থানা হেফাজতে রক্তাক্ত যুবক, হাসপাতালে নিল পুলিশ

থানা হেফাজতে রক্তাক্ত যুবক, হাসপাতালে নিল পুলিশ

পঞ্চগড়ের আটোয়ারীতে থানা হেফাজতে টয়লেটের দরজায় মাথা ঠুকে নিজেকে রক্তাক্ত করেছেন সাইদুর রহমান (২৬) নামে এক মাদকাসক্ত যুবক। পরে তিনি পুলিশের বিরুদ্ধে থানা হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছেন। আহত অবস্থায় প্রথমে তাকে আটোয়ারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং রাতে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

চুরির অভিযোগে গত শুক্রবার (২৮ আগস্ট) বিকেলে আটোয়ারী উপজেলা সদরের ছোটদাপ এলাকা থেকে পুলিশ তাকে আটক করে। বর্তমানে তিনি সুস্থ্য রয়েছেন বলে জানা গেছে।

পুলিশ জানায়, সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগে মামলা রয়েছে। তার বাড়ি থেকে চুরির মালামাল উদ্ধারও হয়েছিল। সেই মামলায় তিনি জামিনে রয়েছেন। শুক্রবার বিকেলের পর আরেকটি চুরির অভিযোগে তাকে আটক করা হয়। শনিবার (২৯ আগস্ট) দুপুরে তাকে জেল হাজতে নেয়ার সময় প্রথমে তিনি যেতে রাজি হচ্ছিলেন না। একপর্যায়ে তিনি পুলিশ ও পরিবারের সদস্যদের সামনে টয়লেটে যাওয়ার কথা বলেন। কিন্তু টয়লেট থেকে ফেরার সময় সবার সামনেই সেখানকার দরজার লোহার হাতলে নিজেই নিজের মাথায় আঘাত করতে থাকেন ওই যুবক। অবস্থা বেগতিক দেখে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতলে নেয়।

এদিকে ঘটনার পর ওই যুবকের পরিবারের সদস্যরা বুঝতে পারেন রাগের কারণে তিনি এমন কাণ্ড করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। এর কিছু সময় পর অজ্ঞাত কারণে তাদের মত পাল্টে ফেলেন তারা। সাংবাদিক ও স্থানীয়দের সামনে তারা থানা হেফাজতে পুলিশের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ তোলেন। পুলিশ তাকে ছেড়ে দিতে উৎকোচ চেয়েছেন বলেও পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়।

আটক সাইদুর রহমানের বোন জেসমিন আক্তার বলেন, শুক্রবার বিকেলে আমার ভাইকে পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। শুক্রবার রাতে পুলিশ আমাদের কাছে উৎকোচ দাবি করেছিল তাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য। পরে থানায় তাকে নির্যাতন করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে।

আটোয়ারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হুমায়ুন কবীর বলেন, সাইদুরের মাথায় আঘাত চিহ্ন রয়েছে। এটি ধাতব কোনো কিছুর আঘাত বলে মনে হচ্ছে।

আটোয়ারী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইজার উদ্দিন বলেন, সাইদুরকে চুরির অভিযোগে আটক করা হয়। এর আগেও তার বিরুদ্ধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চুরির অভিযোগে মামলা রয়েছে। থানা হেফাজতে তাকে কোনো প্রকার নির্যাতন করা হয়নি। সে থানা হাজতের টয়লেটে নিজেই নিজের মাথা ঠুকে আহত হয়। আমরা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করি।

পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদর্শন কুমার রায় বলেন, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি এবং সকলের সঙ্গে কথা বলি। পরিবারের পক্ষ থেকে প্রথমে সত্য কথাই বলা হয়েছিল। পরে তারা অজ্ঞাত কারণে তাদের মত পাল্টান। এখন পুলিশের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ তোলা হচ্ছে। থানা হেফাজতে কিংবা অন্য কোনোভাবে তাকে নির্যাতন করা হয়নি। তাকে জেল হাজতে নেয়ার সময় প্রথমে সে যেতে চাচ্ছিল না। পরে সকলের সামনে টয়লেটে গিয়ে সেখানকার দরজার লোহার হাতলে নিজের মাথা ঠুকে আহত হন। অভিযুক্ত চোর কিংবা কোনো মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতারের পর তারা যদি এমন কাণ্ড করেন সেক্ষেত্রে আমাদের আর কী বলার থাকে!

এমজে/