে পারবে না। এগুলোর জন্যই আমরা কিছু শর্ত শিথিল করার আবেদন জানিয়েছি।"

ভুইয়া বলেছেন, যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আবেদন করতে ব্যর্থ হবে, তাদের জন্য কিছুটা সময় বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছেন তারা।

তবে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, স্বাস্থ্য খাতে এ ধরণের প্রাতিষ্ঠানিক অনিয়মের পেছনে সরকারের দুর্বল মনিটরিং এবং জনবলের ঘাটতিও একটি বড় কারণ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইন্সস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক নাসরিন সুলতানা বলেছেন, "সরকারের যে লোকবল কম আছে সেটা সবাই জানে, কিন্তু সীমিত জনবল দিয়েই যাতে কাজটি পূর্ণাঙ্গভাবে করা যায়, সেটা সরকারকে ভাবতে। নাহলে দ্রুত লোকবল বাড়াতে হবে।"

"তবে, এর সঙ্গে মনিটরিংটাও বাড়াতে হবে, কারণ নিয়মিত পরিদর্শন ও তদারকি না করলে, হাসপাতালগুলো থেকে অনিয়ম দূর হবে না।"

তিনি বলছেন, মহামারির মধ্যে তাড়াহুড়া করে নয়, স্বাস্থ্য খাতে দীর্ঘ মেয়াদে পরিকল্পনা করে সংস্কার করা প্রয়োজন। সূত্র: বিবিসি

এমজে/