সাড়ে তিন বছরে ১১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন প্রতারক সাহেদ

সাড়ে তিন বছরে ১১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন প্রতারক সাহেদ

গত সাড়ে তিন বছরে (২০১৭-২০ জুলাই) প্রতারণার ও জালিয়াতির মাধ্যমে রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিম বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে ১১ কোটি ২ লাখ ২৭ হাজার ৮৯৭ টাকা হতিয়ে নিয়েছে বলে প্রমাণ পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

এর মধ্যে ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ১৫ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে প্রতারণা ও জালিয়াতি করে ৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন সাহেদ।

এছাড়া তিনি বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারিতে করোনার ভুয়া পরীক্ষা এবং জাল সনদ দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন ৩ কোটি ১১ লাখ টাকা।

প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে এই টাকা আত্মসাৎ করায় সাহেদ করিমের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে একটি মামলা (নম্বর- ২০/১৯৩) দায়ের করেছে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের ফিনান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।

মঙ্গলবার রাতে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. জিসানুল হক বলেন, প্রতারণা ও জালিয়াতির অপরাধের অভিযোগে রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ করিম ও তার সহযোগিদের বিরুদ্ধে ৩০টি মামলার তথ্য পেয়েছে সিআইডি। সাহেদ করিম তার সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাসুদ পারভেজ রিজেন্ট হাসপাতাল লিমিটেড, রিজেন্ট কে সি এস লিমিটেড, রিজেন্ট ডিসকভারি ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস লিমিটেডের নামে প্রতারণা ও জালিয়াতি করে ১১ কোটি ২ লাখ ২৭ হাজর ৮৯৭ টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এসব অপরাধের অভিযোগে সিআইডি বাদী হয়ে সাহেদের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে একটি মামলা দায়ের করেছে। এই মামলাটি সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগ তদন্ত করবে বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, সাহেদ করিম তার সব অপরাধকর্মের প্রধান সহযোগী এমডি মাসুদ পারভেজের সহযোগিতায় রিজেন্ট ডিসকভারি ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেল লিমিটেডের নামে মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের শাহ মখদুম অ্যাভিনিউ শাখায় চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি একটি নতুন অ্যাকাউন্ট খোলে (হিসাব নং- ০০৬২০২১০০০৫৯৩৫)। এই অ্যাকাউন্টটি পরিচালনা করতেন সাহেদের বাবা সিরাজুল করিম ও রিজেন্ট গ্রুপের এমডি মাসুদ পারভেজ।

প্রতারণা ও জালিয়াতি করেই সাহেদ করিম তার সমস্ত সম্পদ করেছে যা সিআইডির তদন্তে বেরিয়ে এসেছে বলেও জানান এএসপি জিসানুল হক।

বিভিন্ন অপরাধমুলা কার্যক্রম করে আয় করা অর্থের লেনদেনের সুবিধার্থে সাহেদ করিম রিজেন্ট হাসপাতাল, রিজেন্ট কে সি এস লিমিটেড ও অন্যান্য অস্তিত্ববিহীন ১২টি প্রতিষ্ঠানের নামে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে ৪৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করেছে বলেও প্রমাণ মিলেছে। এসব ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো খোলার সময় কেওয়াইসি ফরমে তিনি তার প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ারম্যান বা স্বত্বাধিকারী হিসেবে নিজের পরিচয় দিয়েছেন। আর রিজেন্ট গ্রুপের এমডি মাসুদ পারভেজ প্রতিষ্ঠানের এসব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট প্রত্যক্ষভাবে পরিচালনা করেছেন। যা সিআইডির প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।

সিআইডির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, সাহেদের সব ব্যাংক অ্যাকাউন্টের লেনদেন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সেখানে গত সাড়ে তিন বছরে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নগদ টাকা জমা করা হয়েছে। অভিযুক্ত সাহেদ করিম ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ৪৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সর্বমোট ৯১ কোটি ৭০ লাখ টাকা জমা করেছে। এই টাকার ৯০ কোটি ৪৭ লাখ টাকা উত্তোলন করেছে। বর্তমান তার এসব ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২ কোটি ৪ লাখ টাকা স্থিতি রয়েছে। যার মধ্যে ৮০ লাখ টাকার ঋণ রয়েছে। এদিকে, অভিযুক্ত এমডি মাসুদ পারভেজের ১৫টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে মোট জমা ৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা এবং মোট উত্তোলন করা অর্থের পরিমাণ ৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। বর্তমান ৫ পাঁচ হাজার টাকা স্থিতি পাওয়া গেছে।

এমজে/