ফুলবাড়ী ট্র্যাজেডি: ১৪ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি ৬ দফা চুক্তি

ফুলবাড়ী ট্র্যাজেডি: ১৪ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি ৬ দফা চুক্তি

ফুলবাড়ী গণআন্দোলনের ১৪ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও বাস্তবায়ন হয়নি ফুলবাড়ীবাসীর সঙ্গে সম্পাদিত ৬ দফা চুক্তি। উল্টো আন্দোলনকারী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের মাথার ওপর চেপে বসেছে এশিয়া এনার্জির দায়ের করা একাধিক মামলা।

অন্যদিকে শুধু দিবস পালনেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে খনি বাস্তবায়নবিরোধী আন্দোলন।

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী ট্র্যাজেডি দিবস আজ (২৬ আগস্ট)। ২০০৬ সালের এই দিনে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে ফুলবাড়ী কয়লাখনি বাস্তবায়নের প্রতিবাদে গড়ে ওঠে ঐতিহাসিক গণআন্দোলন। সে আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারান তিন যুবক। আহত হন অনেকে। এর পর থেকে এই দিনটিকে ‘ফুলবাড়ী দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে ফুলবাড়ীবাসী ও তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ ও বিদুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি।

দিবসটি পালন উপলক্ষে তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি, সম্মিলিত পেশাজীবী সংগঠন ও ফুলবাড়ীবাসীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট। উন্মুক্ত পদ্ধতিতে খনি বাস্তবায়নের প্রস্তাবকারী বহুজাতিক কোম্পানি এশিয়া এনার্জির ফুলবাড়ীর অফিস ঘেরাও কর্মসূচি পালন করতে গেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মিছিলের ওপর টিয়ার শেল ও গুলিবর্ষণ করে। এতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলামসহ আমিন ও সালেকিন নামে তিন জন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। আহত হন মিছিলে অংশ নেওয়া অনেকেই। এদের মধ্যে বাবলু রায় নামে একজন চিরতরে পঙ্গুত্ব বরণ করেন। এখনও অনেকে বয়ে বেড়াচ্ছেন গুলির ক্ষত।

টানা চার দিনের গণআন্দোলনের মুখে ৩০ আগস্ট তৎকালীন সরকার ফুলবাড়ীবাসীর সঙ্গে ৬ দফা শর্তে সমঝোতা চুক্তি করে, যা ‘ফুলবাড়ী ৬ দফা চুক্তি’ বলে পরিচিত। এরপর থেকে এই দিনটিকে ফুলবাড়ীবাসী ও আন্দোলনকারী সংগঠন তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ ও বিদুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি ‘ফুলবাড়ী দিবস’ হিসেবে পালন করে। একইসঙ্গে ছয় দফা চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে নামে।

কিন্তু কয়েক বছর ধরে ৬ দফা দাবি বাস্তবায়নের আন্দোলন স্তিমিত। দিবস পালন ছাড়া কোনো কর্মসূচি দেখা যায় না।

এদিকে ২০১৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর এশিয়া এনার্জির প্রধান গেরি এনলাই সস্ত্রীক তাদের ফকিরপাড়া ওয়ার্কশপ অফিসে মিটিং করে ফুলবাড়ী অফিসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। এ সময় আন্দোলনকারীরা হঠাৎ বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সে অফিসে হামলা করেন। গাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট চালান। এ ঘটনায় একই বছর ১০ অক্টোবর এশিয়া এনার্জির মাঠ কর্মকর্তা সাইদুর রহমান বাদী হয়ে আন্দোলকারী সংগঠনের ১৯ নেতার বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন, যা বর্তমানে দিনাজপুরে আদালতে বিচারাধীন।

অপরদিকে আন্দোলনকারী সংগঠনের দুই নেতা তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির অন্যতম নেতা আমিনুল ইসলাম বাবলু খনি আন্দোলনের ইমেজকে কাজে লাগিয়ে ২০০৮ সালে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং সম্মিলিত পেশাজীবী সংগঠনের আহ্বায়ক মুরতুজা সরকার মানিক ফুলবাড়ী পৌরসভার পরপর দুই বার পৌর মেয়র নির্বাচিত হন। এরপর থেকে আন্দোলনকারী নেতাদের মধ্যে নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এ কারণে নেতাদের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা কমতে শুরু করেছে। তাদের প্রতি মানুষের আর বিশ্বাস নেই।

তবে আন্দোলনের আগ্রহ কমেনি সাধারণ মানুষের। তারা মনে করছেন, প্রয়োজনে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি করে ফুলবাড়ী রক্ষার আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ ও বিদুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির নেতা এসএম নুরুজ্জামান জামান বলেন, আন্দোলন ঝিমিয়ে পড়েনি। ছয় দফা চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

জাতীয় কমিটির ফুলবাড়ী শাখার নেতা হামিদুল হক বলেন, ২৬ আগস্টের পর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা ফুলবাড়ীতে এসে ফুলবাড়ীর বীর জনতাকে লাল স্যালুট দিয়ে ৬ দফা চুক্তি বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি ক্ষমতায় যাওয়ার ১০ বছর কেটে যাচ্ছে, সেই চুক্তি আজও বাস্তবায়ন করেননি। উল্টো আন্দোলনকারী নেতাদের নামে একের পর এক মামলা করছে ওই বহুজাতিক কোম্পানি।

তিনি আরও বলেন, ৬ দফা চুক্তি বাস্তবায়ন না হলে ২০০৬ সালের ২৬ আগস্টের মতো আবারও গণআন্দোলন গড়ে তুলে চুক্তি বাস্তবায়ন করতে সরকারকে বাধ্য করা হবে।

এমজে/